ধানের ভরা মৌসুমেও কয়েকদিনের ব্যবধানে দিনাজপুরে বিভিন্ন জাতের চালের দাম কেজিতে ৭-১০ টাকা করে বেড়েছে। চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- অটোমিল মালিকরা চাল মজুত রেখে বিক্রি বন্ধ করে দাম বাড়িয়েছেন।
হিলি বাজারের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, মোটা চালের তুলনায় চিকন চালের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। যে মিনিকেট চাল ৫৩ থেকে ৫৫ থেকে টাকায় বিক্রি হতো, তা এখন ৬২-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শম্পাকাটারি ৫২ থেকে ৫৪ টাকা বিক্রি হলেও, এখন তা ৬৪-৬৫ টাকা, আঠাশ জাতের চাল ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা বিক্রি হলেও তা বেড়ে ৫২-৫৪ টাকা ও স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৩৮-৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫-৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চাল ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন বলেন, প্রতি বছর এমন সময় চালের দাম কম থাকে। তবে এবার ব্যতিক্রম, দাম বাড়ছে। এর কারণ হলো ধানের দাম বেড়েছে। যে ধান হাজার টাকার নিচে ছিল, সেই ধান বর্তমানে ১১০০ থেকে ১১২০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। তবে এতেও দাম খুব বাড়তো না। আবহাওয়া খারাপের কারণে শ্রমিক সংকটে স্থানীয় হাসকিং মিলগুলো চাল উৎপাদন করতে পারছে না। এই সুযোগে চালের অটোমিল মালিকরা বেশি পরিমাণে ধান কিনে চাল করে সব মজুত করছেন। পাশাপাশি বিক্রিও কমিয়ে দিয়েছেন। এতে দাম অনেক বেশি বেড়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘বর্তমানে চাল চাইলেই মিল মালিকরা বলছেন- চাল নেই। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। আমরা যে চাল অন্য কোথাও থেকে কিনবো, তারও উপায় নেই। এর ওপর ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ, যে কারণে বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে চাল কেনা-বেচা করতে হচ্ছে।’
বাজার নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ভারত থেকে চাল আমদানিসহ অসাধু মিল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
আরেক চাল বিক্রেতা সুব্রত কুন্ডু বলেন, ‘চালের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ৬-৭ টাকা করে বেড়েছে। এর কারণ হলো লোকাল চাল মিলগুলো সব বন্ধ। যে কারণে এখন অটোমিল মালিকরা যা চাইছে, তাই হচ্ছে। ভরা মৌসুমে যদি চালের দাম বাড়ে, তাহলে বাকি দিনগুলোতে অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে।’
হিলি বাজারে চাল কিনতে আসা ভ্যানচালক গোলজার হোসেন বলেন, ‘ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে কোন ভাবে সংসার চালাই। সারা দিন ভ্যান চালিয়ে দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা আয় হয়। কিন্তু যে হারে দাম বাড়ছে, তাতে চাল কিনতেই সব শেষ। সংসারের বাকি খরচ কিভাবে চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
তিনি বলেন, ‘যে চালের কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ছিল, তা বেড়ে ৫৫ টাকা হয়েছে। আমাদের মতো মানুষের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। সরকার কিভাবে দাম কমাবে কমাক, না হলে গরিব মানুষদের মুখে ভাত উঠবে না।’
মেহেরুল ইসলাম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘এখন নতুন ধান উঠেছে। এই সময়ে চালের দাম কম থাকার কথা, কিন্তু হয়েছে উল্টো। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে চালের বাজারে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। এতে করে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে।’
তবে চালের দাম নিয়ে কারসাজির অভিযোগ মানতে নারাজ মিল মালিকরা।
দিনাজপুরের তাহমিদ অটো রাইস মিলের মালিক মজিবর রহমান বলেন, ‘চালের দাম বাড়ার বিষয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমাদের যে চাল উৎপাদন হচ্ছে, তা নিয়মিত ভাবেই বাজারে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন হু হু করে ধানের দাম বাড়ছে। এ কারণেই বেড়েছে চালের দাম। আজ শম্পা কাটারি জাতের কাঁচা ধান ২৬০০ টাকায় কিনতে হয়েছে। এত দাম ব্যবসার জীবনে দেখিনি। আর ২৯ জাতের কাঁচা ধান কিনেছি দুই হাজার টাকা বস্তা। এ থেকে ৪১-৪২ কেজি চাল হবে। অন্যদিকে আমরা চালের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি করছি ২৪০০-২৫০০ টাকায়।’
দিনাজপুর চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে এখন কথা বলতে পারবো না। পরে কথা বলবো বলে কল কেটে দিন তিনি।’
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ আলম বলেন, ‘বাজারে অহেতুক কেউ যেন কোনও পণ্যের দাম বাড়াতে না পারে, সে জন্য আমরা নিয়মিত ভাবে বাজার মনিটরিং করছি। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হচ্ছে।’