ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: প্রায় সাড়ে ১২ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান বাকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। তিনি জানান, করোনা মহামারিতে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য তিনবার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এবং মামলার কারণে লাইসেন্স বিতরণে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৫তম বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা যায়।
এর আগে কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন অসংখ্য লোকের প্রাণহানি ঘটছে এবং তাদের পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, কিছু টাকা ঋণ নিয়ে রাইড শেয়ারিংয়ে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় দিন দিন মোটরসাইকেলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।
বিআরটিএ’র অনুমোদন তথা রেজিস্ট্রেশন ছাড়া রাইড শেয়ারিংয়ের যানবাহন যেন রাস্তায় চলাচল করতে না পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধও জানান তিনি।
সভাপতি বলেন, বিআরটিএ থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে গ্রাহকরা চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন এবং যেকোনো সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দালালের মাধ্যমে নিতে হয়। ১২ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং নবায়নযোগ্য ২৫ লাখ লাইসেন্স ছাপানোর অপেক্ষায় রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপানোর কার্যক্রম ধীর গতিতে হওয়ায় সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ফলে তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি নিরসন হওয়া দরকার। ড্রাইভিং লাইলেন্স প্রদানে বিলম্ব হওয়ায় পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভাররা গাড়ি চালাচ্ছেন। এ সুযোগে অপেশাদার ব্যক্তি গাড়ি চালানোর ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা বাড়ছে, ফলে মানুষের মৃত্যুর মিছিলও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে বলে সভায় অবহিত করেন তিনি। বলেন, যার কপি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতিকে দেওয়া হয়েছে। যা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এটি একটি উন্নত প্রযুক্তি সম্বলিত সমাধান, যা জার্মান প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত কম খরচে গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব। এতে সরকারের কোনো আর্থিক সংশ্লেষ থাকবে না। এর সঙ্গে গাড়ি এবং চালক সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যাবলি থাকবে। এছাড়াও এ প্রযুক্তিতে আইডি কার্ড, জন্ম নিবন্ধনসহ ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যসমূহ থাকবে। এটি কোনোক্রমেই নকল করা সম্ভব হবে না। এ প্রযুক্তি পরে ডিজিটাল প্রেডেনশিয়াল তৈরিতে সহায়তা করবে।
সংসদ সদস্য মো. আবু জাহির বলেন, স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সে যাবতীয় তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকলে বিদেশে চাকরি বা ভ্রমণের ক্ষেত্রে খুবই কাজে লাগবে। দ্রুত এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। শুধুমাত্র যানবাহনের অতিরিক্ত গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে না, সড়কে শৃঙ্খলার অভাবে সবকিছু প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বিদ্যমান আইন রয়েছে, যা যথাযথভাবে প্রয়োগের অভাবে কোন রাস্তায় কোন যানবাহন চলাচল করবে, সে ব্যাপারে আন্তঃসালিশি নির্ধারণের প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি ১৯৮০ সালে নির্মিত গাড়ি ঢাকা শহরে চলাচল করার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। এক্ষেত্রে গাড়ির ফিটনেস দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতকর্তা অবলম্বন করার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। ঢাকা শহরে ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধের লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাবও করেন তিনি।
এসবের জবাবে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, তবে যারা মাঠপর্যায়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন তারা যথাসময়ে লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছেন। যাদের লাইসেন্স রয়েছে, তাদের অস্থায়ীভাবে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ডিপিএম পদ্ধতি লাইসেন্স তৈরি করার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে, এক্ষেত্রে কোভিডের কারণে জার্মানি থেকে মেশিন সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে। ১২ লাখ ৪৫ হাজার লাইসেন্সের মধ্যে এরই মধ্যে ৪ লাখের প্রিন্ট সম্পন্ন হয়েছে, অবশিষ্ট আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। গ্রাহকের ভোগান্তি দূর করার লক্ষ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ ডিজিটালাইজড হয়েছে। কিন্তু ডিজিটালাইজডের বিষয়টি অনেকে অবহিত নন, এক্ষেত্রে প্রায়ই গ্রাহক দালালের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন।
কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নানের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যদের মধ্যে কমিটির সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, এনামুল হক, রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক, মো. ছলিম উদ্দীন তরফদার এবং সেখ সালাহউদ্দিন অংশ নেন।
বৈঠকে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ এবং মহাসড়কে জনগণের জীবনের নিরাপত্তা বিধান ও নিরাপদ রাখা লক্ষ্যে নসিমন, করিমন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইঞ্জিনচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করার ব্যাপারে ৮টি বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, অতিরিক্ত আইজিপির (হাইওয়ে) সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়কে পুনরায় সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপানো ও বিতরণে দীর্ঘসূত্রিতায় অসন্তোষ প্রকাশ করে এবং আবেদনকারীদের নিকট দ্রুত বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য জানানোর জন্য কমিটি সুপারিশ করে।
কমিটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নব-নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ প্রদানের সুপারিশ করে।