ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নজরদারির ঘাটতি ও প্রবাসে বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপেশাদারী মনোভাব এবং ও অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিটেন্স না পাঠিয়ে অসৎ মোবাইল ব্যাংকিং রিটেলার বা এজেন্ট দের মাধ্যমে হুন্ডিতে দেশে অর্থ প্রেরণের ফলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থেকে অর্থাৎ রেমিটেন্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাষ্ট্র বলে এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গ্রাহক স্বার্থ নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
আজ গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন বলেন , আমরা প্রবাসীদের সাথে যোগাযোগ করে দেখেছি তারা কেন অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠায়। গত দুই দিনে আমরা বেশ কয়েকজন প্রবাসীদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে জানতে পারি বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহে অর্থ প্রেরণের ক্ষেত্রে বহু হয়রানির শিকার হতে হয়। এক সৌদি প্রবাসী মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকে গেলে দীর্ঘ লাইন সেই সাথে টাকার উৎস জানতে নানা ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। যে কারণে স্বল্প সময়ের মধ্যে নগদ বা বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে টাকা পাঠাই। বাড়ির ঠিকানা এবং নাম্বার দিয়ে সৌদি রিয়াল জমা দিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়িতে টাকা পৌঁছে যায়। এখন ওরা কিভাবে টাকা পাঠায় সেটা আমাদের জানার বিষয় না। দেশের প্রতি প্রবাসীদের দায়িত্ববোধ থাকা সত্ত্বেও কেন তারা এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছে, এর উত্তরে প্রবাসীরা বলেন, আমরা যারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করি তারা এত উচ্চ শিক্ষিত না তারা আসলে আমাদের ডলার না পাঠিয়ে দেশে তাদের এজেন্টের মাধ্যমে ফোন দিতে টাকা পাঠাচ্ছে এটা আমরা সহজে বুঝতে পারি না। এতে খরচ কিছুটা বেশি হলেও সময় বাঁচে এবং ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নানা ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় না। তাছাড়া ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আগের চাইতে টাকা পাঠানোর খরচ অনেকটাই কমে গেছে। সে হিসেবে বৈধ চ্যানেলে খরচ বেশি পড়ে ভোগান্তিও বৃদ্ধি পায়।একই ধরনের মতামত দেন দুবাই প্রবাসী বেশ কয়েকজন।
দেশের রেমিটেন্সের প্রধান উৎস প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ। সরকার চলতি বাজেটে ঘোষণা দিয়েছিল কেউ যদি বিদেশ থেকে কালো টাকা পাঠায় তাকে প্রশ্ন করা হবে না। অথচ প্রবাসী শ্রমিক ভাইয়েরা দিনরাত পরিশ্রম করে যখন তারা মাসে এক লাখ টাকা পাঠাতে চায় তখন তাকে নানা ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে খোদ আমাদের দেশীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা। ফলে সেই অর্থ বৈধ পথে না আসায় রাষ্ট্র বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স হারাচ্ছে। গত দুইদিন আগে সিআইডি বেশ কিছু মোবাইল ব্যাংকিং এর এজেন্ট যারা ইতিমধ্যে ৭.৮ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে বলে গ্রেপ্তার করেছেন। আরো পাঁচ হাজার এজেন্টকে তারা শনাক্ত করতে পেরেছে। প্রকৃতপক্ষে দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ১০ লাখ রিটেইলার এবং এজেন্ট ব্যাংকিং এর উপর নজরদারি করলে আরও ভয়াবহ চিত্র হয়তো উঠে আসবে। এদের ওপর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের যেমন নেই নজরদারি তেমনি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানদের নেই কোন জবাবদিহিতা বা পর্যবেক্ষণ। যত্রতত্রভাবে রিটেলার ও এজেন্ট নিয়োগের ফলে প্রতিনিয়তই হচ্ছে অর্থপাচার এবং নানা ধরনের অপরাধ। এই অপরাধীদের সাথে এমএফএস প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জড়িত কিনা বা বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা দরকার।
মূলত প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্স বিদেশে থেকে যাচ্ছে আর এর মাধ্যমে মূলত অর্থ পাচার হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত হবে প্রত্যেক রিটেলার এজেন্ট , মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহে নজরদারি জোরদার করা। অর্থনৈতিক মন্দার সময় যারা দেশের রেমিটেন্স ঘাটতির সাথে জড়িত তাদের প্রত্যেককেই সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এরা অবশ্যই দেশদ্রোহী। সেই সাথে বিদেশে বাণিজ্যিক ব্যাংক সমুহের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কর্মকান্ড নজরদারিতে আনা এবং টার্গেট নির্ধারণ করে দেয়া। প্রবাসীদের অর্থ প্রেরণে হয়রানি না করার জন্য সরকারের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ।