বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে অবিরত গলছে মেরু অঞ্চলের বরফ। আর এভাবে গলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে তলিয়ে যাবে মালদ্বীপসহ উপকূলবর্তী বহু অঞ্চল। এই বিপর্যয় থেকে মুক্তির সুযোগ নেই লাল-সবুজের বাংলাদেশেরও। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এশিয়ার অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের নামও।
তবে এই সংকট মোকাবিলার প্রধান শক্তি হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানি বিমুখ নীতিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এ বিষয়ে কতটা প্রস্তুত সরকার? জ্বালানী নীতিতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কতটা এগোতে পারছে বাংলাদেশ? আর যদি না পারে, তাহলে বাধা কোথায়? এবারের বাজেটে কতটা গুরুত্ব দেওয়া দরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে? এসব বিষয়ে ভোক্তাকণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এস এম রাজিব।
ভোক্তাকণ্ঠ: বাজেটে ৪১ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মন্ত্রণালয়টির জন্য এই অর্থের প্রয়োজন রয়েছে কি না?
গোলাম মোয়াজ্জেম: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে বরাদ্দ, তার সিংহ ভাগই রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ খাতের জন্য। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের জন্য তুলনামূলক অনেক কম। সাধারণত বিদ্যুৎ বিভাগের জন্যে ৯৭ শতাংশের মতো বরাদ্দ রাখা হলেও জ্বালানি বিভাগের জন্যে মাত্র তিন শতাংশের মতো বরাদ্দ দেওয়া হয়। এখানে বিদ্যুৎ খাতে ইতিপূর্বে যে বরাদ্দ ছিল তার মধ্যে এডিপি প্রকল্পের জন্যই বেশি বরাদ্দ ছিল এবং বিদ্যুৎ খাতের অপারেটিং এক্সপেন্সিভ সেই অর্থে খুব বেশি নয়। তার মূল এক্সপেন্ডিচার হলো- বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য। আমার ধারণা, এবারের বরাদ্দের একটা বড় অংশ ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন রিলেটেড প্রকল্পগুলোর জন্য এবং সরকারের অধীনে যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে তার জন্য।
ভোক্তাকণ্ঠ: জ্বালানি খাতের উন্নয়নে এবারের বাজেটে কি ধরনের পরিকল্পনা রাখা দরকার?
গোলাম মোয়াজ্জেম: এ ক্ষেত্রে একদিকে ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশনকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার একটি আধুনিক গ্রিড সিস্টেমকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য। আর আরেকটি হলো- আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগে যাওয়া দরকার। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নে বিনিয়োগ যে শুধু সরকারই করবে- তা মনে করি না। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত থেকে বিনিয়োগ আসতে হবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আসা বিনিয়োগের যে রাজস্ব কাঠামো রয়েছে সেগুলোর মধ্যে হারমোনাইজেশনের দরকার। কিন্তু আমরা যা দেখছি যে- সরকার জীবাশ্ম জ্বালানির বিষয়ে যে সুবিধা দিচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে সেই সুবিধা দিচ্ছে না। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতেও সমপরিমাণ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
ভোক্তাকণ্ঠ: বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও জ্বালানি সংকটে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তারপরও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ কমিয়ে বিদ্যুৎ খাতে বাড়ানোর কারণ কী?
গোলাম মোয়াজ্জেম: বিদ্যুতে আমাদের একধরনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা আছে। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে আপনি দেখবেন যে- একদিকে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতায় রয়েছি, আমাদের ক্যাপাসিটি চার্জ উদ্ধৃত রয়েছে, আবার লোডশেডিংও পাচ্ছি। এর একটি কারণ হলো জ্বালানি সংকট। আরেকটি কারণ হলো- ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন লাইনে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না হওয়ার কারণ। সুতরাং এই খাতে দ্রুত বিনিয়োগ দরকার আছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ আইনের মেয়াদ ২০২১ সালে শেষ হলে আমরা এটার মেয়াদ আর না বাড়ানোর আহ্বান করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত এটার মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। অথচ এটি একদিকে প্রয়োজন ছিল না, অন্যদিকে বেশি কিছু সমস্যার সৃষ্টিও করেছে। এখানে প্রতিযোগীতামূলক বাজার কাঠামোতে আরও কম দামে বিদ্যুৎ-জ্বালানি কিনতে পারতাম, সেই সুযোগ হারাচ্ছি।
ভোক্তাকণ্ঠ: দেশে জ্বালানি সংকটের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এই সংকটের জন্য আমদানি নির্ভরতা দায়ী কি না?
