ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ: একটা কঠিন বিষয়ের উপর দিয়ে এখন আমরা পথ চলবো তার জন্য সবাই ধৈর্য্য ধরে আছি। আবার অত কঠিন না মানে ব্যাসিক জিনিসটা খুবই সিম্পল। অতকিছু আমাদের বোঝার জন্য একটু সময় দরকার। কিন্তু আজকে আমরা যে প্রবন্ধটা উপস্থাপন করছি, সেটি জ্বালানি জাস্টিসের উপর। জাস্টিস শব্দটার মানে নায্যতা বা ন্যায়। মানে কখন আমরা বলবো, জ্বালানির ক্ষেত্রে ন্যায় হয়েছে। অন্যায় বা অন্যায় হলে আমরা যাতে বুঝতে পারি, সে সময় এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে, সংগঠিত হতে হবে।
আমাদের আন্দোলন করতে হবে। সুতরাং আমরা যদি এ ন্যায় অন্যায়ের ফারাক না বুঝি। সাদা আর কালোর মধ্যে ফারাক না বুঝি। তাহলে কিন্তু মুশকিল। আমাদেরকে ভোক্তা হিসেবে সে জায়গাটাকে বোঝার জন্য পেপারটা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো। কিছু টেকনিক্যাল দিক আছে। একদম চিন্তিত হবেন না, এই টেকনিক্যাল অনেক কিছু আমিও বুঝি না। আপনাদের বুঝতে হবে এমন কথা নেই। তবে মূল যে বিষয়টা সেটা আপনাদের নিয়ে যেতে হবে। কেন আমরা পারছি না, এটাই হচ্ছে বড় কথা।
আজকে আমার উপস্থাপনায় দেখার চেষ্টা করবো জ্বালানি জাস্টিসকে আমরা কিভাবে দেখবো আইনের দৃষ্টিতে। আইন কি বলছে, আর কি হতে দেখছি, আমরা কি পেতে পারি। তাহলে আমরা বুঝতে পারবো আমাদের সাথে জ্বালানি বিষয়ক ন্যায় হয়েছে কি না? বিশেষ করে জ্বালানি জাস্টিস দেখার জন্য আমরা কিন্তু কাজ করবো ভোক্তাদের যে অধিকার রয়েছে জ্বালানি এবং এনভায়রনমেন্টের উপরে, তার ভিত্তিতে। জ্বালানি জাস্টিস শব্দটায় ন্যায়ের কথা যখন আমরা বলি, তখন কিন্তু অনেক বড় একটা বিষয় আমরা হাতে নিচ্ছি। কারণ ন্যায় শব্দটার ব্যাপকতা অনেক। আপনি ভাবছেন, এ রুমে এসি থাকাটা আমার ন্যায়গত অধিকার। আরেকজন ভাবছে, এসি না থাকলে চলবে। আমার ফ্যান থাকলেই চলবে। এটা আমার ন্যায়গত অধিকার।
অনেকে ভাবছে, অন্ততপক্ষে জানালাগুলো খোলা থাক, তাতেই আমার ন্যায়গত অধিকার। এ রকম তারতম্য রয়েছে ন্যায়ের ধারণায়। আমরা যখন ন্যায় কথাটা বলি বা বলি আমার সাথে অন্যায় হয়েছে, তখন এই ন্যায় অন্যায়ের ফারাকটা মোটামুটি নিজেরা নিজেদের অবস্থানের প্রেক্ষিতে বোঝার চেষ্টা করি।
আমি মনে করি, এখানে একটা সিংহাসন থাকলে আমি আজকে বক্তৃতা দিতে স্বাছন্দ্যবোধ করতাম। তো সিংহাসন নাই দেখে ভাবলাম আমার সাথে অন্যায় করা হয়েছে। তো আরেকজন ভাবছে, আমার তো সিংহাসন দরকার নাই। আমাকে একটা পাটি বিছিয়ে দিয়ে যদি প্রেজেন্টেশন করতে দেয় তাতেই হলো। সেটুকু যদি না দেয়, তাহলে সেটা অন্যায় হবে। ন্যায় অন্যায়ের ফারাকটা কিন্তু এরকম জায়গাতে খুব সূক্ষ্ম। এটা আমাদেরকে বুঝতে হবে।
জ্বালানি নিয়ে যখন আমরা ন্যায়ের কথা বলবো আমরা মূলত বুঝবার চেষ্টা করবো এমন ধরনের অধিকার, যেটা আমার জ্বালানি প্রাপ্তির অধিকারকে সুরক্ষিত করবে। এবং পরিবেশের যদি কোনো বিপর্যয় হয় সেটা আমি যাতে মোকাবিলা করতে পারি। একটু পরে আমরা আলোচনা করবো, কেন জ্বালানি আর পরিবেশ একসাথে জড়িত। এখন জ্বালানির যে সোর্সগুলো আছে আমি চাইলে একসাথে একবারে সব কিছু শেষ করে দিতে পারি। আমি বিক্রি করে দিতে পারি, আমি অবহেলা করে শেষ করে দিতে পারি। আমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারি। কারণ আমার জ্বালানি প্রাপ্তির অধিকার রয়েছে। সুতরাং আমি এটা করতে পারি। কিন্তু আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমি কি কিছু রাখছি? আমরা পরিবেশকে এমনভাবে নষ্ট করে যাচ্ছি, যেখান থেকে আমার ভবিষৎ প্রজন্ম কোনো অধিকার পাচ্ছে না।
তাহলে তো জ্বালানি জাস্টিস নিশ্চিত হচ্ছে না। সুতরাং জাস্টিস কথাটির সাথে ব্যক্তির জাস্টিস কথাটার যখন তুলনা করছি, সাথে সামষ্টিক জাস্টিসের কথাও চিন্তা করতে হবে। কারণ আমি একা শুধু বেঁচে থাকবো, আমি একাই শুধু ভোগ করবো, তা কিন্তু ভোক্তা অধিকারের মূল কথা নয়। ভোক্তা অধিকারের মূল কথা হলো, সামষ্টিক ভাবে আমরা ভালো আছি কি না। কিছু কিছু লোক তো ভালো থাকে। অনেকের বাসায় ইলেকট্রিসিটি না থাকলেও হাই পাওয়ারের জেনারেটর থাকে। তারা বোঝেই না দেশে কখন কারেন্ট আছে বা নাই। কিন্তু একদম গরিব ঘরে, যেখানে সেচের কাজ চলছে, সেখানে যখন ইলেকট্রিসিটি থাকে না, সেখানে তারা প্রতিমুহূর্তে বোঝে তারা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের অধিকার থেকে। সুতরাং আমরা সামষ্টিক দিকটা খুব ভালো করে মনে রাখবো।
জ্বালানি জাস্টিসের একটা গালভরা সংজ্ঞা আছে। সেই সংজ্ঞাটা দেখতে মনে হয় গালভরা, কিন্তু আসলে এতো কঠিন কিছু না। এটা আসলে আমরা সবাই বুঝি।
এটা কতগুলো শব্দ। আমি আমার জ্বালানি নিরাপত্তা চাই, আমার জন্য, আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। কোনো বিঘ্ন ঘটা যাবে না, আমার কাছে এমন জ্বালানি সাপ্লাই হবে এবং পরিবেশবান্ধব হতে হবে। আমি আমার পরিবেশের বারোটা বাজিয়ে যদি আন-ইনটারাপ্টেড এনার্জি এনশিওর করি তাতে আমার পরিবেশ নষ্ট হবে। এটার ফল শুধু ভবিষ্যৎ প্রজন্ম না, আমার আপনার জীবদ্দশাতেও এটার ভুক্তভোগী হতে হবে। নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হবে।
মূল্য নির্ধারণে জাস্টিস একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। জ্বালানি তো আর আপনি ফ্রিতে চাচ্ছেন না, আপনি চাচ্ছেন ফেয়ার আর রিজেনেবল প্রাইসে। যে দামটাও আবার সহনীয় হতে হবে। এখন আমাকে বলা হচ্ছে, তোমাকে জ্বালানি দেওয়া হলো, এক কোটি টাকা করে মাসে দিতে হবে। এটা তো আমার পক্ষে সম্ভব না, আপনার পক্ষে সম্ভব না। তাহলে জ্বালানি জাস্টিস হলো না, জাস্টিস হবে জ্বালানি মূল্যমান যাতে খুবই সঙ্গতিপূর্ণ এবং যৌক্তিক হয়।
এখানে যেহেতু আজকে আমি বলেছি, আইনের কিছু দিক আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। যারা আইনজীবী, তারা হয়তো বিষয়গুলো সহজে বুঝবেন। তবে আমার এই উপস্থাপনা সবার জন্য, যারা আইনজীবী না, তাদের বোঝার জন্য। সুতরাং এখানটাতে একেবারেই ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আইন আমাদের দরকার, আমরা শুধু চাই বললে তো হবে না। কিন্তু আমার অধিকারটা কোথায় প্রাপ্য, কোথায় ভঙ্গ হচ্ছে, অন্ততপক্ষে সেগুলো যদি জানি, তাহলে কিন্তু খুব সহজ ভাবে আমি জায়গাগুলোতে ধরে নেয়ার চেষ্টা করতে পারবো।
প্রথমেই আমি আসি, সংবিধানের কথায়। কেন সংবিধানের কথা নিয়ে আলোচনা করছি। সংবিধান হচ্ছে আমার দেশের সর্বোচ্চ আইন। এই আইনে যা বলা হয়েছে, সেটাই কিন্তু আমাদের জন্য একদম শিরোধার্য। এই আইনের সাথে যদি কোনো আইন অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তবে যেটুকু আইন অসামঞ্জস্যপূর্ণ তা বাতিল বলে গণ্য হবে। এটা কিন্তু সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলা আছে।
সুতরাং প্রথমেই আমরা বোঝার চেষ্টা করবো, এই যে জ্বালানি জাস্টিসের কথা বলা হয়েছে, জ্বালানির ন্যায্যতা নিয়ে কথা বলছি, এ নিয়ে আমাদের সংবিধান কি বলছে? সংবিধান কি ন্যায়ের কথা বলছে, নাকি সংবিধান এড়িয়ে চলছে।
প্রথমেই আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদের দিকে। ১৪৩ মনে রাখতে হবে, এমন কিছু না। শুধু জানতে হবে এটা সংবিধানে আছে। আলাপ উঠলে শুধু বলবেন এটা সংবিধানে আছে, আমাকে জিজ্ঞেস করেন কেন, খুঁজে দেখেন সংবিধানে আছে।
সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদ বলছে, আমাদের জ্বালানি ও মিনারেল রিসোর্স, তা জমিতে বা সাগরে যেখানেই হোক, সেটার মালিকানা, সেটার মালিক হচ্ছে আমাদের প্রজাতন্ত্র। প্রজাতন্ত্রের মালিক কে? জনগণ। ৭(১) অনুচ্ছেদ এই স্বীকৃতি দিচ্ছে। সেখানে প্রজাতন্ত্রের মালিক যদি জনগণকে বলা হয়, তাহলে খনিজ পদার্থ ও জ্বালানি শক্তির মালিক প্রজাতন্ত্র বলা হলে কি হচ্ছে? জনগণ হচ্ছে মালিক আমাদের জ্বালানি ও খনিজ পদার্থের। এটা নিয়ে দ্বিমত থাকার কোনো জায়গা নেই। এটা একেবারে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। তো প্রথমত বোঝা গেল, আমরাই মালিক। জনগণ মানে আমরা আরকি। এখানে প্রজাতন্ত্রের মাধ্যমে আমরাই মালিক।
আমাদের সংবিধানে কতগুলো ভাগ রয়েছে। দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতিসমূহ। এতে অনুচ্ছেদ ৮ থেকে ২৫ পর্র্যন্ত আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার কতগুলো মূলনীতির কথা বলা হয়েছে। আমাদের রাষ্ট্র এই মূলনীতির বিপরীতে গিয়ে কোনো কাজ করবে না। এই মূলনীতিগুলো মেনেই রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে।
এখানে মৌলিক অধিকারের একটি ভাগ রয়েছে। মৌলিক অধিকার হলো, যেগুলোকে আপনি কোর্টে বলবৎ করতে পারেন। তার মানে হলো, যদি আজকে আপনি সে অধিকার বঞ্চিত হোন আপনি একটা রিট করতে পারেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির ক্ষেত্রে যদি আপনি বঞ্চিত হোন তাহলে আপনি কি করবেন?
