।। কৃষি ডেস্ক ।।
হুমকির মুখে পড়েছে ভূট্টাসহ দেশের ৮০টি ফসল উৎপাদন কার্যক্রম। কৃষকরা আতঙ্কিত। স্থানীয়ভাবে ডাকা কাটুই বা ‘ফল আর্মিওয়ার্ম’ নামক পোকায় আক্রান্ত হচ্ছে ফসল। কাজে লাগেনি আগাম নানা ব্যবস্থা ও সতর্কবার্তা। বাংলাদেশে ঠেকানো যায়নি আমেরিকা মহাদেশের মারাত্মক ক্ষতিকর এই পোকা। ইতোমধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক জেলার ভূট্টা ও বাধা কপিতে ভয়ংকর এই পোকার উপস্থিতি দেখা গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় গঠন করা হচ্ছে টাক্সফোর্স।
জানা গেছে, আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছিল বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারী)। সংস্থার মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. দেবাশীষ সরকার বাংলাদেশে বিধ্বংসী এই পোকার আক্রমণের আশঙ্কার কথা জানিয়ে সার্বক্ষণিক নিবিড় পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। ফল আর্মিওয়ার্ম বা কাটুই পোকা বিশ্বব্যাপী একটি মারাত্মক ক্ষতিকারক এবং বিধ্বংসী পোকা হিসেবে পরিচিত। এটি মূলত আমেরিকা মহাদেশেই দেখা যায়। তবে এরা দ্রুত অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে।
২০১৬ সালে এটির প্রথম আক্রমণ আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৭টি দেশে পরিলক্ষিত হয় এবং ২০১৭ সালের প্রথম দিকেই সে অঞ্চলের বেশ কয়েকটি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। এতে সেখানে দুর্ভিক্ষেরও সৃষ্টি হয়। ২০১৮ সালের মে মাসে ভারতের কর্ণাটক ও তামিলনাড়ু রাজ্যে এ পোকার আক্রমণ দেখা যায়। যা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে। এবছর নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে এই পোকা দেখা গেছে।
পোকাটি ভূট্টা, তুলা, বাদাম, তামাক, ধান, বিভিন্ন ধরনের ফলসহ প্রায় ৮০টি ফসলে আক্রমণ করে থাকে। বিশেষত ভূট্টা ফসলে এর আক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। পোকাটি কীড়া অবস্থায় গাছের পাতা ও ফল খেয়ে থাকে। কীড়ার প্রাথমিক অবস্থায় এদের খাদ্য চাহিদা কম থাকলেও শেষের ধাপগুলোতে তা প্রায় ৫০ গুণ বাড়ে। সে কারণে কীড়ার ৪-৬ ধাপগুলোতে অর্থাৎ কীড়া পূর্ণাঙ্গ হওয়ার আগে পোকাগুলো রাক্ষুসে হয়ে ওঠে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে।
পোকাটি সংগনিরোধ বালাই হিসেবে পরিচিত এবং ডিম ও পুত্তুলি অবস্থায় বিভিন্ন উদ্ভিদজাত উপাদান যেমন, বীজ, চারা, কলম, কন্দ, চারা সংলগ্ন মাটি ইত্যাদির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। পূর্ঙ্গাঙ্গ পোকা অনেক দূর পর্যন্ত উড়তে পারে। এমনকি ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে কয়েকশ’ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে থাকে। এক রাতে এরা উড়ে অন্তত ১০০ কিলোমিটার পাড়ি দেয়।
কোথাও পোকা দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ এসব প্রতিষ্ঠানে খবর দিতে বলা হয়েছে। মারাত্মক এই পোকার আক্রমণ দমনে বারীর বিজ্ঞানীরা বিঘাপ্রতি ৫টি হারে ফল আর্মিওয়ার্মের ফাঁদ স্থাপন ও প্রতিলিটার পানিতে ০.২ গ্রাম জৈব বালাই নাশক (এসএনপিভি ) ১০ দিন পর পর জমিতে ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। রাসায়নিক কীটনাশক এ পোকা দমনে তেমন কার্যকর না হওয়ায় তা প্রয়োগ না করাই উত্তম বলে জানিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদরা।
এবিষয়ে বারীর পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন বিভাগের বিজ্ঞানী ড. সৈয়দ নুরুল আলম বলেন, উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁও, রংপুর ও বগুড়া এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চুয়াডাঙ্গার দামুরহুদা ও যশোরের ভূট্টা ও বাধা কপিতে এই পোকা দেখা গেছে। তবে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও সতর্কতার কারণে আগাম শনাক্ত হওয়ায় এই পোকা দমন করা যেতে পারে।