গোলাম মোয়াজ্জেম: আমদানি নির্ভর যখন জ্বালানি খাত হবে, তখন আমদানির জন্য বড় ধরনের বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার করতে হবে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে আমাদের রিজার্ভের ভালো একটা উদ্ধৃত ছিলো, তখন কিন্তু জ্বালানি আমদানির জন্য চাপে পরি নাই। তবে এই যুদ্ধ আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাচ্ছে যে- আমদানি নির্ভর জ্বালানি কাঠামোর জন্য কিভাবে রিজার্ভের উপর চাপ পড়ছে এবং এখান থেকে বেড়িয়ে আসা দরকার। একইসঙ্গে আমদানি নির্ভরতা থেকে বেড়িয়ে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দিয়ে অভ্যন্তরীণ কাঠামোর দিকে যাওয়া কতটা জরুরী হয়ে পড়েছে- তা সম্মুখ উপলব্ধি করতে পারছি এই মুহূর্তে। তবে এ ধরনের বিষয় একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কারণ জীবাশ্ম জ্বালানিতে যারা বিনিয়োগ করেছেন, কোনো না কোনো ভাবে সরকারের সঙ্গে তাদের যোগসাজশ রয়েছে। তাই তাদেরকে এড়িয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যাওয়া সরকারের জন্য সহজ হবে না।
ভোক্তাকণ্ঠ: এবারের বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকী কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
গোলাম মোয়াজ্জেম: ভর্তুকী দেওয়ার প্রয়োজন হয় তখন, যখন ব্যয়ের চেয়ে আয় কম হয়। ব্যয় সংস্থানের জন্য বাড়তি আয়ের প্রয়োজন হয়। এখানে এটি ভাবার কোন কারণ নেই যে- বাড়তি ব্যয়ের জন্য ভোক্তা দায়ী! কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত বিদ্যুৎ খাতে বাড়তি ব্যয়ের যে ঘটনাটি ঘটছে, সেটি মূলত ক্যাপাসিটি পেমেন্টের জন্য। যেহেতু এখানে উদ্ধৃত ক্যাপাসিটি তৈরি হয়েছে, তাই সরকারকে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হচ্ছে। তবে এর সঙ্গে ভোক্তা জড়িত না থাকলেও সেই দায় ভোক্তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা একেবারেই অযৌক্তিক। সুতরাং ভর্তুকী বিষয়টি জনগণের উপর না চাপিয়ে সরকারের উচিৎ উদ্যোক্তা তথা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করা এবং এটাই উচিৎ হবে।
ভোক্তাকণ্ঠ: বাংলাদেশে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ার কারণ কী এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নের বাধা কোথায়?
গোলাম মোয়াজ্জেম: দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বড় পর্যায়ে এখনো জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ করা বা এটার যে সুবিধা প্রাপ্তি তার সঙ্গে সরকারের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সুবিধার বিষয়টি জড়িত রয়েছে। বর্তমানে তারা জীবাশ্ম জ্বালানি কাঠামোর সুবিধাভোগী এবং এই জায়গাটি ভাঙ্গতে চাচ্ছে না। যার ফলে এই জায়গাগুলো ঠিক রেখে ছোটখাটো জায়গা থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে দেখা হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক একটি বিদ্যুৎ কাঠামো করতে যে রাজনৈতিক অঙ্গিকার দরকার, সেই জায়গাতে ঘাটতি রয়েছে। এখানে ভূমি সংকটের কথা বলা হচ্ছে, সূর্যের তাপ বা বায়ু প্রবাহের মাত্রা কম থাকার কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে তার সব কিছুই পর্যাপ্ত রয়েছে।
ভোক্তাকণ্ঠ: ভূমি বা অর্থ সংকটের কারণে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানানো হচ্ছে। আসলে এ বিষয়ে আপনি একমত কি না?