এ ব্যাপারে ৮(২) অনুচ্ছেদে খুব সুস্পষ্ট ভাবে বলা আছে, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে যে ধারাগুলো আছে সেগুলো থেকে যদি আপনি বঞ্চিত হন তাহলে আপনি সেগুলো আদালতে বলবৎ করতে পারবেন না। এবং এই কথাটি আবার কুদরতে এলাহি বনাম বাংলাদেশ খুব নামকরা একটি মামলা, এই মামলায় আপিলেট ডিভিশনের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে একই কথা যে, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি আমরা বলবৎ করবো না। খুবই দুঃখজনক, আপনি পেলেন না। রাষ্ট্র পরিচালনা করতে মূলনীতি ভঙ্গ করলে আপনি আদালতে বলবৎ করতে পারলেন না। খুবই খারাপ, এইরকম কাজ হওয়া উচিত না। কিন্তু আমরা কি করতে পারি, আমাদের হাত পা তো সংবিধান দিয়ে বাঁধা। কুদরতে এলাহির মামলায়ও উচ্চতর আদালত এ রায়টি দিয়েছে। এ পয়েন্টে আবার ফিরে আসবো।
আমরা আরেকটু দেখি, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে কি বলা হয়েছে জ্বালানি আর পরিবেশ নিয়ে। প্রথমেই আমরা বলছি, ১৩ অনুচ্ছেদের কথা। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের যা কিছু প্রডাকশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন, তার যে উপাদান ও পদ্ধতি রয়েছে সেগুলো কন্ট্রোল করবে পিপলস অব বাংলাদেশ। দেখেন আমরা কিন্তু পিপলস অব বাংলাদেশ ১৪৩ এও পড়লাম। কিভাবে তারা জ্বালানি ও খনিজ ও পদার্থের মালিকানা রাখে।
এখানে বলছে, যা কিছু প্রডিউস আর যা কিছু ডিস্ট্রিবিউশন করা হয় বা যেভাবে প্রডিউস করা হয়, তার যা ইন্সট্রুমেন্ট, মিনস, তার সব কিছু কন্ট্রোল করবে পিপল অব বাংলাদেশ। তার মানে আপনি একটা বিল্ডিং বানাচ্ছেন এখানে যদি ইলেকট্রিসিটি ব্যবহার করেন সেটা মিনস অব প্রডাকশনের মধ্যে পড়ছে। এখন কথা হচ্ছে, আমাদের মিনস অব প্রডাকশন ডিস্ট্রিবিউশন করে জনগণ। তাহলে জ্বালানি নিশ্চয়ই একটা ফ্যাক্টর। যেকোনো প্রডাকশনের ক্ষেত্রে, যেকোনো ডিস্ট্রিবিউশনের ক্ষেত্রে আমরা নানাভাবে জ্বালানি ব্যবহার করি।
আর্টিকেল ১৩তে সুস্পষ্ট ভাবে বলছে, রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতিতে রাষ্ট্রকে মনে রাখতে হবে, এগুলোর মালিকানা হচ্ছে জনগণের।
আর্টিকেল ১৫ তে কিন্তু আবার বলছে, আমাদের মৌলিক চাহিদার কথা। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, এগুলো নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আবার বলছি, বলবৎ করা যাবে না। রাষ্ট্রের মূলনীতির ভেতর এটা থাকতে হবে। রাষ্ট্র যদি বলে, দেশে কোনো খাদ্য উৎপাদন হবে না। শুধুমাত্র অস্ত্র উৎপাদন হবে। রাষ্ট্র এটা করতে পারবে না। আর্টিকেল ১৫ অনুযায়ী রাষ্ট্র এটা করতে পারবে না। কারণ রাষ্ট্রের কাজ আমার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এগুলো নিশ্চিত করা। যদি বলে বাসস্থানের দরকার কি, সবাই খোলা ছাদের নীচে থাকবে। আকাশের নীচে থাকবে, বাঁচলে বাঁচলো মরলে মরবে। ঝড়ে মরবে পানিতে মরবে আমাদের কি করণীয় আছে। আমাদের এখন বিল্ডিং করতে গেলে জায়গা অনেক লাগে। তাই এখানটাতে এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন বানিয়ে দিচ্ছি। রাষ্ট্র এটা করতে পারবে না কারণ রাষ্ট্রের যে মূলনীতি এটা হলে সেখান থেকে সরে আসবে। এখানে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা যেকোনো কাজেই কিন্তু আমাদের জ্বালানি দরকার হয়।
তাহলে জ্বালানির অধিকারকে অস্বীকার করে আমরা অন্য কোনো মূলনীতিকে সমর্থন করতে পারি না।
আর্টিকেল ১৬ আরও মজার একটা আর্টিকেল। আর্টিকেল ১৬ বলছে, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো গ্রাম আর শহরের মধ্যে বৈষম্য বা দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। এটা রাষ্ট্রের একটা দায়িত্ব। তো রাষ্ট্রের যদি সেটা দায়িত্ব হয় আপনি যদি জ্বালানির ব্যবস্থা, পল্লী বিদ্যুতায়ন না করেন আপনি কি করে মনে করেন গ্রামের সাথে শহরের দূরত্ব কমে যাবে। রাতে একটা বাল্ব একটা পরিবারের জন্য কত বড় একটা বিষয়, যারা গ্রামে কাজ করি আমরা বুঝি। ওই পরিবারটা পড়তে পারছে, রান্না করতে পারছে, মহিলাদের সুবিধা হচ্ছে, অনেক কাজ হয়ে যাচ্ছে। না হলে কি হচ্ছে, সন্ধ্যা ৭টা থেকে ওই ঘরে কোনো কাজ হচ্ছে না। নানারকম অর্থনৈতিক কাজ হয়। সুতরাং অনুচ্ছেদ ১৬ একটা জায়গা যেখানে জ্বালানি নিশ্চিত করতে হবে।
১৮(ক) অনুচ্ছেদ পঞ্চদশ সংশোধনের পরে সংবিধানে সংযুক্ত করা হয়েছে। যেখানটাতে আমাদের ব্যাসিক ইকো সিস্টেম, পরিবেশকে প্রটেকশন দেয়ার বিষয়ে বিভিন্ন কথা বলা হয়েছে। মূল কথা হচ্ছে পরিবেশের উপর আমাদের যে অধিকার রয়েছে সেটা কিন্তু আর্টিকেল ১৮(ক)-তে রয়েছে। ১৮(ক) কিন্তু আমাদেরকে বলছে, রাষ্ট্র এমন কিছু করবে না, যেখানে জ্বালানির অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করা হবে অথবা আমার পরিবেশের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে। তাহলে মোটামুটি জানা গেল, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে বিভিন্ন জায়গায় ১৩ তে, ১৫ তে, ১৮(ক) অনুচ্ছেদে জ্বালানির অধিকারের কথা বলা হয়েছে, পরিবেশের কথা বলা আছে।
