ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বিশ্ববাজারে গুঁড়া দুধের দাম নামছেই। গেল এক বছরের ব্যবধানে প্রতি টনে পণ্যটির দর কমেছে ৪৬৭ ডলার। তবে পুরো উল্টো পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। বিশ্ববাজারের চেয়ে দেশে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে গুঁড়া দুধ।
সংশ্নিষ্ট খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বাজারে গেল এক বছরে দফায় দফায় বাড়ে গুঁড়া দুধের দাম। এক-দেড় মাসেই কেজিতে ২০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে বাড়ার হার আরও বেশি, সেটি কেজিতে ১৮০ থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত।
আমদানি ও বাজারজাতকারীদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও জাহাজ ভাড়া ও ডলারের উচ্চ দামের কারণে আমদানি খরচ অনেক বেড়েছে। তা ছাড়া এখন এলসি খোলাই যাচ্ছে না। সে কারণে দেশে দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।
তবে তাঁদের এসব দাবিকে অযৌক্তিক মনে করছেন ভোক্তা-সংশ্নিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, বিশ্ববাজারে যে কোনো পণ্যের দাম সামান্য চড়লেই দেশে হু হু করে বাড়ে। তবে বিশ্ববাজারে দামের পতন হলে দেশে কমানোর উদ্যোগ থাকে না। আর এতে সরকারেরও কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায় না। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা দিনের পর দিন ভোক্তাদের ঠকিয়েই যাচ্ছেন।
জানা গেছে, দেশে স্কিম (ননীযুক্ত) ও ফুলক্রিম দুই ধরনের গুঁড়া দুধ আমদানি করা হয়। বিশ্ববাজারে এ দুই দুধেরই বড় দরপতন হয়েছে। ফুলক্রিম পাউডার দুধ চাসহ সরাসরি খাদ্যপণ্যে ব্যবহার হয়। অন্যদিকে স্কিম গুঁড়া দুধ মিষ্টি, আইসক্রিম, দধি ও বেকারিপণ্যতে বেশি ব্যবহার হয়। ফুলক্রিম দুধ বাজারে আসে দু’ভাবে। আন্তর্জাতিক কোম্পানির এজেন্ট বা ডিলাররা সরাসরি পণ্য আমদানি করেন। অন্যদিকে বিমানযাত্রীদের লাগেজের মাধ্যমে আনা পণ্য সরাসরি চলে যায় বাজারে।
গুঁড়া দুধের দামের তথ্য বিশ্নেষণকারী সংস্থা গ্লোবাল ডেইরি ট্রেডের তথ্য বলছে, গত বছরের ডিসেম্বরে প্রতি টন ফুলক্রিম গুঁড়া দুধের দাম ছিল ৩ হাজার ৮৬৭ ডলার। এ বছরের শুরুতে দাম কিছুটা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে মার্চের শুরুতে তা অস্বাভাবিক বেড়ে ৪ হাজার ৭৫৭ ডলারে পৌঁছায়। এরপরই পতন হতে হতে এখন দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪০০ ডলারে। সে হিসাবে গত এক বছরে প্রতি টনে দাম কমেছে ৪৬৭ ডলার। বিশ্ববাজারে এখন প্রতি কেজি ফুলক্রিম গুঁড়া দুধের দাম পড়ছে ৩ দশমিক ৪ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৬০ টাকা (প্রতি ডলার ১০৬ টাকা দরে)।
একইভাবে কমেছে স্কিম দুধের দামও। গত এক বছরের ব্যবধানে এ মানের দুধের টনে কমেছে ৬৪৩ ডলার। সে হিসাবে প্রতি কেজি স্কিম দুধের দাম পড়ছে ৩ দশমিক ১ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়ায় প্রায় ৩২৯ টাকা।
অথচ বাংলাদেশে বিশ্ববাজারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে দুধ। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি ডানো ৯৫০ এবং ডিপ্লোমা, ফ্রেশ, মার্কস, আড়ং ৮৪০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত নভেম্বরে এ দাম কম ছিল। এ মাসের শুরুর দিকে ডানোর কেজি ৮৫০ টাকা, ডিপ্লোমা ৮০০ থেকে ৮৩০, ফ্রেশ ৭১০ ও মার্কস ৭৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। সে হিসাবে গত এক-দেড় মাসে ২০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এক বছর আগে ডানো ৬৫০ থেকে ৬৮০, ডিপ্লোমা ৬৪০ থেকে ৬৭০, ফ্রেশ ৫৬০ থেকে ৫৯০, মার্কস ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক বছরের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ডানোর দাম ৩১ শতাংশ, ডিপ্লোমার সাড়ে ২৭, ফ্রেশ সাড়ে ৪২ ও মার্কসের দাম ৩৫ শতাংশ বেড়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এত ঘন ঘন বাড়ছে যে দাম মনে রাখাই দায় হয়ে গেছে। মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের আলম স্টোরের বিক্রয়কর্মী মো. রাসেল বলেন, দু-তিন মাস পরপর গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বিশ্ববাজারে দাম অর্ধেকের বেশি কমেছে। দেশে এর প্রভাব নেই। কারণ, আমদানি করা পণ্যে দাম পর্যালোচনা করা হয় না। ব্যবসায়ীরা বিশ্ববাজারের অজুহাত বাদ দিয়ে এখন ডলারের দাম, এলসিসহ নানা বিষয়ে সামনে আনছেন। তবে যে গুঁড়া দুধ মজুত আছে, সেগুলো অনেক আগের আমদানি করা। তখন দাম এত বেশি ছিল না। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের নজরদারি বাড়ানো উচিত।