গোলাম মোয়াজ্জেম: আমাদের এটা মনে রাখা দরকার যে, নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ কাঠামোর জন্যে শুধুমাত্র একটা কাঠামো দিয়ে এই চাহিদা পূরণের বিষয়টি ভাবা ঠিক নয়। অর্থাৎ গ্রিড বেজড সিস্টেমকেই একমাত্র সমাধান ভাবা ঠিক নয়। মিনিগ্রিড, অফগ্রিড, কমিউনিটি গ্রিডগুলোকেও বিবেচনায় রাখতে হবে। আর এগুলোর মাধ্যমে ছোট আকারে স্থানীয় ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব এবং পাশাপাশি রুফটপ সোলার সিস্টেমের মাধ্যমেও বিপুল পরিমাণ সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। সুতরাং সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যে ভূমি নয়, স্পেস দরকার। আর এটা স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর ছাদ ব্যবহার করেও পূরণ করা সম্ভব।
ভোক্তাকণ্ঠ: দেশের জ্বালানি সংকট মোকাবিলা বা নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নে বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র কতটা উপযোগী?
গোলাম মোয়াজ্জেম: ইতিমধ্যে বেশকিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উইন্ডমিল একটি সাকসেসফুল প্ল্যান হতে পারে। এই মুহূর্তে সরকারি খরচে মহেশখালীতে একটি উইন্ডমিল প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এটিও একটি নতুন ধরনের প্রেক্ষাপট তৈরি করবে। উপরন্তু বেশকিছু উইন্ডমিলের প্রস্তাবনা বিবেচনায় রয়েছে। সুতরাং উইন্ডমিলের জন্য যে পরিমাণ বায়ু প্রবাহের দরকার সেই মাত্রায় বায়ু প্রবাহ নেই বলে এতোদিন যে অনুমান ছিল, তাও ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়াও বলা হয়েছিল- যথেষ্ট মাত্রায় সূর্যের আলো নেই, সেই ধারণাও ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি দেশে ৪০/৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাও রেকর্ড করা হয়েছে।
ভোক্তাকণ্ঠ: ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। আসলে এটা ঠিক কি না?
গোলাম মোয়াজ্জেম: ইউএনডিপিসহ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, সরকার যদি চায় তাহলে সম্ভব। সুতরাং সেই দিকে যাওয়া উচিৎ। আবার যদি জ্বালানি খাত থেকে বিবেচনা করেন, তাহলে সেচ প্রকল্পে যে পরিমাণ ডিজেল ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটি যদি সৌর বিদ্যুতে পুরোপুরি কনভার্ট করতে পারি তাহলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো সম্ভব। তবে মনে রাখা দরকার যে, এই ধরনের ক্ষেত্রে প্রাথমিক যে প্রতিবন্ধকতা সেগুলো যদি সরে যায়, তখন কিন্তু বিনিয়োগ সরল রৈখিক ভাবে বাড়ে না, তখন বিনিয়োগ বাড়ে গুণিতক আকারে। অর্থাৎ এক টাকার বিনিয়োগ ১০০ টাকায় রুপান্তরিত হয়।
ভোক্তাকণ্ঠ: ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে ৪০ শতাংশ বা ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে পাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আসলে এটা কি পাওয়া যাবে?
