পাইকারি বাজারে চালের দাম কমলেও খুচরায় প্রভাব পড়েনি

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: আমদানিতে শুল্ক কমানোয় চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে চালের দাম কমেছে। একমাসের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির বস্তায় মানভেদে ২০০-৪০০ টাকা। তবে খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। উল্টো ক্ষেত্রবিশেষে খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে। ফলে বন্দরনগরীর চালের বাজারে চলছে অস্থিরতা।

চাক্তাই ও পাহাড়তলী বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের নানান উদ্যোগে চালের দাম কমছে। আমদানিতে শুল্ক কমেছে। বাজারে ভর্তুকিমূল্যে চাল বিক্রি হচ্ছে। এতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে খুচরা ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার লোভের কারণে সাধারণ ভোক্তারা চালের দাম কমার সুফল পাচ্ছেন না।

চাক্তাই পাইকারি বাজারের বড় ব্যবসায়ী ও চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম। তিনি  বলেন, সরকারের নানান পদক্ষেপে পাইকারি বাজারে চালের দাম এখন সহনীয় পর্যায়ে। মাসের ব্যবধানে দাম অনেক কমেছে।

ওমর আজম বলেন, সম্প্রতি ভারত চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক বাড়িয়ে দেয়। এতে দেশের বাজারে চালের বাজার কিছুটা গরম হয়। তবে এখন আবারো কমে গেছে। গত এক সপ্তাহে চাক্তাইয়ের বাজারে ক্রেতা নেই। চালের বেচাকেনাও তেমন হয়নি।

তিনি আরও বলেন, বাজারে আতপ চালের যোগানের ওপর দাম কম-বেশি হয়। এখন ভারত থেকে যেসব চাল আসছে, তার বেশিরভাগই আতপ। বোরো মৌসুম মাত্রই শেষ হয়েছে। এ কারণে বাজারে চালের দাম পড়তির দিকে।

পাহাড়তলী বাজারের চাল আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি জাফর উদ্দিন বলেন, বাজারে চালের দাম নিম্নমুখী। বিশেষ করে দুর্গাপূজার বরাদ্দের চালগুলো ঘুরেফিরে বাজারে আসছে। আবার খাদ্য বিভাগ ওএমএস চালু করেছে। ভর্তুকিমূল্যে সরকার পাঁচ কেজি করে চাল দিচ্ছে। এসব কারণে চালের দাম কমতে শুরু করেছে।

চাক্তাই বাজারের মেসার্স কুলসুমা ট্রেডিংয়ের পরিচালক জাহেদুল ইসলাম শাওন জানান, বাজারে ভারতীয় আতপ চালের দাম একমাস আগে বিক্রি হচ্ছিল দুই হাজার ৩৫০ টাকায় (৫০ কেজির বস্তা)। গত ১০ দিন আগে একই চাল দুই হাজার ১৫০ টাকায় নামে। তবে বর্তমানে দুই হাজার ২৫০ থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

একই ভাবে স্বর্ণাসিদ্ধ (স্বর্ণা-৫) একমাস আগেও দুই হাজার ৮৫০ টাকা থেকে দুই হাজার ৯০০ টাকা ছিল। এখন একই চাল দুই হাজার ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের মধ্যে বেতি-২৯ একমাস আগে ছিল দুই হাজার ৫০০ টাকা। এখন সেই চাল দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেতি-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৫০ কেজির বস্তা দুই হাজার ৬০০ টাকায়। অন্যদিকে ফাইভ স্টার কাটারি বিক্রি হচ্ছে ২৫ কেজির বস্তা এক হাজার ৫০০ টাকা করে।

চাক্তাই এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ত্রিদিপ বাবু বলেন, ১০ দিন আগেও ২৫ কেজির নাজিরশাইল এক হাজার ৭৫০ টাকা ছিল। এখন সেই নাজিরশাইল এক হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যাদের গুদামে এ চাল ছিল, তারা অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অথচ খুচরা বাজারে এ চাল এক হাজার ৯০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, শনিবার দুপুরে চাক্তাই পাইকারি বাজার ছাড়াও মোমিন রোড ও কাজীর দেউরি এলাকার কয়েকটি মুদিদোকান ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারের উল্টো চিত্র। মোমিন রোডের শরীফ স্টোরে ফাইভ স্টার কাটারি বিক্রি হচ্ছে ২৫ কেজির বস্তা এক হাজার ৭৫০ টাকায়। চাবি কাটারি বিক্রি হচ্ছে ২৫ কেজির বস্তা দুই হাজার টাকায়। সেখানে বেতি-২৮ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৮০ টাকায়। তবে ৫০ কেজির বস্তা কিনলে দুই হাজার ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে দোকানটিতে।

অন্যদিকে কাজীর দেউরি এলাকার ফাইভ স্টার কাটারি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮৫০ টাকায়। কাজির দেউরি বাজারের মুদি দোকানি দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাজারে চালের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। ৫০ কেজির বস্তায় ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

খাদ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৪৭৯ টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারন ইউনিট (এফপিএমইউ) সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ৯ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। যার সব বেসরকারিভাবে। সর্বশেষ ২১ সেপ্টেম্বর সরকারিভাবে খাদ্যশস্যের মজুত রয়েছে ১৭ লাখ ৯২ হাজার টন। এরমধ্যে গমের মজুত রয়েছে এক লাখ ২১ হাজার টন। চালের মজুত রয়েছে ১৬ লাখ ৭১ হাজার টন।

জানা গেছে, বোরোর ভরা মৌসুমেও চালের দামের ঊর্ধ্বগতি থামাতে সরকার ব্যবসায়ীদের আমদানিতে উৎসাহ দেয়। গত ২২ জুন এক আদেশে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার এবং নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছিল। এরপরেও চালের দামে প্রভাব পড়েনি। এজন্য ২৮ আগস্ট নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরও কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আতপ ও সেদ্ধ চাল আমদানিতে এ সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা।

পাইকারিতে কমলেও খুচরাতে উল্টো দাম বাড়ার বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, চারদিকে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। সরকার এসব সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছেন না। চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে আনা হয়েছে। এতে বড় আমদানিকারক, মিলাররা সুফল ভোগ করছে। কিন্তু সাধারণ ভোক্তাদের বেশি দামেই চাল কিনতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পাইকারি বাজারে চালের দাম কমলেও খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়ছে না। এগুলো মনিটরিং করার কোনো অথরিটি নেই। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুচরা বাজারগুলোতে লোকদেখানো অভিযান হয়। তারা কখনো পাইকারির সঙ্গে খুচরা বাজারের সম্পর্ক খতিয়ে দেখেন না। যে কারণে পাইকারিতে কমলেও খুচরা বাজারে দাম কমছে না।