এবার আমরা আসি, সে ৮(২) এর কথায়। সেখানে তো বলেছে, আমরা এইগুলো বলবৎ করতে পারবো না। এগুলো জেনে আমরা কি করবো যে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থাকবে। কুদরত এ এলাহীর মামলায় তো বলেই দিয়েছে, তারা ৮(২)-এর বাইরে যাবে
না। যেহেতু বলবৎ করার বিষয় আছে। কোর্ট বলেছে, আমরা এইগুলো বলবৎ করবো না। রাষ্ট্র পারলে দেবে, না দিতে পারলে আদালত বলবৎ করতে পারবে না।
কিন্তু আপনারা কি জানেন একটা দিগন্ত সৃষ্টিকারী পরিবর্তন আমাদের উচ্চ আদালত করেছে। আদালতও কিন্তু আইন বানায়। সে রকম আদালতের কয়েকটি মামলার রেফারেন্স আমরা দিয়েছি। যেমন লাকি ওয়াহাব বনাম সেক্রেটারি মিনিস্ট্রি অব ল্যান্ড ১৯৯৬ সালে এবং বিশেষ করে মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ বনাম বাংলাদেশ ২০১০ সালে এবং হিউম্যান রাইটস ফর পিস ফর বাংলাদেশ বনাম বাংলাদেশ ২০১১ সালে। এই তিনটি মামলাতে কিন্তু কোর্ট ৮(২) থেকে সরে এসেছে। শুধু ৮(২) থেকে সরে আসা
না, এই তিনটা মামলাই কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগের। তারা উচ্চ আদালতের রায়কে অনুসরণ না করে ভিন্ন পথে চলে গিয়েছে। তারা বলছে, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি পালনে রাষ্ট্রকে বাধ্য করা সম্ভব। অল্প মানুষই এটা জানে, এই মামলাগুলোকে নিয়ে সেই রকম আলোচনা হয় না। শফিউল্লার কেইসটাতে ২০১০ সালের মামলাতে সরকার কখনো আপিলও করেনি যে, এইরকম একটা রায় পেলাম যেখানে ৮(২) বাতিল হচ্ছে, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলবৎ করার কথা বলছে, এখানে তারা কিন্তু আপিলও চায়নি।
তার মানে হচ্ছে, আমাদের হাইকোর্ট ডিভিশন ৮(২) কে বাতিল করেছে এবং বলেছে, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিও বলবৎ করা সম্ভব। তাহলে কিন্তু আমাদের জন্য প্যান্ডোরার বক্স খুলে যাচ্ছে। আমরা যে জ্বালানি অধিকার নিয়ে কথা বলছি, আমরা যে পরিবেশের অধিকারের কথা বলছি, সেখানে যদি আর্টিকেল ১৩, ১৫, ১৮ এ কোনো কিছুতে যদি দেখি রাষ্ট্র আমাদের বিরুদ্ধচারণ করছে বা এমন কোনো পলিসি বানিয়ে ফেলছে বা এমন কোনো আইন বানিয়ে ফেলছে, যেটা নাকি আমাদের বিরুদ্ধে তাহলে আমরা কিন্তু কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারবো। কিন্তু তার জন্য আমাদের একত্রিত হতে হবে। আমাদের একসাথে মুভমেন্ট করতে হবে।
আমাদের আইনে কিন্তু অধিকার আছে, আমাদের শুধুমাত্র একত্রিত হওয়াটাই জরুরি। আমরা যদি বসে থাকি, ধুর কি হবে, রাষ্ট্র
পরিচালনার মূলনীতি বলবৎ করা সম্ভব না, তাহলে কিন্তু চলবে না। আমাদেরকে সোচ্চার হতে হবে।
এখন আমি চলে যাচ্ছি জ্বালানি অধিকার আর মৌলিক অধিকারের আলোচনায়। ইতিমধ্যে আমরা বললাম মৌলিক অধিকারের কথা, যেগুলোকে বলবৎ করা সম্ভব। আমাদের মোট ১৮টি মৌলিক অধিকার রয়েছে সংবিধানে। এটা সত্য এই ১৮টি অধিকারের মধ্যে কোথাও কিন্তু মানে পরিস্কারভাবে আমাদের জ্বালানি অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এটাকে কিন্তু অনেক দেশেই জ্বালানি প্রাপ্তির অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সংবিধানে সেটি করা হয়নি। তাই বলে কি আমরা থেমে থাকবো? না। আমাদের উপায় আছে। যত কঠিন হোক পথ কিন্তু আমরা বের করে ফেলবো।
৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদ আমাদের মৌলিক অধিকার। সেখানে কিন্তু আমাদের বলা হয়েছে জীবন যাপনের অধিকার, জীবনের অধিকার। ১৯৯৭ সালে মহিউদ্দিন ফারুক বনাম বাংলাদেশ মামলাতে সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়েছে বা বলছে, রাইট টু লাইফ মানে শুধুমাত্র নিঃশ্বাস নেওয়া আর ছাড়া না। মানে আমি নিঃশ্বাস নিচ্ছি, ছাড়ছি আর বেঁচে আছি। তার মানে এটাই আমার অধিকার, তা না। রাইট টু লাইফের সাথে তারা কিন্তু কোয়ালিটিটিভ কিছু জিনিসের কথা যোগ করেছে যে, রাইট টু লাইফ মানে আমি পরিবেশ দূষণ থেকে মুক্ত থাকবো, আমি শব্দ দূষণ থেকে দূরে থাকবো, এটা আমার অধিকার।
এখন শুধু বললে হবে আপনাকে এখানে যন্ত্রের মতো বসিয়ে রাখছি। নিঃশ্বাস নিচ্ছেন, জ্বি নিচ্ছি, নিঃশ্বাস ছাড়তে পারছেন, হ্যাঁ ছাড়তে পারছি। এই তো আপনার অধিকার একদম সুরক্ষিত। তেমনটা হবে না। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমি কি পরিবেশে আছি। আমার জীবনের অধিকারের জন্য এ রুমে সুস্থ পরিবেশ দরকার।
আমার অধিকারের জন্য খাবার দরকার, এই সব কিছুই তো আমার রাইট টু লাইফের সাথে জড়িত। এই যে ব্যাপারটা, এই ব্যাপারটা কিন্তু ১৯৯৭ সালে মহিউদ্দিন ফারুকের যে মামলা করা হয়েছে, সে অসাধারণ মামলাতে কোর্ট বলে দিয়েছে। সেখান থেকে কিন্তু অনেক অনেক এক্সটেনশন হয়েছে। এই মামলার মূল কথাটি হচ্ছে, শুধু শারীরিকভাবে বেঁচে থাকলে রাইট টু লাইফ নিশ্চিত হবে না। রাইট টু লাইফের জন্য জীবন যাপনের জন্য অনেক কিছুর দরকার হয়। পরিবেশ, খাবার দাবার। আপনি ভেজালযুক্ত খাবার খাচ্ছেন আপনার রাইট টু লাইফ চলে যাচ্ছে। আপনি সংবিধানের আলোকে মামলা করেন। ভেজাল আইনে যাওয়ার আগে আমার রাইট টু লাইফ তো লঙ্ঘিত হচ্ছে। কয়েকবছর আগে আপনাদের মনে আছে, বাচ্চাদের দুধে মেলামাইন পাওয়া গিয়েছিলো একটা মামলা হয়েছিলো। ঠিক রাইট টু লাইফের ভিত্তিতেই কিন্তু তারা গিয়েছিলো। প্যারসিটামল সিরাপ নিয়ে বহু বছর আগে একটা মামলা হয়েছিলো। সেটাও কিন্তু রাইট টু লাইফকে কেন্দ্র করে। এই গেল আমাদের সংবিধানের জায়গা।
