ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা। এই সচেতনতার অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে এই সেমিনার।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের অধ্যাপক ড. হবিবুল্লাহ সম্মেলন কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দের অংশগ্রহণে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অবহিতকরণ ও বাস্তবায়ন বিষয়ক সেমিনারে মূখ্য আলোচক হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ ও ভোক্তা অধিদপ্তরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ ও প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশের এর অংশ হিসেবে অধিদপ্তর যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোঁড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ও ভোক্তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছে।
সভায় মহাপরিচালক এই সেমিনারের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বিষয়ে সচেতন করার পাশাপাশি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা প্রদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে শিক্ষার্থীদের বর্তমান বাজার ব্যবস্থা সম্পর্কে বাস্তবিক ধারণা হবে। এছাড়াও ভোক্তা-অধিকার বিষয়ে গবেষণা করা হলে গবেষণালব্ধ ফলাফল আমাদের পলিসি তৈরিতে সহায়ক হবে। এ বিষয়ে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ বি এম শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল মঈন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শহরিয়ার, প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ভোক্তাদের চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ ভোগ্যপণ্য ৪-৫টি কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তার প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের যোগান দিচ্ছে। ব্যবসার মূল লক্ষ্য লাভ করা তবে সেখানে ভোক্তার সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা দরকার। ভোক্তাদের নিজেদের অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের পাশাপাশি ভোক্তাদের স্বার্থ দেখতে হবে। ভোক্তা-অধিকার রক্ষায় সকলকে সমন্বিত ভাবে কাজ করতে হবে।
এছাড়াও, তিনি ভোক্তা অধিদপ্তরকে আসল পণ্য ও নকল পণ্যের তুলনা করার লক্ষ্যে একটি মিউজিয়াম করার প্রস্তাব দেন।
স্বাগত বক্তব্যে অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার শোকের মাস অগাস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ভোক্তা-অধিকার বিষয়ে প্রচার-প্রচারণায় এক নবদিগন্তের সূচনা হলো।
পরে ভোক্তা অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনটি ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে যেভাবে ভূমিকা পালন করছে সে বিষয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক তাহমিনা বেগম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল মঈন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ ও ভোক্তা অধিদপ্তরের মধ্যে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। তার জন্য দুই প্রতিষ্ঠানকেই আমার পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদেরকে নৈতিক বিষয় মাথায় রেখেই ভোক্তাদের সন্তুষ্টি বিধান নিশ্চিত করে লাভ করতে হবে। এ লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ভোক্তাদের সচেতন করার লক্ষ্যে এ ধরনের প্রোগ্রাম আয়োজন করা জরুরি।
মুক্ত আলোচনায় মহাপরিচালক অংশগ্রহণকারীবৃন্দের ভোক্তা-অধিকার আইন সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। আলোচনা শেষে মহাপরিচালক শিক্ষার্থীবৃন্দকে ভোক্তা-অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে তথা অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে আহ্বান জানান।
সেমিনারের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এবিএম শহিদুল ইসলাম বলেন, ভোক্তা অধিকার রক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। তিনি ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গ্রুপ করে প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রস্তাব রাখেন।
এছাড়াও তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর পরিধি বাড়ানোর অনুরোধ জানান।
সেমিনার শেষে মাস্টার্স অব প্রফেশনাল মার্কেটিং (MPM) প্রোগ্রাম চালুকরণ ও বর্ণিত প্রোগ্রামসহ মার্কেটিং বিভাগের কারিকুলামে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।
-এসআর