বড় দরপতনে শেয়ারবাজার

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ফের টানা দরপতন দেখা দিয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। সেই সঙ্গে ক্রেতা সংকটে পড়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। ক্রেতা সংকটে পড়ে দর হারাচ্ছে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে দাম কমে প্রতিদিন নতুন নতুন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম ফ্লোর প্রাইজে (সর্বনিম্ন দাম) যুক্ত হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছে ফ্লোর প্রাইজে আটকানো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা।

সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস বুধবার দাম কমে নতুন করে ফ্লোর প্রাইজে এসে ঠেকেছে ২৭ কোম্পানির শেয়ার। এতে লেনদেনে অংশ নেওয়া দুইশ এর বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইজে আটকে যায়। ফ্লোর প্রাইজে আটকে যাওয়া এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।

প্রতিদিন দিনের সর্বনিম্ন দামে বা ফ্লোর প্রাইজে এসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ শেয়ার ও ইউনিট বিক্রির আদেশ আসছে। বিপরীতে শূন্য পড়ে থাকছে ক্রয় আদেশের ঘর। ফলে যারা দিনের সর্বনিম্ন দামে বিক্রির চেষ্টা করছেন তাদের সিংহভাগ ব্যর্থ হচ্ছেন।

অবশ্য এরমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানের চিত্র ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার প্রতিদিন বড় অঙ্কের লেনদেন হচ্ছে। যা সার্বিক বাজারে লেনদেনের গতি বাড়াতে ভূমিকা পালন করছে। ফলে অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান ফ্লোর প্রাইজে আটকে থাকলেও লেনদেনের গতি বেড়েছে।

বুধবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন বেড়ে ছয়শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মাধ্যমে চার কার্যদিবস পর ডিএসইতে ছয়শ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের দেখা মিললো। লেনদেন বাড়লেও যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার পাঁচগুণ। ফলে সবকটি মূল্যসূচক কমেছে।

দিনের লেনদেন শেষে সবকটি মূল্যসূচক কমলেও এদিন লেনদেন শুরুর চিত্র ছিল ভিন্ন। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে লেনদেন শুরু হওয়ায় দ্বিতীয় মিনিটেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৭ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের প্রথম আধাঘণ্টা সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে।

এরপর ধীরে ধীরে সূচক নিচের দিকে নামতে থাকে। মূলত দুপুর ১টার পর দরপতনের মাত্রা বেড়ে যায়। শেষ দেড় ঘণ্টায় লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়। ফলে প্রধান মূল্যসূচকের বড় পতন দিয়ে শেষ হয় দিনের লেনদেন। সেই সঙ্গে বড় হয় ফ্লোরে আটকে থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৮ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২১৩ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২১৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

আর দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ২১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১০টির এবং ১৭৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম কমার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৭টির শেয়ার দাম দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ কমে ফ্লোর প্রাইজে এসে ঠেকেছে। এতে লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফ্লোরে আটকানোর সংখ্যা দাঁড়ায় ২০১টি।

তালিকাভুক্ত অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান ফ্লোর প্রাইজে আটকে থাকলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬০৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৪৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার। কোম্পানিটির ৫০ কোটি ২৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের ৪০ কোটি ৪৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৩০ কোটি ৫৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- এডিএন টেলিকম, আমরা নেটওয়ার্ক, জেনেক্স ইনফোসিস, সি পর্ল বিচ রিসোর্ট, বিডিকম অনলাইন, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং বেঙ্গল উইন্ডসর থার্মোপ্লাস্টিক।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৪০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৭০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫০টির এবং ১০৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭ কোটি ৪ লাখ টাকা।