দ্বিতীয় যে আইনটি আলোচনা করছি, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ স্ট্যাডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন(বিএসটিআই) অ্যাক্ট। অনেক বড় একটা নাম। এটা আসলে বিএসটিআই, এখানে সব পরীক্ষা করে। ওই আইনের কথা বলবো। আমি শুধু অসঙ্গতির জায়গাগুলো তুলে ধরছি বা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি, কোথায় আমরা একত্রিতভাবে একটা মুভমেন্ট করতে পারি। যেমন বিএসটিআই আইনের ৬ ধারায় সুস্পষ্ট ভাবে বলা আছে, বিএসটিআই শুধু ডিল করে কমোডিটি আর প্রডাক্ট নিয়ে।
তাহলে প্রশ্ন আসছে, জ্বালানি কি প্রডাক্ট, কমোডিটি? এটা কি পণ্য? না এটা সার্ভিস? এই প্রশ্নটাকে কিন্তু আমাদের সমাধান
করতে হবে। কেন সমাধান করতে হবে? আমরা বিএসটিআই আইনের অধীনে যখনই প্রশ্ন করার চেষ্টা করবো, তখনই কিন্তু আমাদের এ জায়গা বুঝতে হবে, যে আমি কমোডিটি নাকি তার সার্ভিস প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাচ্ছি? এটা একটা বিশাল প্রশ্ন যে, জ্বালানি কি কেবলই পণ্য হিসেবে গণ্য হবে? এটা কি সার্ভিসের মধ্যে পড়বে না? এখন যদি আপনি কয়লার কথা বলেন, এটা
কমোডিটি, হাত দিয়ে ধরা যায়। কিন্তু বিদ্যুৎ? এটা কি সার্ভিস? তো এখানটাতে অনেকগুলো মামলা আছে, যেখানে আমাদের জন্য অনেকেই অনেক কাজ করে দিয়ে গেছে। যেমন আমেরিকায় নিউইয়র্ক, কেনটাকি, মেরিল্যান্ড, মিশিগান, এইসব স্টেটে অনেকগুলো কোর্টে অসংখ্য মামলাতে আমেরিকার কোর্ট বলে দিয়েছে ইলেকট্রিসিটি শুধু প্রডাক্ট নয় এটা একটা সার্ভিসও।
আপনারা যদি পূর্ণ পেপারটা রেফারেন্স হিসেবে পড়তে ইচ্ছা করে ক্যাবের লাইব্রেরিতে নিশ্চয়ই সেটা থাকবে। সেটা আপনার পড়ে দেখবেন, সেখানে সব কেইসগুলো রেফার করা আছে।
তাহলে ইলেকট্রিসিটি যদি সার্ভিস হয় প্রডাক্ট না হয়ে, বা বিএসটিআই যদি বলে না না এগুলো আমাদের কাছে আনবেন না। এগুলো আমাদের দেখার বিষয় না। এটা আমাদের আইনে নাই। তাহলে বিএসটিআইয়ের আইনে মজার মজার কতগুলো
সেকশন আছে। যেমন দেখছেন, ৬(ক) ধারায় বলা আছে, Consumers can claim that energy production and energy service practices are very much within the functional ambit of the BSTI. অর্থাৎ তারা বলছে, আমরা প্রডাক্ট তো দেখবই দেখবো। এমনকি যেকোনো জিনিসের প্রডাকশন বা সার্ভিস প্রাক্টিসেসও আমরা দেখবো। তো প্রডাকশন দেখতে গেলেই তো জ্বালানি চলে আসবে। সার্ভিস প্রাক্টিস দেখতে গেলেই তো জ্বালানি চলে আসে। তাহলে সিক্স-এ-এর অধীনে আমরা ঢুকাতে পারছি এনার্জি সার্ভিসকে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ঠিক একইরকমভাবে বলছে, যেকোনো ইন্ডাস্ট্রিকে আমরা দেখতে পারি, স্ট্যান্ডার্ডাইজ করতে পারি। জ্বালানি ইন্ডাস্ট্রি তো আর মঙ্গলগ্রহ থেকে আসেনি। এটা তো আমাদের এইখানেই তৈরি হচ্ছে, সুতরাং সেটাও কিন্তু তারা দেখতে বাধ্য। তারা যদি বলে আমরা শুধু কমোডিটি দেখব, তাহলে আমরা কিন্তু এই ধারার আলোকে তাদের সঙ্গে একটা দর কষাকষিতে যেতে পারি।
৬(গ) তে বলছে, আমরা শুধু প্রডাকশন ও ডিস্ট্রিবিউশনই দেখব না, যেকোনো ইন্ডাস্ট্রির যারা প্রডিউসার ও ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে তাদের কার্যকর্মকেও আমরা স্ট্যান্ডার্ডাইজ করতে পারি। তাহলে জ্বালানি সেক্টরকে বাদ দিচ্ছে কিভাবে? বাদ দেওয়া হয়নি। সুতরাং বিএসটিআইয়ের আইনে কোনো সীমাবদ্ধতা নাই জ্বালানি সেক্টরের সার্ভিস অথবা প্রডাক্টের উপর। প্রডাক্ট তো তারা দেখতে বাধ্য, সার্ভিসও যদি হয়, সেটাও তারা দেখতে বাধ্য। বিদ্যুতের মান কেমন, সেবা কেমন দিচ্ছে, তার জন্য আমার অন্য প্রডাক্ট নষ্ট হচ্ছে বা হতে পারে, এরকম সবকিছু কিন্তু আমরা বিএসটিআইয়ের কাছে নিয়ে যেতে পারি। বলতে পারি, আপনারা এখান থেকে নির্দেশনা দিতে পারেন। সেখান থেকে বলছি, আমরা কিন্তু আসলেই বিএসটিআইকে প্রো একটিভ রোল প্লে করতে দেখি না। মানে খুব উঠে পড়ে লেগে কাজ করবে, তা না। ওই ধামাধরা কিছু কাজ করে যায়। বিদেশ থেকে আসছে কিছু প্রডাক্ট, দেশে কিছু প্রডাক্ট হচ্ছে, মাঝে মাঝে ম্যাজিস্ট্রেট নামাচ্ছে।
এই মিষ্টিতে চিনি ঠিক আছে কিনা, দুধ ফেটে যাচ্ছে কি না। এগুলো যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু না মানে এগুলো যে খারাপ তা বলছি না। কিন্তু জ্বালানি সেক্টর যে বিএসটিআই দেখতে পারে সে ধরনের একটা দাবি আমরা যৌক্তিত ভাবে তাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারি। তবে এখানে একটা সুখের কথা হচ্ছে বিএসটিআইয়ের একটা কাউন্সিল আছে যে কাউন্সিল সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
সে কাউন্সিলের কিন্তু সদস্য হচ্ছে, কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সুতরাং ক্যাব যদি সেখানটাতে মেম্বার থাকে আমরা আমাদের আন্দোলনটা কিন্তু ক্যাবের মাধ্যমে সেখানে উপস্থাপন করতে পারি অথবা যৌক্তিক ভাবে তা প্রতিষ্ঠা করতে পারি।
