ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) ডিলার জে কে ট্রেডার্স। বুধবার (২২ জুন) ফ্যামিলি কার্ডে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরুর প্রথমদিন। কিন্তু পণ্য বিক্রি করতে পারেনি জে কে ট্রেডার্স। কারণ ওই ওয়ার্ডে এখনো ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ করা হয়নি।
ফ্যামিলি কার্ড বিতরণের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই ওয়ার্ডের কমিশনার মামুন রশিদ শুভ্র বলেন, এখনো ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ করতে পারিনি। প্রতিটি কার্ড হাতে লিখে পূরণ করতে হচ্ছে। অনেক কাজ। অল্প সময়ে এতো কাজ শেষ করা যায়নি। তবে আজকের মধ্যেই কার্ড দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আগামীকাল থেকে পণ্য কিনতে পারবেন ক্রেতারা।
প্রায় দুই মাস বিরতির পর বুধবার থেকে ফের শুরু হয়েছে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম। তবে এবার আগের মতো ট্রাকে নয়, শুধু ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে পণ্য মিলছে। রাজধানীতে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডের নির্ধারিত টিসিবির ডিলারের দোকান অথবা স্থায়ী স্থাপনায়। কিন্তু বিক্রি শুরু হলেও অধিকাংশ ওয়ার্ড কমিশনার এখনো ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ শেষ করতে পারেননি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ফ্যামিলি কার্ডের বরাদ্দ ৬ হাজার। বুধবার পর্যন্ত সেখানে ৩ হাজার ৩১টি কার্ড প্রস্তুত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ড সচিব জাকির হোসেন। তিনি বলেন, এরই মধ্যে দেড় হাজারের মতো কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এক-চতুর্থাংশ মানুষ হাতে কার্ড পেয়েছেন।
দক্ষিণ সিটির ১ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, বরাদ্দ সাড়ে ৪ হাজারের মধ্যে কার্ড বিতরণ হয়েছে এক হাজারেরও কম। বুধবারই এ এলাকায় কার্ড দেওয়া শুরু হয়েছে। আরও প্রায় দুই হাজার কার্ড প্রস্তুত সেখানে।
সাশ্রয়ী দামে স্বল্প আয়ের মানুষের হাতে টিসিবির পণ্য তুলে দিতে আরও আগে ফ্যামিলি কার্ড বিতরণের কথা ছিল। তবে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু হলেও এখনো অধিকাংশ সুবিধাভোগী পরিবারের হাতে পৌঁছেনি ফ্যামিলি কার্ড।
এ বিষয়ে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ১৩ লাখ সুবিধাভোগী পরিবার টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড পাবে। তবে এ পর্যন্ত সারাদেশে ৬০ শতাংশ কার্ড বিতরণ হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিতরণ এর থেকে কম।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন কার্ড দিতে দেরি করায় ফ্যামিলি কার্ড বিতরণের সময় কয়েক দফা বাড়িয়ে শেষ ৩০ জুন করা হয়েছে। এর মধ্যে যেসব ওয়ার্ডে ফ্যামিলি কার্ড কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবে, তাদের বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এর আগে ঢাকায় ট্রাকসেলে পণ্য বিক্রি করতো টিসিবি। সেটি এখন বন্ধ। সংস্থাটি জানিয়েছে, বিশৃঙ্খলা এড়াতে ও প্রকৃত সুবিধাভোগী পরিবারের কাছে পণ্য পৌঁছাতে ফ্যামিলি কার্ডে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ দফায় সারাদেশে এক কোটি মানুষের কাছে সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রি করা হবে। সে অনুযায়ী এ কার্যক্রম শুরু করেছে টিসিবি, যা ফ্যামিলি কার্ড প্রস্তুত না হওয়ায় শুরুতেই বিড়ম্বনার মুখে পড়েছে।
ফ্যামিলি কার্ড প্রস্তুত কার্যক্রমের শুরুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়েছিল, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ফ্যামিলি কার্ডের তালিকা তৈরি করে সিটি করপোরেশনের সমন্বয় ও তদারকি কমিটিতে জমা দিতে হবে, যা যাচাই-বাছাই শেষে ১৫ মে’র মধ্যে ওয়ার্ড পর্যায়ে সুবিধাভোগী পরিবারের হাতে থাকার কথা ছিল। তবে সেটি বিলম্বিত হয়ে এখন ৩০ জুনে হয়েছে। সে কারণে এখন পর্যন্ত কতটি কার্ড তৈরি হয়েছে তার কোনো সঠিক তথ্য পায়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিংবা টিসিবি।
অন্যদিকে কার্ড বিতরণ নিয়ে নানা জটিলতার কথা বলছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তবে বিভিন্ন ধাপে কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতার দ্বায়ও দিচ্ছেন অনেকে। ফ্যামিলি কার্ড প্রস্তুতে কমিশনারদের দীর্ঘসূত্রতারও কথা বলা হচ্ছে। আবার কার্ডগুলো যাচাই-বাছাই চলছে দীর্ঘ সময় ধরে। সবকিছু মিলে সম্পূর্ণ কার্ড হস্তান্তর আরও সময়সাপেক্ষ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দিন বলেন, এ পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখ কার্ড বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে আঞ্চলিক অফিসে। পুরোপুরি শেষ করতে সময় লাগবে। তিনি বলেন, বেশিরভাগ কার্ড চলে গেছে। সেটা কাউন্সিলরদের মাধ্যমে সুবিধাভোগী পরিবারের কাছে পৌঁছাবে। তাতে দেরি হচ্ছে।
এদিকে এসব কার্ডগ্রহীতার চূড়ান্ত তালিকা এখনো পায়নি টিসিবি। সংস্থাটি বলছে, ফ্যামিলি কার্ড অনুযায়ী তারা ডিলারদের মধ্যে পণ্য বিতরণ করবেন। কতগুলো কার্ড তৈরি হয়েছে বা কোন ডিলারের অধীনে কতগুলো কার্ড বিতরণ হয়েছে, সে তালিকা না পেলে তারা পণ্য বিতরণ শুরু করতে পারছেন না। যেহেতু ঈদুল আজহার আগে এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য দেওয়ার কথা রয়েছে। সেজন্য সার্বিকভাবে সম্পূর্ণ না হলেও এ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।