ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মাস্টার সেল অ্যান্ড পার্চেজ অ্যাগ্রিমেন্ট বা মিলিত বিক্রয়-ক্রয় চুক্তিতে (এমএসপিএ) সই করা প্রতিষ্ঠান থেকে কোটেশন সংগ্রহ করে এ এলএমজি আমদানি করা হবে।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির সভায় এ বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন ২০২১’-এর আওতায় এমএসপিএ সই করা প্রতিষ্ঠান থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এটি ২০২৩ সালে এলএমজি আমদানির প্রথম অনুমোদন। পেট্রোবাংলা এ এলএমজি আনবে।
সূত্রটি জানিয়েছে, ২০২১ সালের ২৩ জুন অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় চার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাস্টার সেল অ্যান্ড পার্চেজ অ্যাগ্রিমেন্ট বা মিলিত বিক্রয়-ক্রয় চুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে- জাপানের ইটোচু করপোরেশন, সিঙ্গাপুরের গানভোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড, যুক্তরাজ্যের টোটাল গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড ও দুবাইয়ের শেল ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং মিডল ইস্ট লিমিটেড।
পেট্রোবাংলা খোলাবাজার থেকে সর্বশেষ এলএনজি কিনেছিল গত বছরের মে মাসে। তখন প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম পড়েছিল ২৬ ডলার ৪ সেন্ট। এরপর আর এলএমজি আমদানি করা হয়নি।
বুধবার অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এলএমজি আমদানির অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সাংবাদিকদের বলেন, আজকের ক্রয় কমিটির সভায় যে কয়টি প্রস্তাব উঠেছিল, সবগুলোরই অনুমোদন মিলেছে। এর মধ্যে এলএমজি আমদানির বিষয়টি ছিল।
জানা গেছে, এলএনজি আমদানির জন্য বেশ কিছু দেশের সঙ্গে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে। কিন্তু সরকার খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে এলএনজি আমাদিন করতে চাই। এজন্য ২০১৯ সালে খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে এমএসপিএ পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে ২০২১ সালে জাপান, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য এবং দুবাই- এর চার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাস্টার সেল অ্যান্ড পার্চেজ অ্যাগ্রিমেন্ট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে, গ্যাস সংকটের কারণে কয়েকবছর বাসাবাড়ির পাশাপাশি শিল্পেও নতুন সংযোগ বন্ধ রাখেছে সরকার। প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকট বিবেচনায় ২০১৮ সালের ২৫ এপ্রিল এলএনজি আমদানি শুরু করে সরকার। সামিট এলএনজি ও যুক্তরাষ্ট্রের এক্সেলারেট এনার্জির স্থাপন করা ভাসমান টার্মিনালের (এফএসআরইউ) মাধ্যমে আমদানিকৃত এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশে দৈনিক প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে কম-বেশি ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৪০-৪২ কোটি ঘনফুট এলএনজি থেকে রূপান্তরিত গ্যাস। তবে দেশে দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট এলএনজি রূপান্তরের সক্ষমতা রয়েছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে দেশে ২৯ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হয়েছে।
বিশ্ববাজারে গত পাঁচ মাসে এলএনজির দাম কমেছে ৭০ শতাংশের বেশি। বাজারে এখন প্রতি এমএমবিটিইউ (মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) এলএনজির দাম নেমে এসেছে প্রায় ২২ ডলারে। ব্যয়বহুল এ জ্বালানির দাম সামনে আরও কমতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।
গত জুনে সিএনজিবাদে সব শ্রেণির গ্রাহকের জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়েছিল সরকার। চলতি জানুয়ারিতে শিল্প, বিদ্যুৎ ও বাণিজ্য গ্রাহকদের জন্য ফের গ্যাসের দাম বাড়ায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।