বিশ্বে এখন ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ মিলিয়নিয়ার বা ১০ লাখ ডলারের বেশি সম্পদের মালিক। যদিও বিশ্বের মাথাপিছু সম্পদ ৬৩ হাজার ১০০ ডলার। অবশ্য অঞ্চল ও দেশভেদে মাথাপিছু সম্পদের ভিন্নতা অনেক বেশি। সুইজারল্যান্ডে মাথাপিছু সম্পদ ৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার, অস্ট্রেলিয়ায় ৪ লাখ ১১ হাজার ডলার, যুক্তরাষ্ট্রে ৪ লাখ ৪ হাজার ডলার, বেলজিয়ামে ৩ লাখ ১৩ হাজার ডলার ও নরওয়েতে ২ লাখ ৯১ হাজার ডলার।
মানুষের সম্পদের এই চিত্র উঠে এসেছে সুইজারল্যান্ডের বহুজাতিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট সুইসের ‘বৈশ্বিক সম্পদ প্রতিবেদন-২০১৮’তে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে মিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ১ কোটি ৭৩ লাখ, চীনে ৩৪ লাখ ৮০ হাজার, জাপানে ২৮ লাখ ৯০ হাজার, যুক্তরাজ্যে ২৪ লাখ ৩৩ হাজার ও জার্মানিতে ২১ লাখ ৮৩ হাজার।
৫ কোটি ডলারের বেশি সম্পদশালী মানুষ আছে, এমন শীর্ষ ২০টি দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, জাপান, ভারত, ইতালি, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, কোরিয়া, রাশিয়া, স্পেন, হংকং, তাইওয়ান, সুইডেন, ব্রাজিল, নেদারল্যান্ডস ও সিঙ্গাপুর।
প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে সম্পদ বাড়বে ২৬ শতাংশ। ২০২৩ সালে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৩৯৯ ট্রিলিয়ন ডলার। আর এ সম্পদ বাড়বে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে। এসব দেশে মোট প্রবৃদ্ধির ৩২ শতাংশ আসবে, যদিও উদীয়মান অর্থনীতি বৈশ্বিক মোট সম্পদের ২১ শতাংশের মালিক। আলোচ্য সময়ে বিশ্বে মিলিয়ন ডলারের মালিকের সংখ্যা দাঁড়াবে সাড়ে ৫ কোটিতে। অন্যদিকে ৫ কোটি ডলারের বেশি সম্পদের মালিক দাঁড়াবে ২ লাখ ৫ হাজার জনে।
প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ, সম্পদ বৃদ্ধির হার, মিলিয়নিয়ারদের (১০ লাখ ডলারের বেশি সম্পদ) সংখ্যা ইত্যাদি তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি নারীদের সম্পদের পরিস্থিতিও তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু সম্পদ বেড়েছে। ২০১৮ সালে এ দেশের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের মাথাপিছু সম্পদের মূল্য দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৩২ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকার সমান। এ দেশের মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখা ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার চেয়ে বস্তুগত সম্পদ অর্জনেই বেশি আগ্রহী। কারণ তাদের জমি, বাড়ি, সোনাদানার মতো সম্পদই বেশি।
ক্রেডিট সুইসের প্রতিবেদনে হিসাব করা হয়েছে মূলত প্রাক্কলনের ভিত্তিতে। এতে বলা হয়, ২০১৮ সালের মধ্যভাগে বিশ্বের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১৭ ট্রিলিয়ন (১ লাখ কোটিতে ১ ট্রিলিয়ন) ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। এ সময় প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা বেড়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ।
সম্পদ প্রতিবেদনের একটি তথ্যভান্ডারও দিয়েছে ক্রেডিট সুইস। এতে দেখা যায়, ২০০০ সালে বাংলাদেশের মানুষের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। ওই সময় মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৩৮ ডলার। এর মধ্যে আর্থিক সম্পদ ৪৭০ ডলার ও অনার্থিক সম্পদ ছিল ৬৯৪ ডলার। তখন মাথাপিছু ঋণ ছিল ২৬ ডলার।
২০১৮ সালের মধ্যভাগে এসে দেশের মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার কোটি ডলারে। আর এ দেশের মানুষের গড় সম্পদ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৩২ ডলারে। এর মধ্যে আর্থিক সম্পদ ৯২১ ডলার ও অনার্থিক সম্পদ ১ হাজার ৫৩১ ডলার। এদিকে ভারতে মাথাপিছু সম্পদ ৭ হাজার ২৪ ডলার, পাকিস্তানে ৩ হাজার ৮১৬ ডলার, মিয়ানমারের ১ হাজার ৫১৫ ডলার, নেপালে ২০৫৪ ডলার ও শ্রীলঙ্কায় ৫ হাজার ৭৫৮ ডলার।
ক্রেডিট সুইস বাংলাদেশের মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা ১০ কোটি ২৭ লাখ ৯৩ হাজার ধরে হিসাব করেছে। এই জনসংখ্যার মধ্যে ৯৭ দশমিক ২ শতাংশের সম্পদ ১০ হাজার ডলারের নিচে। ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলারের সম্পদ আছে ২ দশমিক ৭ শতাংশের। বাকি শূন্য দশমিক ১ শতাংশের সম্পদ ১ থেকে ১০ লাখ ডলারের মধ্যে। জনসংখ্যার হিসাব অনুযায়ী, এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ২ হাজার ৭৯৩ জন। অর্থাৎ দেশের ১ লাখের বেশি মানুষের ৮৪ লাখ টাকার বেশি সম্পদ আছে।