ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। প্রজ্ঞাপনে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
সোমবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ সিদ্ধান্ত ০১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশে বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম। গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিটে গড়ে দাম বাড়ানো হয়েছে পাঁচ শতাংশ, পাইকারিতে বেড়েছে আট শতাংশ।
গত ১৪ বছরে এ নিয়ে ১১ বারের মতো গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ল বিদ্যুতের দাম।
এর আগে চলতি মাসেই গত ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ১৯ দিনের মাথায় আবারও দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ‘এটা নতুন করে বাড়ানো নয়, আগের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনটি সংশোধন করে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।’
জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩ (২০০৩ সনের ১৩নং আইন) এর ধারা অনুযায়ী ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে জনস্বার্থে ১২ জানুয়ারি, ২০২৩ তারিখে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে নতুন দাম নির্ধারণ করেছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এবার লাইফ লাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি, ১১ দশমিক ৬৮ ভাগ। এছাড়াও অন্য গ্রাহকদের গড়ে বেড়েছে ৫ ভাগ হারে। আর পাইকারিতে বিভিন্ন ভোল্টেজ লেভেলে ৬ দশমিক ৫৭ থেকে ৭ দশমিক ৩৬ ভাগ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এবার সব গ্রাহকের বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়নি।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী লাইফলাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ১৪ পয়সা, শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৬২ পয়সা এবং ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা ১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৩১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৬২ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের জন্য ৬ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৯৯ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের জন্য ১০ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বেড়ে ১০ টাকা ৯৬ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ১২ টাকা ০৩ পয়সা থেকে বেড়ে ১২ টাকা ৬৩ পয়সা করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে পাইকারি দামের বিষয়ে বলা হয়, ‘সরকার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩ অনুযায়ী ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে জনস্বার্থে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাবিউবো) কর্তৃক বিভিন্ন বিতরণ সংস্থা বা কোম্পানিকে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) মূল্যহার পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
পাইকারি বিদ্যুতের দাম
এদিকে পাইকারি বিদ্যুতের দামও নির্বাহী আদেশে বাড়িয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এর আগে গতবছরের ২১ নভেম্বর পাইকারি বিদ্যুতের দাম ২০ শতাংশ বাড়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি। সে সময় বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানো হয়। ইউনিট প্রতি ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। যা বিল মাস ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। দুই মাসের ব্যবধানে আবারও বাড়ানো হয়েছে পাইকারি বিদ্যুতের দাম। যা বিল মাস ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। তবে এবার এই দাম শুধু পিডিবি যাদের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করে তাদের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) যেসব কোম্পানির কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করে তাদের পাইকারি দাম এখন থেকে আলাদা হবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
পাইকারি বিদ্যুতের দামের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পাইকারিতে বিভিন্ন ভোল্টেজ লেভেলে ৬ দশমিক ৫৭ থেকে ৭ দশমিক ৩৬ ভাগ দাম বাড়ানো হয়েছে। ২৩০ কেভি ভোল্টেজ লেভেলে ৭ দশমিক ৬০৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এখন প্রতি ইউনিটে সেই দাম ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ৮ দশমিক ১০৪০ টাকা করা হয়েছে। এতে দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৭ ভাগ।
১৩২ কেভির দাম
১৩২ কেভিতেও দাম বেড়েছে প্রতি ইউনিটে ৫০ পয়সা। আগে ১৩২ কেভির গ্রাহকের প্রতি ইউনিটের দাম ছিল ৭ দশমিক ৬৩৩৫ টাকা। এখন যা বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ১৩৩৫ টাকা। শতকরা বৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৫৫ ভাগ।
৩৩ কেভির দাম
৩৩ কেভির বিদ্যুতের দাম আগে ছিল ৬ দশমিক ৭ হাজার ৮৯৫ টাকা। এখন যা বেড়ে হলো ৭ দশমিক ২৮৯৫ টাকা। এই ধাপেও ৫০ পয়সা দাম বাড়ানো হয়েছে। এখানে শতকরা বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৩৬ ভাগ।