এবার আমরা দেখব বিদ্যুৎ আইন। এটা নতুন আইন, ২০১৮ তে করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সিভিল ওয়ার্কস কাকে বলে অর্থাৎ বিদ্যুতের লাইন টানার কাজ কিভাবে হবে। লাইসেন্স দেওয়া হয় যে তোমরা ওখানে কানেকশন দাও। তারা কিন্তু বিভিন্ন ভাবে আমাদের দুর্ভোগে ফেলে। একটা লাইন হবে, তো মাটি খুঁড়ছে তো খুঁড়ছে তো খুঁড়ছে। কতদিনে এটা শেষ হবে, বলে বলতে পারি না। কনট্রাক্টর নাই, লাইন বাঁকা, ঈদের পরে হবে। ঈদের পর বলে ছুটিতে গিয়ে লোক আর আসে নাই। আসলেও কাজ হতে দেরি হচ্ছে। এই যে আমরা সাফার করছি, কনজুমাররা সাফার করছে, সেটা কি কারণে করছে। আমার ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার জন্যই তো এগুলো সহ্য করছি।
এখন ইলেকট্রিসিটি আইনে বলা আছে, এই যারা সিভিল ওয়ার্কস করবে, খুঁড়বে, কনস্ট্রাকশন করবে, তাদের লাইসেন্স দেয়ার শর্তে বলা আছে, তুমি একদম কম ভোগান্তিতে যত তাড়াতাড়ি পারো কাজটা শেষ করবে এবং শুধু তাই না, তুমি সেখানটাতে যথেষ্ট পরিমাণ নোটিশও দেবে। নোটিশ ছাড়াও করতে পারো যদি ইমারজেন্সি সিচুয়েশন হয়। তবে ইমারজেন্সি কিন্তু রেগুলার হবে না।
ইমারজেন্সি হচ্ছে ব্যতিক্রম। কিন্তু আমরা দেখি এটা হয় না। আমরা দেখি এ সমস্ত কাজ করতে গিয়ে আমাদেরকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। আমি এখনো ইলেকট্রিসিটির লাইন পাইনি, আমি ইলেকট্রিসিটি কনজ্যুম করছি না, তখন ইলেকট্রিসিটি অথরিটি বোঝানোর চেষ্টা করে আপনি তো ভাই কনজ্যুমার না।
আমরা আপনার সাথে কেন এত কথা বলতে যাবো। কথা বলার জায়গটা হলো, আপনার লাইসেন্সে যে শর্ত আছে, রেগুলেশন আছে, সেখানে বলা হচ্ছে এ ধরনের ভোগান্তি দেয়া যাবে না। এরপরেও সে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে যেকোনো সময়ে ইলেকট্রিসিটি নিয়ে আমরা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হই, সেগুলোর ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষতিপূরণ দাবি করার জায়গা রয়েছে। কিন্তু দেখা যায় এই ক্ষতিপূরণ দাবির দিকে কেউ যায় না। তারাও চিন্তিত না যে এটা দিতে হবে, আমরাও সেটা করছি না যে এটা আদায় করতে হবে। বিদ্যুৎ আইনের অধীনে যদি কোনো সাংঘর্ষিক জায়গা হয় তাহলে কিন্তু আমাদের এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাছে যেতে হবে সেই বিবাদ সমাধানের জন্য। কিন্তু হায়রে আমার বিইআরসি! কিন্তু তারাও তো সে ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নেয় না।
আমাদের এখন যেটা দরকার, তা হলো ইলেকট্রিসিটি রাইট অব কনজুমার রুলস একটা বানাতে হবে। যেটা নাকি আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতে রয়েছে। এটা বানানো হলে তাতে আমাদের অনেক সুবিধা হবে।
আমরা এরপরে চলে যাচ্ছি, বাংলাদেশ পরিবেশ সুরক্ষা আইনে। এর মানেই হচ্ছে আমাদের পরিবেশকে সুরক্ষিত করার জন্য ১৯৯৫ সালে এ আইনটা করা হয়েছে। এখানে আমরা যেটা দেখতে চাই, জ্বালানির সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্কটা। এই রিলেশনটা খুব গভীর। পরিবেশ সংরক্ষণ করার মধ্য দিয়ে এনার্জি জাস্টিস নিশ্চিত করা যায়। সেটা আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি। আমি সেজন্য এখানটাতে সেই ডিটেইলসে আপনাদের নিয়ে যাচ্ছি না।
এখানে যেটা দেখার বিষয়, আমাদের একটা পরিবেশ অধিদপ্তর রয়েছে। যে নাকি কনজুমারদের এ অধিকারগুলো দেখার ব্যাপারে কাজ করবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, তারা খুব একটা এক্টিভ রোল প্লে করছে না। সুতরাং এ আইনের অধীনেও কিন্তু আমরা কাজ করে যেতে পারি। যেহেতু কনজুমারস রাইট প্রটেকশন আইন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তো এখানে আমি খুব সংক্ষিপ্ত করে বলে যাবো। কনজুমার রাইটস প্রটেকশন আইন ২০০৯ তে জ্বালানির সংজ্ঞাটাকে খুব সীমিত আকারে করা হয়েছে। সার্ভিস বলতে শুধু ফুয়েল, গ্যাস আর ইলেকট্রিসিটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর বাইরেও যে নতুন নতুন জ্বালানি রয়েছে রিনিউয়েবল এনার্জির মতো, সেটার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জায়গাটা এখানে উল্লেখ নেই। এখানেও কিন্তু সংকট সমাধানের জন্য একটা
কাউন্সিল আছে, সেখানে ক্যাবের প্রতিনিধিত্ব আছে।
সুতরাং আমাদের যা কিছু বলার ভোক্তাদের কণ্ঠ হিসেবে ক্যাব সেখানে উপস্থিত হয়ে আমাদের কথাগুলো বলতে পারে। এখানে আরেকটি বিষয় হলো, আমাদের কনজুমারের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার। সেটি কিন্তু এ আইনে খুব সীমিত করা হয়েছে। প্রথমত হলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে আপনি কিন্তু একা গিয়ে মামলা করতে পারছেন না। আপনাকে গিয়ে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদনপত্র দিতে হবে। মানে আপনার ১০ টাকার মিষ্টি খাওয়ার পর পেট খারাপ হলে যাবেন মহাপরিচালকের কাছে। পকেটের টাকা খরচ করে পৌঁছাবেন। সেখানে গিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করবেন। সময় খরচ করবেন। এরপর তারা এরকম হাজার দুয়েক অভিযোগ পেলে সেখান থেকে ৫০টি নিষ্পত্তির চেষ্টা করবে। আপনি খুব ভাগ্যবান হলে আপনারটাও তুললো। তারপর নানা কাঠখড় পুড়িয়ে দেখা গেল যে, জরিমানা করল এবং যা জরিমানা হবে আপনি পাবেন তার ২৫ শতাংশ।
এখানে একটা প্রশ্ন আছে, আপনার যে ক্ষতি হচ্ছে, সেটা যদি হয় এক লাখ টাকার, আর ক্ষতিপূরণ আসলো ১০০ টাকা। আপনি পাবেন ২৫ টাকা। তাহলে এটা কি ধরনের আইন? এই আইনের ভেতর অসঙ্গতি আছে না? আমার যদি ১০ টাকা ক্ষতি হয় ২৫ টাকা পাই তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমার ক্ষতির পরিমাণটা বেশি। আপনি চিন্তা করেন, আপনি ১০ টাকার
মিষ্টি কিনে খেলেন, আপনার ওষুধ কিনতে হচ্ছে, আপনার হসপিটালে যেতে হচ্ছে, সময় যাচ্ছে, অফিস মিস হচ্ছে, বেতন কাটা যাচ্ছে, এসব কিছু মিলিয়ে আপনার ক্ষতিটা অনেক বেশি। তারপর আপনি ২৫ টাকা পেলেন। তাতে কি আপনার যথেষ্ট হল কি না? সেজন্য অনেক মানুষ চিন্তা করে ধুর, যাওয়ার দরকার নেই। যা হয়েছে আমার কপাল খারাপ, সবার কপাল ভালো, আমার কপাল খারাপ, ফাটা কপাল নিয়ে এসেছি, বাদ দিলাম। এভাবে ভোক্তা আন্দোলনকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো না। আর সরাসরি কোর্টে যাওয়ার অধিকার ভোক্তা অধিকার আইনে নেই। আপনি এমনিতে যেতে পারেন, যে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেটাও লম্বা একটা ব্যাপার।
এবার একটা গুরুত্বপূর্ণ আইনের বিষয়ে বলছি; প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ বলা হয়েছে বাজার যাতে একচেটিয়া না থাকে। একচেটিয়া হলে যা হয়, যেমন লবণের বাজার একচেটিয়া বাজার। আমি যদি বলি এক কেজি লবণের দাম ১০০০ টাকা আপনাকে সেই দামেই কিনতে হবে। আপনার কোনো উপায় নেই, কারণ লবণ না খেয়ে থাকা যায় না। কাঁচামরিচ বেগুন নিয়ে অনেক আর্গুমেন্ট হয়েছে। এগুলো পাশের দেশে খাচ্ছে না, এগুলো বন্ধ করেই রাখা যায়। কিন্তু কিছু পণ্য আছে যেগুলো মনোপলি থাকে, মনোপলি শুধু প্রডাক্টের ক্ষেত্রে হয় না, সার্ভিসের ক্ষেত্রেও তা হয়। যেখানে মনোপলি সার্ভিস আছে, যেমন রেলওয়ে। টিকেট নেই কি করবেন, সকাল ৯টার ট্রেন ছাড়ে রাত ৯টায়। কি করবেন কিছু করার নেই। আপনি ক্ষতিপূরণ চাইবেন, কাজ মিস হয়ে গেল।
সব কিছু মিলিয়ে আমাদের কম্পিটিশন আইনটি ২০১২ সালে নতুন করে করা হয়েছে। এর মধ্যে কতগুলো দূরদর্শী পলিসি রাখা হয়েছে, বাজারকে আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক করার উদ্দেশ্যে। বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করার মাধ্যমে আপনি সঠিক দাম, ন্যায্য দাম পাচ্ছেন। তবে পারফেক্ট প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে সত্যিকার অর্থে কিছু থাকে না। তবে এখানে আপনি দেখবেন অনেকগুলো বিক্রেতা থাকে, ফলে আপনি দরদাম করে পণ্য কিনতে পারবেন। আপনি এয়ারলাইন্সে দেখবেন দাম যখন কমায়, তখন সব একসাথে কমায়, আবার বাড়ার ক্ষেত্রে এক সাথে বাড়াচ্ছে। এগুলো দেখা যায় একচেটিয়া বাজারের মতো, কারণ কিছু বিক্রেতা দেখেই আমরা খুব খুশি থাকব। কারণ ওরাও আবার একটা সিন্ডিকেট বানাতে পারে। এই সিন্ডিকেটের কারণে আপনি ভাংতে পারবেন না তাদের কাজ। এয়ারলাইন্সগুলো দাম কমাচ্ছে আমরা সবাই খুশি হচ্ছি কিন্তু দাম বাড়ানোর সময় সবাই মিলে বাড়াচ্ছে, কারো খরচ বাড়েনি, একজন বাড়িয়েছে দেখে আমিও বাড়াচ্ছি। তাহলে এটা সত্যিকার অর্থে কি একচেটিয়া বাজার। ঈদের সময় ইতোমধ্যে দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু বাসের টিকেট, লঞ্চের টিকেটের দাম বেড়ে গেছে। তেলের দাম কি বেড়েছে? তারা বাস কি আকাশ দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে? আপনি ৫০০ টাকার টিকেট ২,০০০ টাকা দাম, তাও পাবেন না টিকেট। এটা হচ্ছে সিন্ডিকেট।
এই কম্পিটিশন আইনটা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে যেন এই সিন্ডিকেট থেকে ভোক্তারা মুক্ত হয়। এটাই এই আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য। এনার্জির ক্ষেত্রে দেখব এটা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও কম্পিটিশন আইন ২০১২ তে ভোক্তার সুরক্ষা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান নেই। কিন্তু এই আইনে বলা আছে কম্পিটিশন যে কাউন্সিল আছে, তারা যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় বাজারে কম্পিটিশন এনশিওর করবে। কিন্তু তারা যদি তা না করে তাহলে আমরা কি করতে পারি। আমরা আন্দোলন করতে পারি। আমরা একা কিছু করতে পারব না। কিন্তু একসাথে আন্দোলন করতে পারি। একসাথে কাজ করতে পারি। আমাদের তা করতে হবে। আমরা তা না করে, কিছু করার নাই বলে এই দুঃখ পেলে চলবে না। আমরা কিন্তু ভুক্তভোগী অনেক, আমরা দাঁড়াই না, কনজুমারস এসোসিয়েশনের কাছে এ অভিযোগ দিচ্ছি না।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ কম্পিটিশন কমিশন, না তারা একটিভ, না আমাদের এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন একটিভ কনজুমারদের নিয়ে। তারা আবার নিজেরাও আলোচনা করে না। অথচ দুই আইনেই বলা আছে, তারা একে অপরের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। কিন্তু এই দুই কমিশনের জানি না কি এতো কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে যে ভোক্তা ইস্যু তাদের কাছে কোনো ব্যাপারই না যে, একটু ভুগুক তাতে অসুবিধা কি। সবাই তো ভুগতেছে, কিন্তু ভুগতে ভুগতে সবার অভ্যাস হয়ে গেছে আরকি। কিন্তু এরা তাদের কাজটা ঠিকমতো করতে পারছে না।
সাসটেইনেবল রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি একটা অ্যাক্ট আছে। রিনিউয়েবল এনার্জি মার্কেটে অনেকগুলো অসামঞ্জস্যতা দেখা যাচ্ছে, আমরা দেখতে পাই সেখানে রিনিউয়েবল এনার্জি নিয়ে যে ধরনের পদক্ষেপ কাজ করার উচিত সেগুলো কিন্তু হচ্ছে না। আমরা কিন্তু করোনা পরবর্তী সময় দেখেছি এনার্জি সংকট কাকে বলে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এনার্জি সংকট হচ্ছে। আমরা যদি রিনিউয়েবল এনার্জি সেক্টরে মুভ না করি, আমরা কিন্তু ট্র্যাডিশনাল এনার্জি নিয়ে বেশি দূর এগোতে পারব না। সব কিছুর একটা সীমা আছে, তেল কয়লা, গ্যাসের উপর অনেক চাপ পড়ছে। আমাদের দেশে সূর্যের রোদ আছে, পানির প্রবাহ, বাতাস, এগুলোকে নিয়ে হাইড্রো ইলেক্ট্রিসিটি, সোলার এনার্জি বিভিন্ন রকমের ভোক্তাবান্ধব কিছু পদ্ধতিতে যদি আমরা না যাই, যেহেতু আমাদের একটা অথরিটি আছে তারা কিন্তু এই কাজগুলো ঠিকমতো করতে পারে। তবে সেগুলো আমরা হতে দেখি না।
এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কথা প্রত্যেকটা আইনের সাথে আমরা ঘুরে ফিরে অনেকবার বলেছি। আমরা আসলে একটিভ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন দেখতে চাই। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন যে দাম নির্ধারণ করে সেই প্রাইস মানে না লাইসেন্সিরা।
এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন কিছু তো করবে, তারা বলে আমরা কি করব। আপনারা কথা বলেন। আমরা কথা বলব কেন। তার জন্য তো অথরিটি আছেন আপনারা। আপনি তাদের লাইসেন্স বাতিল করেন। এছাড়া কনজুমার ডিসপিউট রিসল্ধসঢ়;ভ করার দায়িত্ব কিন্তু তাদের আছে। কিন্তু এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আজ পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেছে কিনা সন্দেহ আছে। তাদের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ক্ষমতাও আছে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার। যেমন নাকি সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন করেছে,
প্রাইস আপডাউন করছে, এদের ট্রেডিং বন্ধ করে দেও, সার্কিট ব্রেকার ফেলে দিচ্ছে।
ঠিক একই রকম ক্ষমতা এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের আছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা হয়েছে কি না সেটা আমরা জানি না। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের আইনের সীমাবদ্ধতার জায়গা যেমন রয়েছে, আবার সীমাবদ্ধ আইনের ভেতরে কমিশন যা করতে পারে তাও করছে না। আমাদের কপাল এতো খারাপ কি বলব আর বলেন! আইনের নামে আইন আছে, কিন্তু সেই প্রয়োগটা সেরকম হচ্ছে না। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে অনেকটা পেপার টাইগার হিসেবে বানিয়ে রেখেছে। দেখতে বাঘের মতো কিন্তু না আঁচড়াতে পারে, না কামড়াতে পারে। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কোনো অধিকারই নেই এনার্জি পলিসি বানাবার। ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে সরকার তার সাথে আলাপ করবে না। তাহলে আমার কমিশন কিভাবে শক্তিশালী হবে? কি করে তাদের মধ্যে আরও শক্তি আসবে? এগুলো না হয়ে যদি ধামাধরা একটা কমিশন বসে থাকে, সেখানে কয়েকটা শুনানি হয়। প্রাইস নিয়ে শুনানি হয়, সেখানে একটা লোক দেখানোর মতো শুনানি হয়, একটা লম্বা সময় আমিও কাজ করেছি।
অধ্যাপক শামসুল আলম স্যারের অনেক ধৈর্য্য। স্যার এখনো কাজ করেন। কথা বলেন ভোক্তাদের হয়ে ওখানে গিয়ে। আমরা বলে চলে আসি, তারপর যা হওয়ার তাই হয়। তারপরেও আমরা একটা ভয়েস রাখছি। আমরা ছেড়ে দিচ্ছি না। আমাদের এখানে একটা একটিভ একটা রোল প্লে করতে হবে। আমাদের কিছু জায়গায় আইনি পরিবর্তন দরকার। সেগুলোর জন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে। কিছু জায়গায় আইন আছে প্রয়োগ নেই। তাহলে প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কিছু জায়গায় আমাদের মার্কেট রেগুলেটররা, তারা প্রো একটিভ রোল প্লে করছে না, তাদেরকে বাধ্য করাতে হবে। আপনার অধিকার আছে আপনি বাধ্য করেন।
এনার্জি মার্কেটের ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এর যে চেষ্টা, তা খুব সীমিত। এখানে নেসেসারি কনজুমার মুভমেন্টকে ইনিশিয়েটিভ নিতে হবে। এবং শুধু করলাম, একদিন একটা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ালাম তা না, এটার পেছনে লেগে থাকতে হবে। এবং সেটাকে একটা দেশব্যাপী আন্দোলনে নিয়ে যেতে হবে। এগুলো আমাদের খুব সাধারণ কনক্লুশন। আমি আলোচনার চূড়ান্ত উপসংহার টানা পছন্দ করি না। এখানে আপনাদেরও অনেক আইডিয়া থাকতে পারে। তাই এই আলোচনাটা উন্মুক্ত রাখতে চাই যাতে আপনারা চিন্তা করতে পারেন।
[০৮ এপ্রিল ২০২৩ (শনিবার) কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), জেলা কমিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘জ্বালানি রূপান্তর ও বিদ্যুতের যৌক্তিক মূল্যহার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন’ শীর্ষক এক প্রশিক্ষণশালা আয়োজন করে। ঢাকার বাংলামটরস্থ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ইস্ফেন্দিয়ার জাহিদ হাসান মিলনায়তনে কর্মশালাটি অনুুিষ্ঠত হয়। এই কর্মশালায় প্রবন্ধটি পঠিত হয়।]