ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য বাবদ খরচ কমানোর জন্য আগামী অর্থবছরে খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস) ব্যবস্থায় চালের বরাদ্দ বাড়াবে সরকার। প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, চলতি অর্থবছরের তুলনায় কমপক্ষে এক লাখ টন চালের সরবরাহ বাড়ানো হবে। আর চলতি অর্থবছরে যে পরিমাণ গম সরবরাহ করা হবে, আগামী অর্থবছরে কমপক্ষে একই পরিমাণ বরাদ্দ থাকবে। তবে সহজে গম সংগ্রহ করা সম্ভব হলে এ সরবরাহও বাড়ানো হতে পারে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
খাদ্য বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওএমএসে চালের সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বাজেটে যে বরাদ্দ ছিল, তার চেয়ে এক লাখ টন চাল ও ৫০ হাজার টন গম বেশি সরবরাহ করা হচ্ছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ওএমএস খাতে ৪ লাখ ৭০ হাজার টন চাল ও ৪ লাখ ৬৪ হাজার টন গমের বরাদ্দ ছিল। সম্প্রতি চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ওএমএসের দোকানে ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। ফলে নির্ধারিত বরাদ্দ দিয়ে পুরো অর্থবছরের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। খাদ্য অধিদপ্তরের বিতরণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ মে পর্যন্ত ওএমএসে ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৫৭৮ টন চাল এবং ৪ লাখ ১৮ হাজার ৭২২ টন গম সরবরাহ করা হয়েছে।
ওএমএসে প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও প্রতি কেজি আটা ১৮ টাকা দরে বিক্রি হয়। একজন ক্রেতা দৈনিক সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি করে কিনতে পারেন। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ঢাকা মহানগরের বাজারগুলোতে স্বর্ণা, চায়নার মতো মোটা চাল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। আর প্রতি কেজি খোলা আটা বিক্রি হয়েছে ৪২ থেকে ৪৮ টাকা দরে। আগের বছরের এই সময়ের তুলনায় যা ৪৫ শতাংশ বেশি। দেশের অন্যান্য বাজারেও মোটামুটি একই রকম দরে চাল ও আটা বেচাকেনা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বোরোর ভরা মৌসুমেও চালের দাম বেড়েছে।
ন্যায্যমূল্য, কাবিখা, ভিজিএফ, ভিজিডি, জিআর, ইপিসহ খাদ্যবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ভর্তুকি দিয়ে চাল ও আটা সরবরাহ করে থাকে। ন্যায্যমূল্য কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশে ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজি দরে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। বছরে ৫ মাস এ ধরনের চাল সরবরাহ করে খাদ্য অধিদপ্তর। এজন্য ৭ লাখ ৫৫ হাজার টন চাল লাগে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ বরাদ্দ অব্যাহত রাখা হচ্ছে। এ কর্মসূচিতে বরাদ্দ ও সুবিধাভোগী বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য সহায়তা খাতে ভর্তুকি বাবদ ১৯ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে ১৮ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
খাদ্যশস্যের বাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রোধ করে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে মূল্য সহায়তা দেওয়া এবং বাজারদর স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে সরকার। সারাদেশে ডিলারের নির্দিষ্ট দোকান ও ট্রাকে করে ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। শনিবার বাদে বাকি দিনগুলোতে ওএমএসের বেচাকেনা চলে। একজন ডিলার প্রতিদিনের জন্য ২ টন চাল ও ১ টন আটা বরাদ্দ পান। এর বাইরে টিসিবির ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজসহ কয়েকটি নিত্যপণ্য বাজারের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে সরকার।