ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য ৯২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়।
সিনেটের চেয়ারম্যান ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত ও ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।
প্রস্তাবিত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য সিন্ডিকেট ৯২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার প্রস্তাবিত অনুন্নয়ন ব্যয় অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে বেতন, ভাতা ও পেনশন বাবদ ৬৭১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা; যা মোট ব্যয়ের ৭২.৮৫ শতাংশ; গবেষণা মঞ্জুরি বাবদ ১৫ কোটি ৫ লাখ টাকা; যা মোট ব্যয়ের ১.৬৪ শতাংশ; অন্যান্য অনুদান বাবদ ৩৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা; যা প্রস্তাবিত ব্যয়ের ৩.৬৪ শতাংশ; পণ্য ও সেবা বাবদ ১৭৯ কোটি ৯৯ লাখ ৮ হাজার টাকা; যা মোট ব্যয়ের ১৯.৫২ শতাংশ এবং মূলধন খাতে ২১ কোটি ৯৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা; যা মোট ব্যয়ের ২.৩৯ শতাংশ।
কোষাধ্যক্ষ জানান, প্রস্তাবিত এই বাজেটের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-বিমক থেকে পাওয়া যাবে ৭৮১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৮৩ কোটি টাকা এবং ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৫৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যা প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৬.২৪ শতাংশ। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে বিমক-এর অনুদানের তুলনায় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বিমক-এর বরাদ্দ ৫০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বাড়বে।
সংশোধিত বাজেটের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০২১-২০২২ সালের মূল বাজেট ছিল ৮৩১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সংশোধিত বাজেটে ২৮ কোটি ৮৯ লাখ বৃদ্ধি করে সংশোধিত বাজেট দাঁড়ায় ৮৬০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। উক্ত সংশোধিত বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে অনুদান ৭৩১ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং নিজস্ব আয় হিসাবে ৬৫ কোটি টাকাসহ আয় ধরা হয়েছে ৭৬১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা; যা মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৪.৪৫ শতাংশ।
কোষাধ্যক্ষ জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনও লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়, বিধায় নিজস্ব তহবিল থেকে ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে না। প্রতি বছর এভাবে তহবিলের ঘাটতি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়ের নতুন নতুন খাত খুঁজে বের করতে হবে, অথবা সরকারের কাছ থেকে বিশেষ অনুদান চাওয়া যেতে পারে। দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের সুযোগ পান। কিন্তু সাবসিডাইজড হাইয়ার এডুকেশন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত নয়। পরোক্ষ করই সরকারের রাজস্বের প্রধান উৎস। দরিদ্রে প্রদেয় পরোক্ষ করে ধনী পরিবারের সন্তানদের প্রায় বিনামূল্যে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ প্রদান অযৌক্তিক। অ্যাবিলিটি টু পে নীতির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ফি নির্ধারণ করা যেতে পারে।
২০২১-২২ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও একাডেমিক ভবন মেরামত ও সংস্কারের জন্য বিমককে একটি বিশেষ তহবিল প্রদান করেছেন, যেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এবং আশা করি আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে বর্ধিত হারে এ ধরনের অনুদান আমরা পাবো।
এর আগে বার্ষিক অভিভাষণে উপাচার্য আখতারুজ্জামান গত একবছরে বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন।
উপাচার্য বলেন, আর্থিক অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের বিশেষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আনয়ন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিকা রাখে বলে আমার ধারণা। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত করা খুবই জরুরি। বিশেষ করে আর্থিকভাবে শিক্ষার্থীদের গবেষণা সেন্টার ও গবেষণা প্রকল্পসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভিন্ন সেবামূলক ও দাফতরিক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কাজে খণ্ডকালীন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করলে একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজের ও সেবা কার্যক্রমের গুনগত মানের উন্নয়ন ঘটবে, অন্যদিকে অনেক শিক্ষার্থী নানা ধরনের মনঃসামাজিক অভিঘাত মোকাবিলা করার শক্তি ও সাহস পাবে। আত্মনির্ভরশীল কর্মমুখী দক্ষ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের সাপ্তাহিক নির্ধারিত কর্মঘণ্টায় কাজ করার সুযোগ থাকে। ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শ দফতরে খণ্ডকালীন চাকরির অতিসীমিত পরিসরে যে উদ্যোগটি রয়েছে তার পরিধি ও প্রকৃতি সম্প্রসারণ ঘটানো এখন সময়ের দাবি।
সভায় বাজেটের ওপর আলোচনাকালে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, পূর্বাচল এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল নির্মাণ, মেডিক্যাল সেন্টারের সেবাবৃদ্ধি, প্রতি বছর শিক্ষকদের ২টি সেমিনারে অংশগ্রহণের সুযোগ, পিএইচডি গবেষণার রেইজ পিরিয়ড বাড়ানো, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শব্দ দূষণ রোধ, ক্যাম্পাসে বিশেষ পুলিশ মোতায়েনের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার, ডিস্টিংগুয়েজ শিক্ষকদের বিশেষ মর্যাদা দানের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, সংসদ সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার, মেহের আফরোজ চুমকি, আবদুস সোবহান গোলাপ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, সিনেট, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও ছাত্র প্রতিনিধিরা।