নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নে ক্যাবের কর্মশালা

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ক্যাব) জেলা প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালায় দেশের জ্বালানি খাতের জন্যে নেওয়া চলমান প্রদক্ষেপগুলো মোটেও সুখকর নয় বলে জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা এ সংগঠনটি। 

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে উপেক্ষা করে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার চলমান রাখা এবং কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলোর মেয়াদ বার-বার বাড়িয়ে সচল রাখাকেই প্রধান কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে ক্যাবের এ গবেষণায়। 

শনিবার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে ‘জ্বালানি রুপান্তর ও বিদ্যুতের মূল্যহার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রশিক্ষণ কর্মশলার আয়োজন করা হয় ক্যাবের জেলা প্রতিনিধিদের জন্য। কর্মশালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে পৃথক মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করারও আহবান জানানো হয়।

 কর্মশালায় ৩টি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। প্রবন্ধ তিনটি হলো- বিদ্যুৎ ও শক্তি সরবরাহ এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রচারে খরচ যৌক্তিককরণ (Costs Rationalization in Power & Energy Supply and Renewable Energy Promotion), শক্তি ন্যায়বিচার: ভোক্তাদের শক্তি এবং পরিবেশের অধিকারের আইনি ম্যাপিং (Energy Justice: Legal Mapping of Consumers’ Right to Energy and Environment) এবং ভোক্তাদের শক্তির অধিকার রক্ষা করার জন্য শক্তি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা (To protect Consumers Energy Right Ensuring Energy Justice: CAB Experience)।

প্রবন্ধ ৩টির উপর আলোচনা করেন, প্রকৌশলী এইচ. এম. জি সরোয়ার, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ এবং ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

আলোচনা বক্তব্যে এইচ এম. জি. সরোয়ার বলেন, দেশের  দুটি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র কয়লায় চালানো হচ্ছে। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানি (তেল,গ্যাস, কয়লা) ব্যবহারে আমরা কমফোর্টেবল নয়, এটা আমাদের জন্যে চ্যালেঞ্জিং। গত ১০ বছরে ভোক্তা পর্যায়ে ১২ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি এক মাসে (নির্বাহী আদেশে) ৫ শতাংশ করে ২ বার দাম বাড়ানো হয়েছে।

তিনি আরও  বলেন, বিদ্যুতের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। যার কারণে রাজস্ব ঘাটতিও বাড়ছে। এর জন্যে বড় ধরনের সাবসিডিয়ারি তৈরি হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন খরচ কমিয়ে নিয়ে আসতে পেরেছে। কিন্তু আমাদের দেশে তা হচ্ছে না। খরচ বেশি হওয়ার কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারও সুফল পাচ্ছে না।

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, দেশের জ্বালানি এবং খনিজসম্পদের মালিক রাষ্ট্র। আর রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। তাই খনিজ সম্পদের মালিকও জনগণ। সুতরাং এ সম্পদের উপর জনগণের অধিকার রয়েছে। কিন্তু জনগণ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর এই অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছে ক্যাব।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠায় এখন পর্যন্ত ক্যাব যে কয়টা আইনি লড়াই করেছে, তার সব কয়টাতেই সফলতা পেয়েছে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে এখন যে লড়াই চলছে, আশা করি এটাতেও জিতবে। কিন্তু এর জন্যে আপনাদের সকলকে সোচ্চার হতে হবে। এটা গণ দাবিতে পরিনত করতে হবে।

কর্মশালায় দেশের সকল জেলা থেকে আগত প্রতিনিধিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ক্যাবের সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম. শামসুল আলম।

এসময়ে এক প্রশ্নের জবাবে শামসুল আলম বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের আলোচকেরা গবেষণা করে দেখিয়েছেন যে, অনেক দেশেই জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন খরচ কম পড়ছে। কিন্তু আমাদের দেশে সরকারের সদিচ্ছার অভাবে সেই উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। অযৌক্তিক এবং এ লুন্ঠনমূলক ব্যায়ের কারণে ভোক্তা তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভোক্তা স্বার্থে আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি। আপনাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। 

এর আগে স্বাগত বক্তব্যে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, গবেষণাধর্মী এ প্রবন্ধ ৩টি থেকে ক্যাব বুঝতে পেরেছে- চলমান জ্বালানি নীতি মোটেও সুখকর নয়। চলমান জ্বালানি রূপান্তরে প্রাথমিক জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহে অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয়বৃদ্ধিতে একদিকে মূলাহার ও ভতুর্কি যেমন বেড়েছে, তেমনি ভতুর্কি কমাতে অন্যায় ও অযৌক্তিক সরবরাহ বায় নিয়ন্ত্রণ না করে পুনরায় মূল্যহার বৃদ্ধি করা হয়েছে। এবং তারই প্রভাবে জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি ভোক্তাদের জন্য এখন রীতিমত অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি করেছে। প্রাথমিক জ্বালানী ও বিদ্যুৎ বাজার এখন প্রতিযোগিতাবিহীন, এবং ওলিগোপলির শিকার। ফলে নবায়নযোগ্য জ্বালানী উন্নয়ন স্বার্থসংঘাত তথা অসমতার শিকার। এই অবস্থায় জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা উভয়ই বজায় রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চলমান জ্বালানী রূপান্তর মূল্যায়নক্রমে ক্যাব বাংলাদেশ জ্বালানী রূপান্তর নীতি-২০২২ প্রস্তাব করেছে।

তিনি আরও বলেন,  জ্বালানি অধিকার ও জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য ক্যাব প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জ্বালানী রূপান্তর – ২০২২ বাস্তবায়িত হতে হবে। সে-জন্য ভোক্তা আন্দোলনের বিকল্প নেই। এ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আজকের এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের প্রতি আমার একান্ত অনুরোধ রইল, আজ এখন, এখান থেকে আপনারা আন্দোলন শুরু করুন এবং সে আন্দোলন গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দিন। ভোক্তাদের একতাবদ্ধ করুণ। তাহলেই আন্দোলন সফল হবে। এবং জ্বালানী ও পরিবেশ সুরক্ষার অধিকার ও জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত হবে ইনশাল্লাহ।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গঠিত ক্যাব দেশের ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে সামাজিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনস্বার্থে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও ভোক্তার  প্রয়োজনে সরকারের বিভিন্ন অধিদপ্তর এবং বিভাগের আইন সংশোধনেও ভূমিকা পালন করছে।