অসাধুদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে ব্যবসায়ী নেতাদের আহ্বান এফবিসিআই’র

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কয়েক দফা দাম বাড়ালেও খুচরা বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে পর্যাপ্ত সয়াবিন তেল পাচ্ছে না ভোক্তারা। বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ী নেতাদের কাছে নেই কোনো সমাধানও। একে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে এবং সরকারের কাছে প্রস্তাবনা দিয়েই খালাস ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। ব্যবসায়ীদের এমন নাটকীয় দোষারোপের মাশুল দিচ্ছে ভোক্তারা।

বুধবার বিকালে মতিঝিলে ভোজ্যতেলের আমদানি, মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনার নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এই সভায় আগের মতই খুচরা ব্যবসায়ী পাইকারী ব্যবসায়ীদের, পাইকারী ব্যবসায়ী ডিলার এবং ডিলারেরা মিল মালিকদের উপর দোষ চাপিয়েছেন। একে অন্যের ওপর দোষ চাপানোর পাশাপাশি মিল মালিকরা সরকারের উদ্দেশ্যে কিছু প্রস্তাবনাও দিয়েছেন। তবে এই সভা থেকে ভোক্তা পর্যায়ে সয়াবিন সরবরাহ এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যে পাওয়া নিয়ে কোনো দিক নির্দেশনা বা ফলাফল আসেনি।

এ ছাড়া সভায় অসাধু ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নেতাদের অবস্থা নেয়ার জন্য আহবান জানিয়েছে এফবিসিসিআই। বলা হয়, কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য সব ব্যবসায়ীকে গালি শুনতে হয়। গুটি কয়েক ব্যবসায়ীর দায় আমরা সবাই নেব না। তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন সংস্থ্যার অভিযানের বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।

সরকারি সংস্থ্যাগুলোর অভিযানের বিষয়ে বাংলাদেশ পাইকারী ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমতিরি সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেন ভোজ্যতেল একটি মাদক দ্রব্য। কারো দোকানে পেলেই সরকারী বিভিন্ন সংস্থ্যা গিয়ে জরিমানা করছে।

ভোজ্যতেল সংশ্লিষ্ট তার উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ীদের (ডিলার) ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, পাইকারী পর্যায়ে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ থাকতে হবে। একে অন্যের উপরে কাঁদা ছোড়াছড়ি না করে পর্যাপ্ত সরবরাহের দিকে নজর দিতে হবে। তাহলেই বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে।

তিনি এফবিসিসিআই’র প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, কোনো কিছু হলেই চারপাশে শুধু কমিটি আর কমিটি করা হয়। এফবিসিসিআই’র কমিটি, বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের কমিটি। কিন্তু এদের কাজ কি? কোনো ফলাফল তো আমরা পাই না।

নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বলেন, ব্যবসায়ী তার প্রয়োজনেই পণ্য স্টক করে। ঈদের ২ দিন আগে থেকে ডিলারেরা কোনো সয়াবিন তেল খুচরা ব্যবসায়ীদের দেয়নি। হঠাৎ করে তারা বলেন, কোনো কোম্পানির কাছে তেল নেই। তেলের দাম বাড়ানোর জন্যই কোম্পানিগুলো তেল সাপ্লাই বন্ধ করেছিল। দাম বাড়ার পর তারা তেল ছাড়তে শুরু করেছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ব্যবসায়ীদের উপর চাপ প্রয়োগ করে অনেক কোম্পানি সয়াবিন তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য নিতেও বাধ্য করেছে। যেমন সয়াবিন তেলের সঙ্গে চা-পাতা, পোলাউ এর চাল নিতে হয়েছে। তাহলে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আমি চা-পাতা, পোলাউ এর চাল কিভাবে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করবো?

তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো যদি তেল সাপ্লাই ঠিকভাবে রাখে তাহলে ভোক্তারা সরকার নির্ধারিত দামেই তেল পাবে। এছাড়া পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে স্টক করারও কোনো প্রয়োজন পড়বে না। কারণ আমি এক লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি করে লাভ করবো ৫টাকা, স্টক করার এতো টাকা পাব কোথায়?

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সহ সভাপতি বলেন, ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনের তেল প্রতিদিন বিক্রি করতে পারে না। তাদের স্টক করতে হয়। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর এমন অভিযান কাম্য নয়। সারাদেশে ৫৪ লাখ দোকান রয়েছে। এদের মধ্যে গুটি কয়েক অবৈধ ব্যবসায়ীও রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নেতাদের অবস্থান নিতে হবে।

মিল মালিকদের পক্ষ থেকে এস আলম গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার কাজী সালাউদ্দিন বলেন, সবশেষ সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণের সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় আমরা প্রতি লিটারে ৬০/৬৫ টাকা বাড়ানোর কথা বলেছিলাম। কিন্তু সরকার ৩৮ টাকা বাড়িয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত স্টক আছে। সাপ্লাই চেইন ঈদের আগে ঠিক ছিল, এখনও আছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে যখন বলা হয়, ঈদের পর দাম বাড়ানো হবে- এ খবর ব্যবসায়ীরা পেলে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার আসায় তেল স্টক করবে, এটাই স্বাভাবিক।

দুই/এক সপ্তাহের মধ্যে সয়াবিন তেলের বাজার ঠিক হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।

সরকারের উদ্দেশ্যে কয়েক প্রস্তাব তুলে ধরেন টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল তসলিম। তিনি বলেন, বাজারকে বাজারের মত চলতে দিতে হবে। আমাদের বাজার থেকে টিসিবি যে তেল নিবে তা সরকারকে আমদানি করতে হবে। খুচরা-পাইকারী পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা কতটুকু তেল স্টক করতে পারবে তা নির্ধারণ করতে হবে। ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া থেকে সরকারী উদ্যোগে পামওয়েল আমদানি করার সুযোগ দিতে হবে।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে এফবিসিসিআই এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ক্রেতাদের বলবেন তেল নেই, অথচ গোডাউনে তেল স্টক করবেন তা হবে না। যেহেতু তেলের বাজার অস্থির সুতরাং আপাতত তেল স্টকে কম রাখতে হবে। যা তেল কিনবেন দ্রুত সেই তেল ক্রেতাদের কাছে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করবেন। কোনভাবে বেশি মুনাফার লোভে স্টক করবেন না।

এসময় তিনি বলেন, ১৫ দিন পর পর তেলের বাজার দর আপডেট করা যেতে পারে। দাম বাড়লে ভোক্তা পর্যায়ে বাড়বে আবার দাম কমলে ভোক্তা পর্যায়ে কমানো হবে।

এসময় সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যেহেতু বিশ্ববাজারেও তেলের দাম বেশি, সেদিক থেকে ক্যানোলা এবং সান ফ্লাওয়ার তেল আমদানির ক্ষেত্রে ডিউটি (ট্যাক্স) ফ্রি করা যেতে পারে।

আরইউ