এস এম রাজিব: উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে শিল্প-কারখানা সৃষ্টিতে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়বে। আর এ বিষয়টি সামনে রেখে এ খাতের অবকাঠামো উন্নয়ন অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা থাকলেও সংশ্লিষ্ট খাতে এবারের বাজেটে বরাদ্দ কমেছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগের জন্য ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। বিদ্যুৎ খাতে ২৫ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা এবং জ্বালানি খাতের জন্য দুই হাজার ৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। যদিও সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ দাঁড়ায় ২৪ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা।
বর্তমানে চলা এ বাজেটের ১০ শতাংশই বরাদ্দ ছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। আর মোট বরাদ্দের বেশির ভাগ অর্থ বরাবরের মতোই বিদ্যুৎ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে।
তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সে বরাদ্দ নেমে এসেছে ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের তুলনায় এক হাজার ৪১৮ কোটি টাকা কমেছে।
অর্থাৎ আগের অর্থবছরে বরাদ্দ ১৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ বাড়ানো হলেও এবার কমানো হয়েছে ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।
গত বৃহস্পতিবার (০৯ জুন) জাতীয় সংসদে দেশের ৫১তম এ বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে সংশোধিত বাজেটে এ বরাদ্দ কমা বা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
২০২২-২৩ বাজেটে বিদ্যুৎ খাতের জন্য ২৪ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর জ্বালানি খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে এক হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য রেকর্ড ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সে হিসাবে বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে এ বছর বরাদ্দ মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থাৎ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দুই খাতেই বরাদ্দ কমেছে বাজেটে।
তবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় বাজেট বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ৫০তম সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের বেশ কিছু প্রকল্প হাতে আছে। তাই বড় বাজেট চাওয়া হয়েছে।’
মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। যেখানে বিদ্যুৎ খাতের জন্য মোট বরাদ্দ ধরা হয় ২৭ হাজার ৭১১. ৯০ কোটি টাকা।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৬০টি প্রকল্পের জন্য এ বরাদ্দ চাওয়া হয়। এই ৬০ প্রকল্পের নয়টি একেবারেই নতুন প্রকল্প।
প্রকল্প গুলোর মধ্যে রয়েছে- পেট্রোবাংলার পাঁচটি, ব্লু ইকোনমি সেলের দুটি, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) একটি ও ভূতাত্বিক জরিপ অধিদফতরের (জেএসবি) একটি প্রকল্প।
২০২২-২৩ বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিগত ১৩ বছর ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে দেশে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াটে।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ১৩ হাজার ৫৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন আছে। এর মধ্যে কয়লাভিত্তিক পায়রা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শেষে প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্যিক উৎপাদন উদ্বোধন করেছেন।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, মাতারবাড়ি এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল প্রজেক্ট স্থাপনের কার্যক্রম চলছে এবং রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে আরও বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে প্রায় ৭৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। মোট চাহিদার শতকরা ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে উৎপাদনের লক্ষ্যে সৌর শক্তিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
একদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নের জন্য মহাপরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট খাতটিতে অর্থ বরাদ্দ কমেছে। এ খাতের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সেবা গ্রহীতাদের উপর কোন প্রভাব পড়বে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম ভোক্তাকণ্ঠকে বলেন, ‘বাজেট বরাদ্দের সঙ্গে গ্রাহকদের বিল বাড়ানো বা কমানোর সম্পৃক্ততা নেই। বরাদ্দ কমায় গ্রাহকের উপর কোন প্রভাব পড়বে না। কারণ এটি অনুদান না।’
উল্লেখ্য, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেটে বরাদ্দ ছিল ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২০২২-২৩ নতুন বাজেটের আকার ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বাড়লেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কমেছে আগের বছরের তুলনায় এক হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।