ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: বাটারফ্লাই ব্র্যান্ডের আসল সেলাই মেশিনের কথা বলে নকল মেশিন বিক্রি করে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল একটি প্রতিষ্ঠান। কাওরানবাজারের এই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ১০ থেকে ১২ বছর ধরে এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে ব্যবসা চালিয়ে আসছিল।
অবশেষে এক অভিযোগকারীর তথ্যানুসারে সেই দোকানে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। পরে সেখান থেকে আরও কয়েকটি নকল সেলাই মেশিন জব্দ করে ভেঙ্গে ফেলা হয়।
অভিযানের নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান, সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল, এবং রজবী নাহার রজনী।
পিছনের ঘটনা
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী, গত বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) কাওরানবাজারের ডিআইটি মার্কেটের জাকের মঞ্জিল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস নামের একটি দোকান থেকে বাটারফ্লাই ব্র্যান্ডের সেলাই মেশিন ক্রয় করেন। পরে বাড়িতে নেবার পর বুঝতে পারেন এই সেলাই মেশিন আসল বাটারফ্লাই নয়, এটি নকল। পরে আজ রোববার সকালে সরাসরি প্রমাণাদিসহ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ জানাতে আসেন। অভিযোগ গ্রহণ করার পর ঐ ছাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে অভিযানে নামে ভোক্তা অধিকার।
অভিযানে যা ঘটেছিল
কাওরানবাজারে ডিআইটি মার্কেটের ২য় তলায় জাকের মঞ্জিল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপে গেলে দেখায় যায়, বাটারফ্লাই ব্র্যাণ্ডের নাম বলে কয়েক প্রকারের নকল সেলাই মেশিন বিক্রি করছে। ঐ শিক্ষার্থীর কেনা ক্যাশ মেমো দোকানীকে দেখানো হলে তিনি জানান, এই সেলাই মেশিনটি নকল। তবে বিক্রির সময় আসলের থেকে কম দাম নেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের সময় দোকানে মালিককে পাওয়া যায়নি। যে উপস্থিত ছিলেন সে নিজেকে কর্মচারী দাবি করেন। এসব নকল মেশিন চকবাজার থেকে কম মূল্যে ক্রয় করে আসল সেলাই মেশিনের দামে বিক্রি করা হচ্ছিল।
অপরাধের বিষয়ে যা বলছে দোকানের কর্মচারী (উপস্থিত কর্তৃপক্ষ)
বাটারফ্লাই ব্র্যাণ্ডের নামে আরও দুই প্রকারের সেলাই মেশিন আছে। যা নকল। আসলের থেকে নকলগুলোতে দাম একটু কম। অনেক ক্রেতা কম দামে সেলাই মেশিন কিনতে চায়, তখন তাদের এসব নকল মেশিন দেওয়া হয়। তবে কোনো ক্রেতা যদি টাকা নিয়ে ঝামেলা না করে তাহলে তাকে আসল মেশিন দেওয়া হয়।
নকল এবং আসল মেশিন চেনার বিষয়ে তিনি বলেন, আসল বাটারফ্লাই মেশিনের মোড়কে থাকা বারকোড দিয়ে এসএমএস করলে ফিরতি এসএমএস-এর মাধ্যমে কোম্পানি থেকে বলে দিবে এটা আসল। এবং খোদাই করে স্পষ্টভাবে বাটারফ্লাই লেখা থাকবে।
প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর
আসল পণ্য বলে নকল পণ্য বিক্রির অপরাধে প্রতিষ্ঠানটিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া নকল সেলাই মেশিনগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়। যাতে পুনঃরায় বিক্রি করতে না পারে। পাশাপাশি জনস্বার্থে এই দোকানকে আগামী ৭ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এবং দোকান বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।
যা বললেন ভুক্তভোগী
অভিযোগকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলেন, আমি একজন শিক্ষার্থী। সেলাই মেশিন সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না। সেলাই মেশিন আসল বা নকল হয় এ বিষয়েও আমার ধারণা ছিল না। আমি এই দোকানে এসে আসল মেশিন কিনতে চাই। তাদের বার বার বলি যেন মেশিনটি আসল হয়। দোকানদারও সে সময় আমাকে বার বার আসল বলেছেন। কিন্তু বাসায় নেবার পর জানতে পারি বাটারফ্লাই এখন কালো কালার হয় না। এখন ব্লু কালার হয়। কিন্তু আমাকে দিয়েছে কালো কালার। পরে আমি যাচাই করে দেখি এটা নকল সেলাই মেশিন।
তিনি বলেন, আজ সকালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করলে সরাসরি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আমার সমস্যার সমাধান করেন ভোক্তা কর্মকর্তারা। আমাকে আসল বাটারফ্লাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। এবং জরিমানার ২৫ শতাংশ সাত হাজার ৫০০ টাকা বুঝিয়ে দেয়। আমি ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা এতো দ্রুত সমস্যার সমাধান করবে আমি ভাবতেও পারিনি। যারা আমার মত প্রতারিত হয়েছে বা হবে তাদের উচিত প্রতারিত হলেই প্রমাণসহ ভোক্তা অধিকারে এসে অভিযোগ করা।
যা বললেন ভোক্তা কর্মকর্তা
অভিযানের বিষয়ে আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, একজন ভোক্তা বাটারফ্লাই ব্র্যাণ্ডের সেলাই মেশিন ক্রয় করে প্রতারিত হয়ে আজকে আমাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে অভিযানে এসে নকল সেলাই মেশিন বিক্রির প্রমাণ পাই। এই প্রতিষ্ঠানটি ১০ থেকে ১২ বছর এমন অবৈধ কাযক্রম পরিচালনা করে আসছিল। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা এবং জনস্বার্থে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগকারীকে আসল বাটারফ্লাই মেশিন বুঝিয়ে দেওয়া হয় এবং জরিমানার ২৫ শতাংশ হারে সাত হাজার ৫০০ টাকা বুঝিয়ে দেই।
অন্যান্য অভিযান
এ সময় কাওরানবাজারে আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। শিশুদের খাবার বিদেশী গুড়া দুধের কৌটার মোড়কে আমদানিকারকের সিল এবং মূল্য না থাকায় তিন প্রতিষ্ঠানকে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।