জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের চার মূলনীতি হচ্ছে- বৈষম্যহীনতা, সর্বোত্তম স্বার্থ, বেঁচে থাকা ও বিকাশ এবং শিশুদের অংশগ্রহণ। এক্ষেত্রে চার মূলনীতির সঙ্গে শিশু অধিকারের বাস্তব চিত্রের ফারাক পর্বতসম। এই ঘোষণা অনুযায়ী জন্মসূত্র কিংবা অন্য কোনো মর্যাদা নির্বিশেষে প্রতিটি শিশু কোনো ধরনের বৈষম্য ছাড়াই সব ধরনের অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করবে। শিশুর জানার কথা নয় তার অধিকার নীতিতে কী আছে। যাদের দায়িত্ব তারা কতটুকুই বা তা পালন করছেন? শিশু বেড়ে ওঠে তার পারিবারিক গণ্ডি বেয়ে। পর্যায়ক্রমে সে পরিচিত হতে থাকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রকৃতি- পরিবেশের সঙ্গে। এই শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্র- বাসস্থান নিশ্চিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত শিশুর অভিভাবকরা। কিন্তু অপরিকল্পিত পরিবার, অসচেতন সমাজ, শিক্ষার অভাব, ধর্মান্ধতা এবং ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান সাধ্যাতীত বাস্তবায়ন সম্ভব হলেও শিশুর অংশগ্রহণের অধিকার নানা জটিলতায় অবরুদ্ধ। জাতির ভিত, পরিচ্ছন্ন মানবসম্পদ গড়ে তোলার প্রথম সোপান পারিবারিক শিক্ষা। পরিবার থেকে একজন শিশু যা শেখে, তার কোনো ক্ষয় নেই। হতে পারে তা সুশিক্ষা বা কুশিক্ষা। বাড়ন্ত শিক্ষার মূল ভিত্তি নিশ্চিত করে বিদ্যালয় আঙিনা। যে অঙ্গন ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মানবসম্পদ গঠনে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখে। অথচ একটি শিশুর অধিকার এই দুই জায়গাতেই খর্ব হচ্ছে।
এটা প্রমাণিত যে, শিশুরা মিডিয়ার ভোক্তা কিন্তু উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সব সময় তাদের সক্রিয় ভূমিকা থাকেনা। মূলধারার মিডিয়ায় শিশুদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে, মিডিয়া প্রোগ্রাম তৈরিতে তাদেরকে প্রভাবিত করতে হবে এবং এতে করে মিডিয়াতে তাদের কথা বলার সুযোগ বাড়বে। পাশাপাশি ন্যায়সঙ্গত সামাজিক উন্নয়নে তাদের খুঁটি শক্তিশালী হবে।সে অনুসারেই শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বছরে একাধিকবার বিভিন্ন নামে শিশু দিবস পালন করা হয়ে থাকে।
১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। জাতীয়ভাবে দিনটিতে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার কারণেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম মেয়াদে (১৯৯৬-২০০১) খ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে ১৭ মার্চকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করে। প্রথমে দিনটিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা না করলেও পরবর্তীতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।আর এভাবেই আশা করা যায় ভোক্তা হিসেবে শিশুরা আমাদের দেশে বঞ্চিত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে, যদিও তার জন্যেও আমাদের আরো পদক্ষেপ নিতে হবে এবং কার্যকর করতে হবে।