ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: আবাসিক প্রি-পেইড মিটারের ডিমান্ড চার্জ কোন ধরনের ঘোষণা ছাড়াই ৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করেছে রাষ্ট্রীয় গ্যাস বিতরণকারী সংস্থা তিতাস। তবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) অনুমতি ছাড়া দাম বাড়ানোর অধিকার তিতাসের নেই বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির সদস্য (অর্থ ও প্রশাসন) মোহাম্মদ আবু ফারুক।
এমন ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি বলেও জানান তিনি।
একতরফা ভাবে প্রিপেইড মিটারের চার্জ বাড়ানোর বিষয়ে মঙ্গলবার ভোক্তাকণ্ঠকে বিইআরসি’র সদস্য মোহাম্মদ আবু ফারুক বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি- বিইআরসির গণশুনানির মাধ্যমে দেশে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই নির্ধারিত দামে তিতাসসহ সকল গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানকে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু প্রিপেইড মিটারের ডিমান্ড চার্জ বাড়ানোর বিষয়ে তিতাসের পক্ষ থেকে বিইআরসিকে কোন প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। যদি তারা বাড়িয়ে থাকে তাহলে একতরফা ভাবে বাড়িয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিইআরসির অনুমতি ছাড়া গ্যাসের দাম বাড়ানোর অধিকার কারও আছে বলে আমি মনে করি না৷ যাই হবে বিইআরসির মাধ্যমেই হবে। তবে এ বিষয়ে কেউ আমাদেরকে অফিসিয়ালি লিখিত ভাবে এখনো পর্যন্ত কিছুই বলেনি। যে কারণে আমরাও এ বিষয়ে কিছু জানিও না। যতটুকু জানতে পারলাম আপনাদের মতোই কারও মাধ্যমে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভোক্তাদের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে লিখিত কোন অভিযোগ করা হয়নি। ভোক্তারা এ বিষয়ে অভিযোগ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযোগ করলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বা এ বিষয়ে আইন কি বলছে- এমন প্রশ্নে মোহাম্মদ আবু ফারুক বলেন, ‘আমরা আমাদের (বিইআরসি’র আইন) আইনে চলে যাব। কারণ আমরা তো তাদেরকে গ্র্যাচুয়িটি (সেবার স্বীকৃতি) দিয়েছি। এখন রেভিনিউ ক্যালকুলেশনে (রাজস্ব আদায়) যখন গ্র্যাচুয়িটি দেই, তখন সব খরচও তাদের দেওয়া হয়। আবার তাদের সম্পূর্ণ আয় কতো হবে- সেটাও আমরা দেখি।’
তিনি বলেন, ‘তিতাসের পক্ষ থেকে এভাবে যদি ডিমান্ড চার্জ বাড়ানো হয়। তাহলে তাদের আয়ও বেড়ে যাবে। তাই এ বিষয়ে তাদের জবাবদিহিতা করতে হবে- তারা কোন আইনের বলে করেছে। এখানে কোন অথরিটি (কর্তৃপক্ষ) দাম বাড়িয়েছে- সেই বিষয়েও জানবো। তবে যেহেতু এ বিষয়ে আমরা এখনো কিছু জানিনা, তাই এখনই কোন মন্তব্য করাও ঠিক হবে না।’
ভোক্তা যদি কোন অভিযোগ করেন তাহলে বিইআরসি’র পক্ষ থেকে তিতাসকে দাম কমানোর বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেবে কী না- এমন প্রশ্নে সংস্থাটির এই সদস্য বলেন, ‘এমন ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। বিইআরসি’র অনুমতি ছাড়া ডিমান্ড চার্জ বাড়ানোর বিষয়টি এবারই প্রথম। তাই এই বিষয়ে আইনে কি নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে- তা না দেখে সে বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
তবে প্রিপেইড মিটারের মাসিক চার্জ বাড়ানোর বিষয়ে কোন ধরনের নোটিশ দেওয়া হয়েছি কি না?- এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বিষয়ে পত্রিকায় দেওয়া হয়নি, নোটিশ দেওয়া হয়েছে কি না জানি না। তবে, মিটার গ্রাহকদের মেসেজ দেওয়ার কথা ছিল, দেওয়া হয়েছে কি না জানা নেই।’
গত সোমবার (২৫ জুলাই) তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশিদ মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতিটি মিটার ২৫ হাজার টাকা দিয়ে কেনা। একটা মিটারের মেয়াদ ১০ বছর। যখন মিটারগুলো আনা হয়, তখন গ্রাহকদের সুবিধার্থে ৬০ টাকা করে চার্জ নির্ধারণ হয়েছিল। কিন্তু ৬০ টাকা করে প্রতি মাসে নিলে মিটার চার্জ উঠতে উঠতে তো ৩০-৩৫ বছর লেগে যাবে। কিন্তু ১০ বছর পর যদি মিটার নষ্ট হয়ে যায়, তার দায়ভার কার? এ জন্য ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।’
রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাড়িতে প্রি-পেইড মিটারের ডিমান্ড চার্জের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জুলাই মাসে মিটার চার্জ ১০০ টাকা রাখা হয়েছে। তবে জুলাই থেকে যে বেশি নেওয়া হবে- সে বিষয়ে আগে থেকে তারা কিছুই জানতেন না।