এস এম রাজীব: রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরে দীর্ঘ ২১ দিন ধরে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে তিতাস। গ্যাস না থাকায় রান্নাসহ অন্যান্য কাজে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের।
তবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তিতাসের ধানমন্ডি জোন জানিয়েছেন, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং বকেয়া পাওনা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে ওই এলাকায়।
সোমবার কামরাঙ্গীর চরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় স্থানীয়দের চরম বিপাকে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষগুলো। অনেকই আবার দুই বেলার রান্না একবারে সেড়ে নিচ্ছেন। কারণ দুইশ, আড়াইশ টাকার লাকড়ির মণ এখন সেখানে ৮০০ টাকা। আর সেই সুযোগে হোটেলেও বেড়ে গেছে খাবারের দাম। ফলে বাধ্য হয়ে বিকল্প পথ খুঁজছেন অনেকেই।
স্থানীয় অটোরিকশাচালক মো. হাবিবুর রহমান ভোক্তাকণ্ঠকে বলেন, ‘বাসায় চলতি মাসের ১০ তারিখ থেকে গ্যাস নেই, তাই কেরোসিন তেল দিয়ে স্টোভে রান্না করতে হচ্ছে। আবার এই সুযোগে তেলের দামও বাড়িয়ে নিচ্ছেন দোকানীরা। কিন্তু কি করবো খেতে তো হবে। মালিকের পক্ষ থেকেও বাসা ভাড়া কম নেবে না বলে জানিয়েছে। আবার এলপি গ্যাসের ব্যবস্থা করেও দিচ্ছে না। তাই জুন মাস থেকে নতুন বাসায় চলে যাচ্ছি।’
অরেক রিকশাচালক মো. নুর ইসলাম ভোক্তাকণ্ঠকে বলেন, ‘আমি এই এলাকায় অনেক দিন যাবৎ ভাড়া থাকি। আগেও গ্যাসের সমস্যা ছিল। কিন্তু এবার ২১ দিন হলো গ্যাস নেই। গরিব মানুষ লাকড়ি কিনতেও পারি না। তাই এক বেলা খাইলে আরেক বেলা খাইতে পারি না। জিনিসপত্রের দামও বেড়ে গেছে। হোটেলে ৫ টাকার পরোটা ১০ টাকা নিচ্ছে, তাও পাওয়া যায় না। পলিথিন দিয়ে রান্না করায় ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
রসুলপুর এলাকার বাসিন্দা রাশেদা বেগম ভোক্তাকণ্ঠকে বলেন, ‘গ্যাস নেই, এলপি গ্যাসের দামও বেড়ে গেছে। লাকড়ি ৮০০ টাকা মণ নিচ্ছে। চুলার জন্য ইটও পাওয়া যায় না। হোটেলের খাবারেরও দাম বেড়ে গেছে। অনেক কষ্ট হচ্ছে। ঠিক সময়ে রান্না করতে পারি না। ছেলে-মেয়েদের ঠিক সময়ে খাবার দিতে পারি না। অনেক সময় তাদের না খেয়েও থাকতে হয়। এভাবে চললে তো বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়বে।’
গৃহিনী আসমা বেগম ভোক্তাকণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা বাসা ভাড়ার সঙ্গে গ্যাস ও পানির বিল দিয়ে দেই। কিন্তু মালিক কি করে সেটা তো জানি না। করোনার সময়ে অনেক কষ্ট করেছি। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আবারও কষ্টে পড়ে গেছি। কেরোসিন তেল ১৫০ টাকা লিটার নিচ্ছে। আমরা সাহায্য চাই না। সরকার যেন আমাদের তাড়াতাড়ি গ্যাস দেয় সেই দাবি জানাই।’
তবে স্থানীয় একাধিক বাড়ির মালিকরা জানান, তাদের বাড়িতে বৈধ গ্যাস লাইন রয়েছে। কোন কোন বাড়িতে কিছু টাকা বকেয়া রয়েছে। তাই গ্যাসের পুরো লাইন কেটে দেয়ার ফলে তারা গ্যাস থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অবে অনেক বাড়িতেই অবৈধ গ্যাস সংযোগও রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কামরাঙ্গীরচরে ১২ হাজার বৈধ গ্যাস লাইনের বিপরীতে ৯০ হাজার অবৈধ সংযোগ থাকার অভিযোগ করেছে তিতাস। এছাড়াও বৈধ সংযোগ ব্যবহারকারীদের কাছে প্রায় ৬৭ কোটি টাকা বিল বকেয়া থাকার দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর পরিপেক্ষিতেই দফায় দফায় অভিযান পরিচালনা করছে তিতাস উত্তরের ধানমন্ডি জোন। এর ফলে স্থানীয়দের ভোগান্তিও বেড়েছে চরমে।