।। বিশেষ প্রতিনিধি ।।
দুধ ও মাংস উৎপাদন সক্ষমতায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। খামারিরা বলছেন, উন্নত জাত না আসায় এই সংকট পোহাতে হচ্ছে। জাত ভালো না হওয়ায় দুধ উৎপাদনের জন্য খামারিদের বেশি পরিমাণে খাদ্য ও শ্রম দিলেও উৎপাদন হচ্ছে কম। ফলে তারা খুব একটা লাভবান হতে পারছেন না।
গাভী ও মহিষের দুধ উৎপাদনের ক্ষমতার দিক থেকেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। উন্নত বিশ্বে জাত উদ্ভাবনে প্রতিনিয়তই গবেষণার মাধ্যমে নিত্যনতুন সিমেন উন্নয়ন করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে রয়েছে। উন্নত জাত উদ্ভাবন ও চালু না করার কারণে অনেক গরুই এখন ইনব্রিড হয়ে গেছে। আর এ কারণেই মাংস বা দুধ উৎপাদনক্ষমতা কমে গেছে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ণ, উপার্জন ক্ষমতা বৃদ্ধি, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের কারণে নিরাপদ দুধ ও মাংসের চাহিদা সামনের দিনে আরো বাড়বে। সেক্ষেত্রে এ চাহিদা মেটানোর জন্য এখনই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, এসব প্রাণীর উৎপাদন বাড়াতে সম্ভাবনাময় প্রযুক্তিগুলোকে সঠিকভাবে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে না। অনেক পুরনো সিমেন দিয়ে গরু-ছাগল উৎপাদন করা হচ্ছে। আবার গরুর সিমেন আমদানিতে এক ধরনের বাধা রয়েছে।
দাবী করা হচ্ছে, উন্নত জাতের গরুর সিমেন দিয়ে দেশেই জাত উন্নয়ন করতে হবে। নয়তো দেশের আবহাওয়া ও সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই উন্নত জাতের গরুর সিমেন আমদানি করে দেশে জাত উন্নয়ন করতে হবে। তাহলেই প্রাণী উৎপাদনে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিরাপত্তার অজুহাতে গোঁড়ামি করলে খামারিদের কাছে দ্রুত উন্নত প্রযুক্তি পৌঁছবে না। সেটি করতে ব্যর্থ হলে দুধ ও মাংস আমদানি করে খেতে হবে। বেশি দামে দুধ ও মাংস কিনতে হবে। তাই গরু উৎপাদনের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে ব্রিড উন্নয়নে জোর দিতে হবে। এছাড়া খামারিদের প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনার সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে (২০১৭-১৮) দেশে দুধের উৎপাদন হয়েছিল ৯৪ লাখ ৬ হাজার টন। যদিও এ সময় দেশে দেশে দুধের চাহিদা ছিল ১ কোটি ৫০ লাখ ২৯ হাজার টন। সে হিসেবে পণ্যটির ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫৬ লাখ ২৩ হাজার টনে। এ ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে মূলত আমদানির মাধ্যমে। আর মাংস উৎপাদনে বর্তমানে কোনো ঘাটতি নেই। বার্ষিক চাহিদা ৭২ লাখ ১৪ হাজার টনের বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ৭২ লাখ ৬০ হাজার টন।
বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে মাংসের বার্ষিক ঘাটতি দাঁড়াবে প্রায় পাঁচ লাখ টনে। অন্যদিকে দুধের ঘাটতি হবে প্রায় ৫৯ লাখ টন। এই সংকট মোকাবিলা করতে এখনই যথযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
।