।। ফিচার ডেস্ক ।।
কোনো বস্তুর ভর মাপতে আমরা বাটখারা হিসেবে কিলোগ্রাম বা কেজির ব্যবহার করি। এসআই-এর অনুসারে এক কেজি হলো ১৩০ বছরের পুরোনো প্লাটিনাম-ইরিডিয়ামের একটি নির্দিষ্ট সিলিন্ডারের ভর। এই সিলিন্ডারটি ফ্রান্সের ইন্টারন্যাশনাল বুরো অফ ওয়েটস অ্যান্ড মেজারসের ভল্টে রাখা আছে। ইন্টারন্যাশনাল প্রটোটাইপ কিলোগ্রাম বা ‘আইপিকে’ আসল কেজি বা ভর মাপার পরিমাপ হিসেবে পরিচিত। ফরাসীরা একে ‘ল্য গ্রঁদ কে’ নামে ডাকে। ১৮৮৪ সালে আইপিকের ৪০টি রেপ্লিকা তৈরি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভরের মানদণ্ড হিসেবে দেওয়া হয়। গত ১২৫ বছরের মধ্যে কয়েক দশক পরপর ফ্রান্সের মূল কেজিটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক কেজির ভর মিলিয়ে দেখা হয়। কিন্তু তাতে দেখা গেছে মূল কেজির ওজন বেড়ে গেছে, এটা এখনও রহস্য হয়ে রয়েছে।
গবেষকরা দাবি করছেন, সময়ের সঙ্গে আর তৈরির সময় ভল্টে রাখা সিলিন্ডারটির ভর পরিবর্তিত হয়ে গেছে। কিন্তু কেজির এই মূল নমুনাটির ভর স্থির থাকা জরুরি। কারণ কিলোগ্রাম একটি মৌলিক পরিমাপ এবং এর থেকে আরো বহু ধরনের যৌগিক পরিমাপ নির্ধারণ করা হয়। কেজির তারতম্যের কারণে প্রতিটি দেশে কেজির সংজ্ঞার ক্ষেত্রে সামান্য পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে করা পরিমাপে দেখা যায়, কেজির নমুনাটির ক্ষেত্রে কিছুটা ওজন বেড়ে গেছে। গবেষকরা তাই এই কেজির বাড়তি ভর কমিয়ে ফেলার পক্ষে অবস্থান নেন।
২০০৭ সাল থেকেই কিলোগ্রামের আরও গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য সংজ্ঞা খুঁজে পেতে কাজ করছেন গবেষকরা। তারা এমন একটি পদ্ধতি খুঁজছিলেন, যাতে ওজনের হেরফের হবে না। ত্রাতা হয়ে এল নোবেলজয়ী জার্মান বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ মাপার তত্ত্ব। সেখানেই একটি ধ্রুবক ‘এইচ’ এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়, যা পরে পরিচিত পেয়েছিল ‘প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক’ হিসেবে।
এই এইচের একক হচ্ছে- কিলোগ্রাম বর্গমিটার পার সেকেন্ড। হিসাবটির ভেতরেই কিলোগ্রাম থাকায়, কেবল আয়তন আর সময়ের হিসাব পেলেই কেল্লাফতে। কিন্তু প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক ‘এইচ’ এর মান এতই ক্ষুদ্র যে তা বের করা এবং এর সঠিকতা ঠিক রাখা বেশ ঝক্কির। সেখানে সাহায্যকর্তা হিসেবে হাজির হলেন বিজ্ঞানী ড. ব্রায়ান কিবল। তার সুপার-অ্যাকুরেট সেট অব স্কেল ব্যবহারে ০.০০০০০১ শতাংশ ক্ষেত্রেও ‘এইচ’ পাওয়া যাবে নির্ভুলভাবে।
এভাবেই বৈদ্যুতিক তরঙ্গ থেকে মিলবে কিলোগ্রামের আরও নিখুঁত সংজ্ঞা, যা রোমাঞ্চিত করছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ফিজিক্স ল্যাবরেটরির (এনপিএল) বিজ্ঞানীদের। গাণিতিকভাবে ভরের একক নির্ণয়ের পদ্ধতি ঠিক হওয়ায় এখন যে কোনো স্থান থেকে, যে কোনো সময়ে কিলোগ্রামের ওজন পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন এনপিএলের বিজ্ঞানী ইয়ান রবিনসন ও পেরডি উইলিয়ামস। ফলে ‘ল্য গ্রঁদ কে’র ওজন থেকে নয়, ভরের একক কিলোগ্রামকে এখন থেকে সংজ্ঞায়িত করা হবে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের আলোকে। সাধারণের দৈনন্দিন ওজন মাপামাপিতে পরিবর্তন না এলেও এর ফলে ওষুধ শিল্প, ন্যানো টেকনোলজি ও ধাতব সংমিশ্রণে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।