নাগরিকদের মাঝে ইমেজ সংকটে আছে ওয়াসা

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে ওয়াসা অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছে সত্য। কিন্তু নাগরিকদের সঙ্গে একটি দূরত্ব তৈরী হওয়ায় ওয়াসা ইমেজ সংকটে রয়েছে।’

মঙ্গলবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ কর্তৃক পানির অপচয় রোধ ও এলাকাভিত্তিক পানির মূল্য নির্ধারণে নাগরিক মতামত শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ জন্য ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে নাগরিক সচেতনতা গড়তে বেশী বেশী সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণের পরামর্শ দেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। তাছাড়া ওয়াসার দুর্নীতি রোধে শতভাগ প্রযুক্তিবান্ধব মিটার ব্যবস্থা চালু করার আহ্বান জানান তিনি।

এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘সেই সঙ্গে পানির লিকেজ বন্ধ, এলাকাভিত্তিক নজরদারি জোরদার, পানির অপচয় রোধে নাগরিক সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার। ওয়াসা একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। ভোক্তা অধিদপ্তরও সরকারি প্রতিষ্ঠান। আমাদের কাছে ওয়াসা নিয়ে অনেক অভিযোগ আসে। কিন্তু আরেকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই যাতে অভিযোগ না আসে সে ব্যাপারে ওয়াসাকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ ১০টি নাগরিক সেবার মধ্যে অন্যতম ঢাকা ওয়াসা।’

তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরা এলাকায় ওয়াসার এক মিটার লাইন সঞ্চালন না থাকা সত্ত্বেও ওয়াসা বিল পায়। এটিও ভেবে দেখা দরকার। ওয়াসার কিছু দুর্নীতিবাজ মিটার রিডারদের সঙ্গে কিছু ব্যবহকারী নাগরিকও দায়ী। আর এই দুর্নীতির ফলে ওয়াসা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ওয়াসা বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার রায় বলেন, ‘আইএমএফ পানিতে ভর্তুকী প্রদান করতে সরকারকে বার বার নিষেধ করছে। আমাদেরকেও ভর্তুকি তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু সরকার এবং ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও যদি অন্যায় করে থাকি তাহলে আমাকে ওয়াসা থেকে বের করে দেয়ার জন্য প্রয়োজনে আন্দোলন করেন, বের হয়ে যেতে বলেন, কিন্তু ওয়াসা যদি বেসরকারি খাতে চলে যায় এক রিডার পানি কত টাকায় খাবেন তা একবার ভেবে দেখেন। তাই কারো সমালোচনা করতে গিয়ে ওয়াসাকে ধ্বংস করবেন না।’

তিনি পানির মূল্য সম্পর্কে বলেন, ‘ওয়াসার পানির মূল্য হবে তিন স্তরে। যেমন নিম্নআয়ের মানুষের পানির দাম হবে বর্তমান উৎপাদন খরচের চেয়েও কম। মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য মূল্য হবে উৎপাদন খরচের সমান। আর উচ্চবিত্তদের পানির মূল্য হবে উৎপাদনের খরচের চেয়েও অধিক।’

নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন উত্তম কুমার রায় বলেন, ‘আপনাদের বিল বা সেবা দানের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম লক্ষ্য করল সরাসরি ওয়াসাতে আসুন আমরা সমাধানের চেষ্টা করবো। আগামীতে ডিজিটালাইজেশন হলে মাঠ পর্যায়ের দুর্নীতি শত ভাগ রোধ করা সম্ভভ হবে এবং চলমান ডিএমএ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শত ভাগ নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’

পানি ও নদী নিয়ে গবেষণাকারী আমিনুল রসুল বলেন, ‘বর্তমান হাতিরঝিল এলাকায় ঢাকা শহরের ভূমি উপরি ভাগের অন্যতম পানির উৎস। কিন্তু এই হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নষ্ট করার জন্য এর উপর দিয়ে রেল নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে এতে করে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে পড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই। ঢাকা-গুলশান, বনানী, ধানমন্ডির বাসিন্দাদের পানির ব্যবহার হিসেব করলে দেখা যাবে এ সকল পানির ব্যবহার সবচেয়ে বেশী অপচয়ের পরিমাণও বেশী। তাই এ সকল এলাকায় পানির দাম ভিন্ন হওয়া জরুরী।’

বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস বলেন, ‘ওয়াসায় কে দায়িত্বে থাকলো আর কে থাকলো না তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে নিরাপদ সুপেয় পানির ব্যবহার নিশ্চিত করা। নাগরিক সচেতনতার জন্য ওয়াসার পক্ষ থেকে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।’

অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ, স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু, তরুণ সংঘের চেয়ারম্যান ফজলু হক, সোহেল মৃধা প্রমুখ।

আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য এড. শাহেদা বেগম, মিতা রহমান, লায়ন সাব্বির আহমেদ।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে নদ-নদী খাল বিল পুকুরের পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। সুপেয় পানির আজ নিদারুণ হাহাকার। বিশ্বের সেরা সেরা পানি বিশেষজ্ঞদের মতামত আগামী বিশ্বযুদ্ধ হতে পারে পানি নিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিলে বেশ কয়েক বছর পর ঢাকা শহরবাসী বিদ্যুৎ সংকটের পাশাপাশি পানির সংকট অনুভব করে।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গ্রাহকদের পানির অপচয় রোধ করে সাশ্রয়ী হবার অনুরোধ জানান। ইতিমধ্যে সেই সংকট বহুলাংশে লাঘব হয়েছে সত্য কিন্তু আগামী দিনের এবং আগামী প্রজন্মের জন্য পর্যাপ্ত পানির নিরাপদ ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি নাগরিকদের জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরী।

আমাদের দাবি দ্রুত ডিএমএ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে নিরবিচ্ছিন্ন এবং ছিদ্র মুক্ত সরবরাহ লাইন নিশ্চিত করা। পাশাপাশি অবৈধ সংযোগ গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কিছু অসাধু মিটার রিডারদের দৌরাত্মের কারণে অনেক গ্রাহক অসৎ পথ অবলম্বন করে। এ সকল অসৎ ব্যক্তির কারণে ঢাকা ওয়াসা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এ সকল মাঠপর্যায়ের অসাধু ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে অনুরোধ করছি। আশা রাখি আমরা সচেতন হলে এবং কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সকল নাগরিকের জন্য এবং বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ সুপেয় পানির নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

-এসএম