সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়ায় ৫৩৪টি পোশাক কারখানা থেকে পণ্য না কেনার সুপারিশ করতে যাচ্ছে অ্যাকর্ড। এরই মধ্যে বিষয়টি ক্রেতাদের জানিয়ে দিয়েছে ইউরোপীয় ক্রেতা জোটটি। বড় মাপের অনেক গার্মেন্টস ও এ খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের কারখানাও রয়েছে অ্যাকর্ডের সুপারিশের তালিকায়। খবর বণিক বার্তা’র।
যেসব বড় কারখানার সংস্কার সন্তোষজনক নয় বলে অ্যাকর্ড তালিকাভুক্ত করেছে, তার মধ্যে আছে বিজিএমইএ সহসভাপতি ফেরদৌস পারভেজ বিভনের বান্দো ফ্যাশন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারুক হাসানের জায়ান্ট অ্যাপারেল, জায়ান্ট নিট ফ্যাশন ও জায়ান্ট টেক্সটাইল এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের ইন্টারস্টফ। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের ওনাস ডিজাইন-ওনাস গার্মেন্টস এবং রুবানা হকের মোহাম্মদী ফ্যাশনস সোয়েটার্স লিমিটেড ও মোহাম্মদী নিট স্টার লিমিটেডও রয়েছে এ তালিকায়।
দেশের পোশাক কারখানা সংস্কারের জন্য গঠিত ইউরোপীয় ক্রেতাজোট অ্যাকর্ডের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হয় গত মে মাসে। এরপর ‘ট্রানজিশনাল অ্যাকর্ড’ নামে জোটটির কার্যক্রম আরো ছয় মাস চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন হাইকোর্ট। বর্ধিত এ মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ নভেম্বর। এরপর আর কার্যক্রম চালাতে পারবে না অ্যাকর্ড। এ সময়ের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রমে অগ্রগতি না হওয়া কারখানার সঙ্গে ব্যবসা না করতে ক্রেতাদের সুপারিশ করতে যাচ্ছে ক্রেতাজোটটি। বিষয়টি জানিয়ে ৮ নভেম্বর অ্যাকর্ডের পক্ষ থেকে ক্রেতাদের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
অ্যাকর্ডের চিফ সেফটি ইন্সপেক্টর স্টিফেন কুইন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে তালিকাভুক্ত কারখানাগুলোর বিষয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের আদেশ তুলে নেয়া না হলে অ্যাকর্ডের বাংলাদেশ কার্যালয় বন্ধ করে দিতে হবে। বন্ধের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে। এর প্রভাব পড়বে অ্যাকর্ড কর্তৃক কারখানাগুলোর নজরদারি ও সংশোধন কার্যক্রমে।
ক্রেতাদের কাছে পাঠানো চিঠিতে অ্যাকর্ড বলেছে, যে কারখানাগুলো দ্বিতীয় ধাপে আছে, তাত্ক্ষণিকভাবে তাদের তৃতীয় ধাপের কারখানা হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হবে। এ প্রক্রিয়ায় ১৩৯টি কারখানা অ্যাকর্ডে স্বাক্ষরকারী ক্রেতার জন্য পণ্য প্রস্তুতের অযোগ্য হবে। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের বেশি সময় ধরে প্রথম ধাপে আছে, এমন ৩৯৩টি কারখানা দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের কারখানায় পরিণত হবে, যা কার্যকর হবে ১ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে। এ হিসেবে অ্যাকর্ডের সিদ্ধান্তটি কার্যকর হবে মোট ৫৩৪টি কারখানার ক্ষেত্রে।
সময়মতো সংস্কার করতে না পারা কারখানাগুলোকে তিনটি ধাপে সতর্ক করে অ্যাকর্ড। প্রথম ধাপে নন-কমপ্লায়েন্স চিঠি পাঠানো হয়। এ ধাপে সংস্কার কার্যক্রমে অগ্রগতি না হলে দ্বিতীয় ধাপে কারখানার সঙ্গে ব্যবসা আছে, এমন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্কতামূলক বার্তা পাঠানো হয়। এ ধাপের পরও সংস্কার কার্যক্রমে অগ্রগতি না হলে তৃতীয় ধাপে ক্রেতাদের কাছে সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলোর সঙ্গে ব্যবসা না করতে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ৩০ নভেম্বরের পর সংস্কার কার্যক্রমে পিছিয়ে থাকা কারখানাগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে অ্যাকর্ড।
