ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক বাজারে পাম ফল ও তেল রপ্তানিতে ইন্দোনেশিয়ার সরকার যে নিষধাজ্ঞা দিয়েছে তার প্রতিবাদে রাজধানী জাকার্তায় বিক্ষোভ করছেন দেশটির প্রান্তিক ও মাঝারি পর্যায়ের কৃষকরা। অবিলম্বে এই সরকারি আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
দেশটির প্রান্তিক আন্দোলনরত কৃষকদের অভিযোগ, সরকারি এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পর থেকে তারা ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
বিক্ষোভে যোগ দিতে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশ থেকে জাকার্তা এসেছেন ইয়াসলান থামরিন নামের এক কৃষক। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘পাম ফল ও তেলের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর থেকে পাম তেলের দাম কমে গেছে। দাম এতটাই কমেছে যে, কৃষকরা তাদের গাছ থেকে পাম ফল আহরণ করতে ভয় পাচ্ছে।’
‘এখন আমরা পড়েছি উভয় সংকটে। গাছ থেকে ফল আহরণের পর তা বিক্রি করে যে দাম আসবে, তাতে মুনাফা তো দূরের কথা, চাষের খরচই উঠবে না। আবার পাকা ফল যদি বেশিদিন গাছে রেখে দেই, তাহলে গাছ মরে যাবে।’
এক বিবৃতিতে ইন্দোনেশিয়ার প্রান্তিক ও মাঝারি কৃষকদের সংগঠন আপকাসিন্দো, রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি দেশজুড়ে পাম তেলের দামও নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। আর সেই দাম এতটাই নিম্ন যে, দেশের অন্তত ২৫ শতাংশ পাম অয়েল কারখানা তাদের উৎপাদন স্থগিত রাখতে বাধ্য হচ্ছে।
এই মিল মালিকদের মতে, বাজারে তেলে যে দাম, সেই তুলনায় পাম ফল থেকে তেল উৎপাদনের খরচ বেশি।
ইন্দোনেশিয়ার সরকার অবশ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যাপারে তেমন নমনীয় নয়। দেশটির অর্থমন্ত্রী আরিলাঙ্গা হারতার্তো রয়টার্সকে বলেন—সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল, এখনও ইন্দোনেশিয়ায় তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পাম তেল।
হারতার্তো বলেন, ‘সরকার অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতি লিটার পাম তেলের দাম নির্ধারণ করেছে ১৪ হাজার রুপিহা (দশমিক ৯৫ ডলার), অথচ এই শুক্রবারেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতি লিটার পাম তেল বিক্রি হয়েছে ১৭ হাজার ৩০০ রুপিহাতে।’
‘গত বছর জুলাই মাসে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতি লিটার তেলের দাম ছিল ১৩ হাজার ৩০০ রুপিহা। এমন কোনো পরিস্থিতি আসেনি যে, মাত্র ১০ মাসের মধ্যে তেলের দাম প্রায় ৪ হাজার রুপিহা বেড়ে যাবে।’
‘যতদিন দেশজুড়ে তেলের দাম ১৪ হাজার রুপিহাতে না নামে, ততদিন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা থাকবে।’
গত ২৩ মে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদাদো এক বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম ফল ও পাম তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেন।
বিশ্বে পাম তেল উৎপাদন ও রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া; কিন্তু লাগামহীন রপ্তানির কারণে দেশে ভোজ্য তেলের সংকট দেখা দেওয়ায় বাধ্য হয়ে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
অভ্যন্তরীরণ বাজার স্বাভাবিক হলে নিষেধাজ্ঞা ফের তুলে নেওয়া হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট।