ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: পিরোজপুরের কচা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বরিশাল থেকে পিরোজপুর হয়ে খুলনা সড়কপথের ফেরি যুগের অবসান ঘটছে। সেই সঙ্গে এই রুট হয়ে বরিশাল-খুলনার দূরত্ব কমলো প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথের।
এতে করে এখন থেকে বরিশালর বিভাগের ছয় জেলার মানুষ সল্প সময়ে এবং সহজেই খুলনা, মংলা সমুদ্রবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে সড়কপথে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে যোগাযোগ করতে পারবে।
সড়ক বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বরিশাল থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে খুলনার দূরত্ব প্রায় ১৪৭ কিলোমিটার। যেখানে বরিশাল থেকে পিরোজপুর হয়ে খুলনার দূরত্ব প্রায় ১১৭ কিলোমিটার। অর্থাৎ গোপালগঞ্জের থেকে পিরোজপুর হয়ে খুলনায় যেতে ৩০ কিলোমিটার কম পথ পাড়ি দিতে হয়। অথচ পিরোজপুরের কঁচা নদীর ফেরির কারণে খুলনায় যেতে গোপালগঞ্জের থেকে সময় বেশি লাগতো। তার ওপরে ফেরির কারণে যাত্রী ভোগান্তিরও শেষ ছিল না।
বরিশাল নগরের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মাসুক কামাল বলেন, ব্যবসায়ীক, সামাজিকসহ বিভিন্ন কারণে বরিশাল অঞ্চলের মানুষ ঢাকার পর সব থেকে বেশি যোগাযোগ রাখে খুলনার সঙ্গে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সেতু পায়রা ও মংলা সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি পায়রা থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়ক পথে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপন করলো। ফলে বরিশাল ও খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল ও পটুয়াখালীতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠবে। এছাড়া বরিশাল অঞ্চল থেকে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণে ভারতে যাতায়াতকারী মানুষদের ভোগান্তিও কমবে।
পিরোজপুর সদরের বাসিন্দা জিয়াউর রহমান বলেন, আগে ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী কিংবা সাগরকন্যা কুয়াকাটাতেও যেতে হলে খরস্রোতা কঁচা নদী পাড়ি দিতে হতো। আর বৈরি আবহাওয়া থাকলে তো এ নদী পাড় হওয়ার কথা কল্পনাই করা যেতো না। সেই সঙ্গে ফেরি বিড়াম্বনা তো ছিলোই, এখানে যানবাহন যতোই হতো একটি ফেরির বেশি চলাচল করতো না, তাই ফেরি মিস করলে কমপক্ষে ৪০ মিনিট ঘাটেই বসে থাকতে হতো। সেতুতে যান চলাচলের মধ্য দিয়ে সব বিড়ম্বনার অবসান হবে।
দুই দিন আগে ফেরিঘাটের পল্টুন থেকে নদীতে পরে এক রাজস্ব কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে কাউখালীর বেকুটিয়া এলাকার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষার্থী মনি ও সজীব বলেন, আগে কলেজে ক্লাশ করতে তাদের কচা নদী পার হতে হতো ফেরি নয়তো ট্রলারে করে। বৈরি আবহাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হয়েছেন বহুদিন। কিন্তু এ সেতু হওয়ার মধ্য দিয়ে এখন সহজেই তাদের কলেজসহ পিরোজপুর সদরে যাওয়া আসা করতে পারবেন। আর এতে খরচও কমবে বলে মনে করেন তারা।
যদিও খরচ কমার থেকেও ভোগান্তি কমাকেই বড় করে দেখছেন বরিশাল-পিরোজপুর-বাগেরহাট হয়ে খুলনা রুটে চলাচলকারী বাসের চালকরা। তাদের মতে শুধু কচা নদীর ফেরির কারণে এ রুটের চলাচলকারী যাত্রীদের মধ্যে ভোগান্তির কমতি ছিলে না। এখন থেকে সহজেই পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, বরিশাল ও ঝালকাঠি থেকে পিরোজপুর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা ও মংলার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে যাত্রীরা। সেই সঙ্গে বাগেরহাট সংলগ্ন সুন্দরবন ও সাগরকন্যা কুয়াকাটাসহ অভ্যন্তরীণ পর্যটনেরও বিকাশ ঘটবে। এতে এই সড়ক পথে যাত্রীদের নির্ভরতা বৃদ্ধি পাবে এবং পরিবহন ব্যবসার প্রসার হবে।
সবমিলিয়ে কঁচা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে খুশি হয়েছেন দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের দুই বিভাগের ১১ জেলার মানুষ।
রোববার বেলা ১১টার দিকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে পিরোজপুর সদরের কচা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু। ২০১৮ সালের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। ৯৯৮ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৩ দশমিক ৪০ মিটার প্রস্থের সেতুতে ১০টি পিয়ার ও ৯টি স্প্যান রয়েছে।
৮৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চায়না রেলওয়ে ১৭ ব্যুরো গ্রুপ লিমিটেড নামের একটি চীনা প্রতিষ্ঠান সেতুটি নির্মাণ করে। এর মধ্যে ৬৫৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা চীন সরকার এবং বাকি অর্থ বাংলাদেশ সরকারের। ৪২৯ মিটার ভায়াডাক্টসহ ডাবল লেনের সৈতুটির দৈর্ঘ্য ১৪২৭ মিটার এবং প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার।