ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: আসন্ন রমজান ঘিরে ফের অস্থির হয়ে উঠতে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের বাজার। মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে সিন্ডিকেটও। রোজার একমাস বা এর বেশি সময় আগে থেকেই প্রতিবছর একই ঘটনা ঘটে। নিত্যপণ্যের কোনো ধরনের সংকট বা ঘাটতি না থাকলেও অকারণেই বাড়তে থাকে দাম। সৃষ্টি হয় কৃত্রিম সংকটও। এ অবসস্থায় রমজানে পণ্যের সংকটের কারণেই কি কেবল বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে, সামনে এসেছে সে প্রশ্নও।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বৃদ্ধির পেছনে ভোক্তাদেরও দায় আছে। তাদের ভাষ্য, অনেক ক্রেতাই রমজানের আগে পুরো এক মাসের বাজার করেন। এতেই সৃষ্টি হয় কৃত্রিম সংকট। চাহিদা বুঝতে পেরে লাগামহীন দাম বৃদ্ধির সুযোগ নেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। বিশ্লেষকদের পরামর্শ, রোজার বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেনাকাটায় ভোক্তাদের আরও বেশি সহনশীল হতে হবে। সহমর্মিতা ও আত্মসংযমের মহান শিক্ষার মাস পবিত্র রমজান। কিন্তু এ মাসেই সবচেয়ে অসিহষ্ণু আচরণ করেন অনেকে। সপ্তাহ নয়, বরং পরিবারের জন্য পুরো রমজান মাসের নিত্যপণ্য কেনেন তারা।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ইফতারিতে বেগুন কিংবা শসা খেতেই হবে, সেক্ষেত্রে আমরা ভোক্তারাই বাজারে হামলে পড়ি, বাজারকে অস্থির করে তুলি। আমাদের আরও সচেতন হওয়ার সুযোগ আছে। রমজানের প্রথম সপ্তাহের পরেই পণ্যের দাম অনেকটা স্থিতিশীল থাকে। তাই আমাদেরকে একটু ধৈর্যশীল থাকতে হবে।’
ক্রেতারা বলছেন, রমজানে পণ্য সংকট হওয়ার আশঙ্কা থেকে অনেকেই আগেভাগে পুরো মাসের বাজার একসঙ্গে করে ফেলছেন। আগে কিনে যদি ১০ টাকা কমে পাওয়া যায়, তাহলে তো লাভই হলো। আগে থেকে কিনে রাখলে কিছুটা সাশ্রয় হয়। রমজান এলে বাজার আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে যাবে। বিক্রেতাদের অভিযোগ, কেনাকাটায় এমন অধৈর্য আচরণ পণ্যের দামবৃদ্ধিকে উসকে দেয়। তারা বলছেন, অনেকে এক মাসের বাজার একত্রে করায় পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেয়।
বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির বলেন, ‘বাজারে যদিও পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। তারপরেও পুরো ব্যবস্থাকে ঠিক রাখতে সরকারকে হিশশিম খেতে হচ্ছে। সুতরাং, এই অবস্থায় যেন আমরা মিতব্যয়ী হই। আমরা যেন বুঝেশুনে কেনাকাটা করি।’
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলছেন, ‘একটি ভবনে হয়তো ২০টি পরিবার থাকে। তাদের মধ্যে যদি কেউ একজন উদ্যোগী হয়ে সবার চাহিদা নিরূপণ করে সপ্তাহে একদিন পাইকারি বাজার থেকে পণ্য ক্রয় করেন, তাহলেই কিন্তু ২০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি সাশ্রয় করা সম্ভব।’
পাশাপাশি রমজানের চাহিদা বিবেচনা করে ব্যবসায়ীদের আগেভাগেই পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি করারও আহ্বান জানান তিনি।