নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাসের নতুন দুটি BA.4/5। সামনে ঈদকে কেন্দ্র করে সংক্রমণ আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মহামারি বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, পূর্বে করোনায় আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তি বা টিকা নিয়েছে এমন ব্যক্তিদের দেহে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিকেও ফাঁকি দিতে সক্ষম অমিক্রন ও ডেল্টার নতুন এই দুই উপধরণ।
উল্লেখ্য – সম্প্রতি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে বাংলাদেশি দুই জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট BA.4/5 শনাক্ত করা হয়।
যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক ড. মো ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, BA.4/5 এ দুটি ডেল্টা-অমিক্রনের সমন্বিত রূপ। এই উপধরণের একটি সংক্রমণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে আর অন্যটি মানুষের দেহে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দেয়।
তিনি বলেন, যারা প্রচলিত ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নিয়েছেন, এমনকি বুস্টার ডোজ নিয়েছেন এমন ব্যক্তিরাও সংক্রমিত হচ্ছে এই দুই ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা।
ড. মো ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, এই রোগটি মূলত ৯০ ভাগের বেশি ছড়ায় নাক এবং মুখ দিয়ে। সুতরাং মাক্স বাধ্যতামূলক করতে পারলে অনেকটা প্রতিরোধ সম্ভব। একই সঙ্গে যারা এখনো টিকা নেয়নি তাদের দ্রুত টিকা নেওয়া।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ সাপ্তাহিক হিসাব বলছে, বিশ্বে সংক্রমণ বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশে সংক্রমিত ব্যক্তি বেড়েছে ৩৫০ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, করোনার উপসর্গ নিয়ে ১০০ জন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালে ১৪ জনের বেশি মানুষ করোনা রোগী বলে শনাক্ত হচ্ছে।
গত ৬ জুন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১ শতাংশের নিচে থাকলেও ২০ জুন শনাক্তের হার ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে এবং সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির এই ধারা অব্যাহত আছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, টিকা নেওয়া থাকলে রোগের তীব্রতা কম হবে, কিন্তু আক্রান্ত হবেন না এটা ঠিক না।
এখন যে ঢেউ শুরু হয়েছে তাতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি, যদি না ভাইরাসটিকে শরীরে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া না হয়। আর এর একমাত্র পথ হলো মাস্ক পরা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, শারিরীক দূরত্ব বজায় রাখা।
সম্প্রতি কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটির সভার পর ছয়টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে জানান, কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা।
সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হলো- সকল ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি প্রয়োগ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম বর্জন করা প্রয়োজন। ধর্মীয় প্রার্থনার স্থানগুলোতে (যেমন- মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি) মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা দরকার।
বিমান, স্থল ও নৌবন্দরগুলোতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ, টিকা সনদ আবশ্যক করতে হবে। বিশেষত, অধিক আক্রান্ত দেশগুলো হতে আগত যাত্রীদের জন্য। সন্দেহজনক ব্যক্তিদের rapid antigen test করার ব্যবস্থা করতে হবে।
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন এর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ যারা এখনও নিতে পারেননি তাদের এটা নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী করতে হবে। ৫ থেকে ১২ বৎসরের শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যাপারে নিটাগ (nitag) এর পরামর্শ অনুসরণ করা দরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চতুর্থ ডোজ অনুমোদন করলে তা বিবেচনা করতে হবে।
কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য যে বিশেষ শয্যা, আইসিইউ ব্যবস্থা ও জনবল ছিল, তা বর্ধিত হারে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুত রাখার কথা বলা হয়েছে।
এস এম