ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: খাদ্যে ভেজাল রোধ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে রাজধানীসহ সারাদেশের জেলা শহরে সরব অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা, মনিটরিং, প্রশিক্ষণ, খাদ্যদ্রব্যের স্বাস্থ্যবিধি পরীক্ষা, সচেতনতামূলক মাইকিংয়ের পাশাপাশি লিফলেট, পোস্টার ও বই বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে এই সংস্থা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সারাদেশে ১৪৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সরকারের এই সংস্থা। এতে ১১৭টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের মাধ্যমে এক কোটি ৩৬ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক কার্যক্রম বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়ের প্রশিক্ষণ কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবছর রমজান উপলক্ষে গত ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ৯টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়েছে।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার জানান, চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত সারাদেশে মোট ১৪৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। অনিয়ম পাওয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মোট ১১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
পবিত্র রমজান মাসে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে চেয়ারম্যান বলেন, রমজানে ইফতার বিক্রেতাদের সচেতন করতে আমরা রাজধানীর চকবাজার, তালতলা, আগারগাঁও, বেইলি রোড ও মোহাম্মদপুরে পাঁচটি মনিটরিং বুথ স্থাপন করেছি।
তিনি বলেন, এসব বুথ থেকে সচেতনতামূলক মাইকিংয়ের পাশাপাশি লিফলেট, পোস্টার ও বই বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। এছাড়া, র্যাপিড টেস্ট কিট ও হাইজিন কিটের মাধ্যমে নিয়মিত খাদ্যদ্রব্যের স্বাস্থ্যবিধি পরীক্ষা করা হচ্ছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা ও দুজন কর্মচারী সার্বক্ষণিক বুথে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি আরও বলেন, ইফতার প্রস্তুতের সময় কী কী সতর্কতা অনুশীলন করতে হবে এবং রান্নার সময় কীভাবে খাবার নিরাপদ রাখতে হবে, সে বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে মাসজুড়ে নিরাপদ রান্না, নিরাপদ খাদ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হচ্ছে। ইফতারের আগে মোনাজাতের সময় মাওলানা সাহেব যাতে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক বার্তা দেন, সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আরও বলেন, মানুষের মধ্যে নিরাপদ খাদ্যবিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে আমাদের মনিটরিং কার্যক্রমগুলোতে সেলিব্রিটিদের সংযুক্ত করা হচ্ছে। রমজানের শুরুতে রাজধানীর চকবাজার ও বেইলি রোডে চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদকে নিয়ে এবং রমজানের মাঝামাঝি সময়ে পান্থপথ এলাকায় জনপ্রিয় অভিনেতা ও চিকিৎসক ডা. এজাজকে নিয়ে মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বিক্রেতারা যাতে একই তেল দিয়ে বহুবার খাবার তৈরি করতে না পারেন, সেজন্য মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। মুনজের ও বায়োটেক নামের দুটি প্রতিষ্ঠান অর্থের বিনিময়ে এসব পোড়া তেল কিনে নিচ্ছে। গত মার্চের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মুনজের সংগ্রহ করেছে ৮৫ টন পোড়া তেল এবং বায়োটেক সংগ্রহ করেছে ৪০ টন।
রাজধানীতে পাঁচটি বুথের পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা সারা দেশে মনিটরিং ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার।
পথে ফেরি করে খাবার বিক্রি করা ৫০০ জনকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, জানিয়ে তিনি বলেন, রমজানের আগে চকবাজার, আগারগাঁও, বেইলি রোড ও মিরপুর এলাকার ৫০০ জন পথখাবার বিক্রেতাকে চারটি কর্মশালার মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য তৈরি ও বিক্রির বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের হাতে সনদ তুলে দেওয়া হয়। এছাড়া, দেশের প্রতিটি জেলায় ৩০ জন করে মোট ২ হাজার ৫০০ জন খাদ্যকর্মীদের নিরাপদ ইফতার প্রস্তুত ও পরিবেশন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে দেশের ৩২৩টি উপজেলায় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে সেমিনার, গৃহিণীদের নিয়ে ১২৮টি উঠান বৈঠক, ৩০০টি স্কুলে সেমিনার, তিনটি এফএম রেডিওতে বার্তা প্রদান ও মাইকিং করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আব্দুল কাইউম সরকার।
২০২৩ সালের প্রাথমিক পর্যায়ের বিজ্ঞান বইতে নিরাপদ খাদ্যবিষয়ক কনটেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ের বইয়েও এসব কনটেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যাতে স্কুল থেকেই শিক্ষার্থীরা নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে সচেতন হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন—চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সচিব আব্দুন নাসের খান, সদস্য মো. রেজাউল করিম, মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ, অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম প্রমুখ।
আরইউ