ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাট দেখা দেওয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং কুমিল্লার আংশিক এলাকা বিদ্যুৎহীন ছিল দীর্ঘ সময়। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে চরম ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। এতে জরুরি কাজ চালিয়ে নিতে জেনারেটরের ওপর নির্ভর করতে হয় গ্রাহকদের। এ কারণে পেট্রোল পাম্পগুলোতেও ভিড় বেড়ে যায়।
মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৫ মিনিটে বিদ্যুতের এ বিভ্রাট দেখা দেওয়ার পর থেকেই ঢাকার বিভিন্ন পাম্পে এমন চিত্র দেখা যায়। তবে বিদ্যুৎ বিভ্রাট কেটে গেলেও আজও (বুধবার) পাম্পগুলোতে জেনারেটরের জন্য ডিজেল ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।
ক্রেতারা বলছেন, ধারাবাহিক লোডশেডিং থাকার কারণে এখন জেনারেটরই ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকলে অফিস বা বাসার জেনারেটর তো চালাতে হবে। এ জন্য তেল কিনতে হচ্ছে।
বুধবার দুপুরে মতিঝিল এলাকার পূবালী ফিলিং স্টেশনে ডিজেল কিনতে এসেছেন মালিবাগ এলাকার রাকিব। ভোক্তাকণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘তিনি যে বাড়িতে কাজ করেন, সেই ১৬ তলার বিল্ডিংটিতে এক ঘন্টা জেনারেটর চালাতে প্রায় ১০০ লিটার ডিজেল লাগে। গতরাতের লোডশেডিং এর কারণে ডিজেলের খোঁজে চারটি রিকশা নিয়ে চার দিকে যেতে হয়েছে। কিন্তু পাম্পগুলোতে ডিজেল পাওয়া যাচ্ছিল না। ক্রেতাদের চাপে অনেক পাম্পে ডিজেল শেষ হয়ে গিয়েছিলো। আজ এসে ১০০ লিটার ডিজেল নিলাম।’
দৈনিক বাংলার মোড় এলাকার বিনিময় ফিলিং স্টেশনের সামনে কথা হয় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মোহিউদ্দিনের সঙ্গে। ভোক্তাকণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘এ পাম্পে ডিজেল নিতে এসেছিলাম, কিন্তু পেলাম না। তাই অন্য পাম্পে যাচ্ছি৷’
এ বিষয়ে বিনিময় ফিলিং স্টেশন থেকে বলা হয়, গত (মঙ্গলবার) রাতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ডিজেলের চাহিদা বেশি ছিল। রাতেই পাম্পের ডিজেল শেষ হয়ে গেছে। যে কারণে এখন কাউকেই ডিজেল দিতে পারছি না।’
মঙ্গলবার রাতে মৎস ভবন মোড়ের রমনা ফিলিং স্টেশন থেকে জানানো হয়, লোডশেডিং এর কারণে সন্ধ্যার মধ্যেই তাদের পাম্পের ডিজেল শেষ হয়ে গেছে। স্বাভাবিক সময়ের হিসাবে এ ডিজেলে বুধবারের চাহিদা পূরণ করাও সম্ভব হতো। পাম্পে ডিজেল না পেয়ে অনেকেই খালি বোতল নিয়েই ফিরে গেছেন। ডিজেল আসার পর বিক্রি করতে পারবো।
পূবালী ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম মঙ্গলবার রাত ৭টার দিকে ভোক্তাকণ্ঠকে বলেন, ‘লোডশেডিং এর কারণে ডিজেলের বিক্রি বেড়েছে। মেশিন চালু করার পর আর বন্ধ করারও সুযোগ হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে- জেনারেটরের জন্য প্রায় নয় থেকে সাড়ে ১০ হাজার লিটার ডিজেল বিক্রি হবে।’
বুধবার পূবালী ফিলিং স্টেশন থেকে জানানো হয়, রাতে ডিজেল শেষ হয়ে গিয়েছিলো, পরে আবারও আনা হয়েছে। মঙ্গলবার ২০ হাজার লিটারের মতো ডিজেল বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজার লিটারের মতো ডিজেল খোলা বোতলে (জেনারেটরের জন্য) গেছে।
এদিকে, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সাড়ে তিন ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, মানিকগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হয়। এ সময় ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জের আংশিক এলাকায় সরবরাহ চালু হয়।
রাত ৮টার দিকে রাজধানীর মিরপুর, মগবাজার, মাদারটেক, রামপুরা, গুলশান, উলন, বসুন্ধরা, ধানমন্ডি, আফতাবনগর, বনশ্রী, ধানমন্ডি (আংশিক), আদাবর, শের-ই-বাংলা নগর, তেজগাঁও, মিন্টু রোড, মতিঝিল, শ্যামপুর, পাগলা, পোস্তগোলাসহ বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ঠিক হতে থাকে। পরে রাজধানীর বাকি এলাকাগুলোতে স্বাভাবিক হয়।
এর আগে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন রাত ৭টার দিকে ভোক্তাকণ্ঠকে বলেন, জাতীয় গ্রিডের সমস্যার কারণে সাময়িক এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য গ্রাহকদের নিকট দুঃখ প্রকাশ করে রাতে বার বার বিদ্যুৎ পরিস্থিতির সর্বশেষ পরিবেশ জানান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের ০১ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ন্যাশনাল গ্রিড ফেইল করে সারাদেশে বিদ্যুৎ চলে যায়। যা সম্পূর্ণ চালু করতে প্রায় ১২ ঘন্টা লেগে গিয়েছিল।