ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: উদ্বোধন হলো স্বপ্নের মেট্রোরেল। এর মাধ্যমে দেশের পরিবহন খাতে যুক্ত হয়েছে এ যান। প্রাথমিকভাবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে নতুন এ গণপরিবহন। তবে মেট্রোরেলে জ্বালানির পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে বিদ্যুৎ, যা দেশের রেল তথা গণপরিবহন খাতে এই প্রথম। ইতোমধ্যে স্বপ্নের এ যানের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের যাবতীয় প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে।
মেট্রোরেল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচলে প্রতিদিন ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। প্রাথমিকভাবে চালু হতে যাওয়া উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত লাগবে ৮০ মেগাওয়াট। যা সরাসরি জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা হবে।
স্বপ্নের এ যানের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনার অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-৭ এর অধীনে। জাপানের মারুবেনি কর্পোরেশন ও ভারতের লারসেন অ্যান্ড টুবরো (এলঅ্যান্ডটি) প্যাকেজটির ঠিকাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। পাওয়ার গ্রিড অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) মূল তত্ত্বাবধানে ডেসকো, ডিপিডিসি সমন্বিতভাবে মেট্রোরেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।
জানা যায়, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে উত্তরা ডিপো এবং মতিঝিল এলাকায় দুটি রিসিভিং সাব-স্টেশন থাকবে। মতিঝিল রিসিভিং সাব-স্টেশনে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) মানিকনগর গ্রিড সাব-স্টেশন থেকে ১৩২ কেভির দুটি পৃথক সার্কিট, উত্তরা রিসিভিং সাব-স্টেশনে পিজিসিবির টঙ্গী গ্রিড সাব-স্টেশন হতে ১৩২ কেভির একটি সার্কিট এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) উত্তরা গ্রিড সাব-স্টেশন থেকে ১৩২ কেভির একটি সার্কিটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। উভয় রিসিভিং সাব-স্টেশনে ব্যাকআপ হিসেবে একটি করে অতিরিক্ত ট্রান্সফর্মার থাকবে।
এছাড়া পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থিত ডেসকোর ৩৩ কেভি সাব-স্টেশন থেকে শেওড়াপাড়া মেট্রো স্টেশনে ৩৩ কেভি বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকবে। ফলে মেট্রোরেল পরিচালনায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে কোন কারণে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া না গেলে বিশেষ ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। বিশেষ পরিস্থিতিতে মেট্রোরেলের এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম (ইএসএস) থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে মেট্রোরেলকে নিকটবর্তী স্টেশনে নিয়ে আসা হবে।
কতৃপক্ষ বলছে, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশে মতিঝিল রিসিভিং সাব-স্টেশনের ভবন নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে যাবতীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি এবং ১৩২ কেভি ক্যাবল লেইং স্থাপন হয়েছে। ১৯.৮৯ কিলোমিটার ওভারহেড ক্যাটানারি সিস্টেমের ওয়্যারিংয়ের মধ্যে ১৩.৭৩ কিলোমিটারের ওয়্যারিং সম্পন্ন হয়েছে।
এ বিষয়ে মেট্রোরেলের প্রকল্প পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে মেট্রোরেল চলাচল করছে।
এছাড়াও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) প্রধান প্রকৌশলী মোরশেদ আলম খান বলেন, মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় সার্বিক দিক ভেবেই নকশা করা হয়েছে। জাতীয় গ্রিড থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকবে। গ্রিড ফেইলের মতো যদি কোনো ঘটনা ঘটে, সেক্ষেত্রেও নিজস্ব ব্যবস্থাপনা রাখা হয়েছে। অর্থাৎ মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিয়ে কোনো ঘাটতি নেই।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতুর চেয়েও বেশি ব্যায় হচ্ছে মেট্রোরেল প্রকল্পে। পদ্মা সেতুতে মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। আর মেট্রোরেল প্রকল্পের মোট খরচ দাঁড়াচ্ছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।