ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সবজির হাট বগুড়ার মহাস্থানগড় হাট থেকে সারাদেশে সবজি সরবরাহ কমে গেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন এ হাট থেকে ১০০-১৫০টি সবজির ট্রাক লোড হতো সেখানে এখন তা ৩৫-৪০টিতে নেমে এসেছে। ট্রাকচালক ও পাইকাররা বলছেন, হাটে সবজি সরবরাহ ঠিকই আছে কিন্তু বর্ধিত মূল্যে তেল কিনে সবজি নিয়ে দামে পোষানো যাচ্ছে না। যে কারণে তারা ট্রাকের সংখ্যা কমিয়ে মালামাল কম নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) মহাস্থানগড় সবজি হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গফুর নামে এক ট্রাকচালক জানান, বগুড়া থেকে ঢাকায় সবজি নিয়ে যেতে এক ট্রাকে ভাড়া বেড়েছে তিন হাজার টাকার মতো। এতদিন ভাড়া ছিল ১২ হাজার টাকার আশপাশে। ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর নেওয়া হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। এছাড়া একাধিক ট্রাকচালক জানান, শুধু ঢাকা নয়, বগুড়া থেকে দেশের যেসব জেলায় সবজি যায় তার প্রতিটি পথের ৩০ শতাংশের ঊর্ধ্বে ভাড়া বেড়েছে।
হাটে আসা একাধিক ব্যবসায়ী জানান, খুচরা বাজারে সবজির দামে তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে। পাইকারির চেয়ে খুচরা বাজারে সবজির দাম বেড়েছে অনেক বেশি। বিশেষ করে রাজধানীতে কোনো সবজিই খুচরা বাজারে ৮০ টাকা কেজির নিচে মিলছে না। মহাস্থানগড় হাটে এসব সবজির বেশির ভাগের দামই ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে। পরিবহন ব্যয় বাড়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
হাটে আসা মুক্তার হোসেনের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে। তিনি বলেন, ১৫ টন সবজি পরিবহনে আগে ভাড়া লাগতো ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। তেলের দাম বাড়ার কারণে ওই সবজির জন্য এখন গাড়িভাড়া দিতে হচ্ছে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, ‘লাউ যদি এখানেই (হাটে) ২৮-৩০ টাকায় কিনি আরও ৭-৮ টাকা রোড খরচা আছে। সেই সঙ্গে লেবার খরচ, আড়তদারি খরচাও যোগ হবে। দেখা যায়, মাল কিনে ঢাকায় নিয়ে দামে পোষায় না। এখন আমরা ব্যবসা ছেড়ে দেবো বলে ভাবছি।’
মহাস্থানগড় কাঁচাবাজার থেকে সবজি কিনে ঢাকার শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ী ও কারওয়ান বাজারে সরবরাহ করেন ট্রাকচালক জাহাঙ্গীর আলম। তার বাড়ি ঢাকার হাজারীবাগে।
তিনি বলেন, দফায় দফায় তেলের দাম যে হারে বেড়ে যাচ্ছে তাতে মালিক/মহাজনদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তেলের দাম যখন ৬৫ টাকা লিটার ছিল তখন ঢাকা থেকে আমরা বগুড়া ৮-৯ হাজার টাকা ভাড়া পেতাম। আবার যখন ৮০ টাকা লিটার তেলের দাম হলো তখন খরচা আরও এক হাজার বেড়ে গেল। এখন ১১৪ টাকা লিটার হওয়ার পরে সাত হাজার টাকার তেলই লাগে। আজ চারদিন ধরে বগুড়ায় বসে আছি। ঠিকমতো খাওয়া নেই, ঘুমও নেই। আবার ট্রিপও পাচ্ছি না। ঠিকমতো ভাড়া না পেলে আমরা চলবো কীভাবে?
আক্ষেপ করে জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা তো ভাই কমিশনে গাড়ি চালাই। ১০০ টাকা ইনকাম হলে আমরা পাই ২৫ টাকা। এখন ফাঁকা গাড়ি নিয়ে বগুড়া থেকে ঢাকা গেলে পুরোটাই লোকসান হবে। বাধ্য হয়ে ট্রাক চালানো বন্ধ করে দিতে হবে।
সরকার গত শুক্রবার রাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ৩৪ টাকা, পেট্রল ৪৪ ও অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে দেয়। এই মূল্যবৃদ্ধির পর বাড়তি দরে তেল কিনে শনিবার বগুড়া থেকে সবজি নিয়ে ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন জেলায় রওয়ানা হন ট্রাকচালকরা। ফলে সেই পণ্যগুলোর দাম খুচরা বাজারে বেড়ে যায়।
হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি আমিনুল হক বলেন, মহাস্থানগড় হাট থেকে রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, মেহেরপুর, যশোর, সাতক্ষীরা ও মুন্সিগঞ্জে সবজি যায় এবং অন্য মালামাল নিয়ে বগুড়ায় ফিরে আসে ট্রাক। দূরত্ব ও ট্রাকের বহন ক্ষমতাভেদে ভাড়ার পরিমাণ ভিন্ন হয়। তেলের দাম বাড়ার পর ট্রাকচালকরা যে হিসাব দিচ্ছেন, তাতে ভাড়া বেড়েছে ৩০ শতাংশের ওপর। তারপরও ফিরতি ট্রাকে মাল না পেলে বিরাট অঙ্কের লসের ঝুঁকি থাকে।
তিনি বলেন, তেলের যখন দাম বাড়ে তখন হাটে ব্যবসা হয় না। তেলের দাম যখন কম থাকে তখন আমাদের ব্যবসা ভালো হয়। নতুন করে তেলের দাম বাড়ার কারণে নারায়ণগঞ্জে মাল পাঠানোর পরে প্রতিদিন আমাদের লোকসান হচ্ছে চার হাজার টাকা। আগে ১৫-১৬ হাজার টাকা ট্রাকভাড়া দেওয়ার পরেও ৪-৫ হাজার টাকা লাভ হতো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রাকভাড়াসহ অন্যান্য ব্যয় বাড়লে সবজির গড় দাম বেড়ে যায়। এ কারণেই কৃষক পর্যায়ে সবজির কেজি পাঁচ টাকায় নামলেও ঢাকার খুচরা বাজারে তা ৩০ টাকার কমে বিক্রি হয় না।