গোলাম মোয়াজ্জেম: সরকার যদি তার টার্গেট মতো ৪০ শতাংশেও যেতে পারে, সেটির জন্যে ধন্যবাদ দেব। কিন্তু যেটির জন্য ভয় পাচ্ছি তা হলো- নতুন যে প্রস্তাবিত সমন্বিত জ্বালানি নীতি-২০২২ হয়েছে, সেখানে ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির পরিবর্তে ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি শব্দটি যোগ করা হয়েছে, আবার তাও সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। আর এই পরিবর্তনের মাধ্যমে এক কথায় নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে ডিসকানেক্ট করা হচ্ছে। এখানে আমাদের তথ্য-উপাত্তে যেটি দেখা যাচ্ছে যে- এই ৪০ শতাংশ মূলত ১৬ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে হবে। আর বাকিটা তারা পরিচ্ছন্ন জ্বালানির নামে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের মতো উৎস থেকে সংগ্রহ করবে।
ভোক্তাকণ্ঠ: উন্নত দেশগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নে কাজ করছে, আবার তারাই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করছে। তাদের এ নীতিকে কিভাবে দেখছেন?
গোলাম মোয়াজ্জেম: এই জায়গাগুলো হঠাৎ করে হয়নি। এই জায়গা দীর্ঘদিন ধরে তৈরি হয়েছে। তবে সাম্প্রতিককালে কপ-২০২৬ সম্মেলনে উন্নত দেশগুলো একটি কমিটমেন্ট করেছে যে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নতুন করে তারা নিজের দেশে বা বাইরের দেশেও বিনিয়োগ করবে না এবং বিনিয়োগে উৎসাহিতও করবে না। আর এই অবস্থানকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। এই পরিকল্পনায় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলো অংশগ্রহণ করেছে। আশা করছি চীনও যুক্ত হবে। জাপানও যুক্ত হয়েছে এবং তার অংশ হিসেবে মাতারবাড়ি-২ প্রকল্পের বিনিয়োগ সড়িয়ে নিয়েছে। এই মুহূর্তে মাতার বাড়ি-১ এর কাজ চলছে। আমরা চাই- জাপানসহ অন্যান্য দেশগুলো বাংলাদেশে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ না করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করুক।
ভোক্তাকণ্ঠ: জ্বালানি সংকটে ধুকছে আবাসিক-বাণিজ্যিক এমনকি শিল্পখাতও। আবার অপার সম্ভাবনা থাকলেও খনিজসম্পদ উত্তোলনে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও দাবি করছেন ভূতত্ত্ববিদরা। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
গোলাম মোয়াজ্জেম: যেহেতু অভ্যন্তরীণ জ্বালানির মধ্যে যে জ্বালানিগুলো রয়েছে, তার সবগুলোর মধ্যেই পরিবেশ দূষণের একটা বিষয় রয়েছে। তাই কয়লা উৎপাদনের বিষয়টি সমর্থন করি না। আমরা গ্যাসের ক্ষেত্রে একটা ট্রান্সেশনাল এনার্জি হিসেবে মেনে নিচ্ছি। কিন্তু গ্যাস এবং এলএনজি সেই অর্থে আসলে সমার্থক। তাই আমদানি নির্ভরতা কমানোর অংশ হিসেবে আমরা মনে করি- গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি করা দরকার এবং সে দিক থেকে সরকার নিজস্ব বিনিয়োগের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে পারে। এখানে গ্যাস উন্নয়নের জন্য সরকারের কাছে যে রিজার্ভ ফান্ড রয়েছে, সেটা ব্যবহার করেও গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে পারে। আমরা আশা করবো যে, ৪৬টি কূপ খননের যে টার্গেট নিয়েছে সরকার সেটি যেন থমকে না যায়। তবে সমুদ্রবক্ষে গ্যাস উত্তোলনের জন্য বিদেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। কেননা সাগরে গ্যাস উত্তোলনের জন্য অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা এখনো সীমিত। তাই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে টার্মস এন্ড কন্ডিশনকে এট্রাক্টিভ করা দরকার, যাতে তারা বিনিয়োগে এগিয়ে আসে।