তৃতীয় ধাপে থাকা এমন একটি কারখানা বিজিএমইএ সহসভাপতি ফারুক হাসানের জায়ান্ট অ্যাপারেলস। সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যাপ্ত নয় কারখানাটির। এ কারণে ক্রেতার সঙ্গে ব্যবসার যোগ্যতা হারানোর পথে আছে।
ব্যবসা হারানোর ঝুঁকিতে আছে পোশাকের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বস্ত্র খাতের বড় প্রতিষ্ঠান নোমান ও জাবের অ্যান্ড জুবায়ের গ্রুপের নোমান ফ্যাশন ফ্যাব্রিকস, নোমান টেরিটাওয়েল মিলস লিমিটেড এবং জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফ্যাব্রিকস লিমিটেড। জানতে চাইলে গ্রুপের ম্যানেজার (ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন) অনল রায়হান বলেন, অ্যাকর্ডের এ ধরনের পদক্ষেপের কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ সরকারি ও বেসরকারি খাতসংশ্লিষ্টদের এরই মধ্যে কারখানা মূল্যায়নের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।
অ্যাকর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবসা হারানোর ঝুঁকিতে থাকা বড় কারখানাগুলোর মধ্যে আরো আছে অ্যাপেক্স নিট কম্পোজিট লিমিটেড, বাক্সটার ব্রেনটন (বিডি) ক্লদিং ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড, ক্যাপ্রি অ্যাপারেলস, ক্যাপ্রি গার্মেন্টস, ক্ল্যাসিক শার্টস লিমিটেড, দুরন্ত নিট কম্পোজিট লিমিটেড, গরীব অ্যান্ড গরীব কোম্পানি লিমিটেড, হামিদ সোয়েটার, হাইপয়েড লঞ্জারি, যমুনা নিট কনসার্ন, কুলিয়ারচর সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ওয়েসিস হাই-টেক স্পোর্টস ওয়্যার ও প্যাপিলন নিট অ্যাপারেলস। একই ঝুঁকিতে আছে রূপা ফ্যাব্রিকস, রূপা নিটওয়্যার, জারা কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড, এ প্লাস সোয়েটার লিমিটেড, আনলিমা টেক্সটাইল লিমিটেড, ক্লিফটন কটন মিলস, ডেকো অ্যাপারেলস, ডেকো ডিজাইন, ডেকো ফ্যাশন, ইস্ট কোস্ট নিটওয়্যার, এসকোয়্যার নিট কম্পোজিট, ইপিলিয়ন নিটওয়্যার, রোজ গার্ডেন অ্যাপারেলস লিমিটেড, রোজ সোয়েটার লিমিটেড, সিনহা নিট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, দ্য ওয়েল টেক্স লিমিটেড, কেয়া নিট কম্পোজিট ডিভিশন, তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড ও তুং হাই সোয়েটার্স লিমিটেডের মতো প্রতিষ্ঠানও।
কারখানাগুলোর বিষয়ে অ্যাকর্ডের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, অ্যাকর্ডের অবর্তমানে পোশাক কারখানা সংস্কার তদারকি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে গঠিত ট্রানজিশন মনিটরিং কমিটির সভায় আলোচনা হবে। তাদের থাকা না-থাকার সিদ্ধান্তের এখতিয়ার এখন শুধু উচ্চ আদালতের।
উল্লেখ্য, অ্যাকর্ডের মূল্যায়নের আওতায় ছিল মোট ১ হাজার ৬৯০টি কারখানা। এর মধ্যে প্রায় ৯০০ কারখানার সংস্কার অগ্রগতি ৯১ থেকে ১০০ শতাংশ। প্রায় ২৭০টি কারখানার অগ্রগতি ৮১ থেকে ৯০ শতাংশ। দেড়শর মতো কারখানা আছে, যেগুলোর সংস্কার অগ্রগতি ৭১ থেকে ৮০ শতাংশ। বাকি কারখানাগুলোর সংস্কার অগ্রগতি শূন্য থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত। সব মিলিয়ে সেপ্টেম্বর শেষে অ্যাকর্ডের তালিকাভুক্ত কারখানাগুলোর ত্রুটি সংস্কার অগ্রগতি ৮৯ শতাংশ।