ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি আনতে একটি প্রটোকল স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে। সেপ্টেম্বরে রূপপুরের জন্য রাশিয়া থেকে বিশেষ বিমানে আসবে ইউরোনিয়াম।
বুধবার সাইবেরিয়ায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর ও রাশিয়ার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সি দেইরি এ প্রটোকলে নিজ নিজ পক্ষে স্বাক্ষর করেন।
চুক্তি অনুযায়ী, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফ্রেশ ফুয়েল হিসাবে রাশিয়ার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের কাছ থেকে ইউরেনিয়াম কিনবে বাংলাদেশ।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো রসাটমের পক্ষে এক ইমেইল বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইমেইল বার্তায় জানানো হয়, রূপপুরের জন্য রাশিয়া থেকে জ্বালানি আসবে বিশেষ বিমানে। এরপর সড়ক পথে বিশেষ নিরাপত্তায় পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে নিয়ে যাওয়া হবে। এই জ্বালানি পরিবহন করতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাকে (আইএইএ) অবহিত করতে হয়। সে আনুষ্ঠানিকতাও সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি পারমাণবিক স্থাপনা হিসাবে উন্নীত হবে। জ্বালানি হিসেবে প্রথম ধাপের পর আরও দুই ধাপে ইউরেনিয়াম সাধারণ চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া থেকে বিনামূল্যে পাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রথম তিন বছরে আসবে এই তিনটি জ্বালানির ধাপ।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেছেন, আগামী বছর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম দেশে আসবে। ফলে আগামী বছরের ডিসেম্বর থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া দ্বিতীয় ইউনিট গ্রিডে যাবে ২০২৫ সালে।
রসাটম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানায়, রূপপুরের জন্য বুধবার রসাটমের জ্বালানি কোম্পানি টেভেলের একটি প্রতিষ্ঠান নভোসিবিরক্ত কেমিক্যাল কন্সেন্ট্রোস প্ল্যান্টে (এনসিসিপি) এই জ্বালানির এক্সসেপটেন্স ইন্সপেকশন সম্পন্ন হয়েছে।
ইন্সপেকশনে অংশ নেয় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, এনসিসিপি, টেভেল ও এতমন্ত্রয় এক্সপোর্ট (এএসই) প্রতিনিধিরা। সফল ভাবে পরিদর্শন সম্পন্ন হওয়ার পরই এক্সসেপটেন্স প্রটোকলে স্বাক্ষর করেন রূপপুর এনপিপি নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর এবং এএসই ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও নির্মাণ প্রকল্পের অপর প্রকল্প পরিচালক আলেক্সি দেইরি ।
ইমেইল বার্তায় বলা হয়, প্রটোকল স্বাক্ষর হওয়ার পর এই ফ্রেশ পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদনকারী কারখানা থেকে বাংলাদেশে শিপমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেল। আশা করা হচ্ছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই এই জ্বালানি বাংলাদেশে পৌঁছাবে।
টেভেলের কোয়ালিটি ডিরেক্টর আলেক্সান্দার বৃথালভ বলেন, সফল ভাবে পরিচালিত আমাদের সকল ভিভিইআর-১২০০ পাওয়ার ইউনিটগুলো থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে টেতেন ফুলে কোম্পানি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য উন্নত এবং কার্যকরী পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন করছে। প্রাক-উৎপাদন এবং উৎপাদনের সকল খাপে এমনকি বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহের ক্ষেত্রে আমরা গ্রাহকের সকল অনাধিকারগুলো বিবেচনায় নিয়েছি। আমি অত্যন্ত আশাবাদী যে, আমাদের এই জ্বালানি আবারও রুশ পারমাণবিক প্রযুক্তির শ্রেষ্ঠত্ব ও সর্বোচ্চ নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণ করবে।
রূপপুর প্রকল্পের জেনারেল কন্ট্রাকটর এএসই ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলেক্সি দেইরির বরাত দিয়ে রোসাটম জানায়, রূপপুর প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজ সম্পূর্ণ ভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে। রসাটমের প্রকৌশল শাখা সকল ক্ষেত্রেই তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পুরোপুরি ভাবে পূরণ করছে। প্রকল্প সাইটেই জ্বালানি পৌঁছানোর পূর্বেই প্রথম ইউনিট জ্বালানি লোডিংয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে। এছাড়াও রিয়্যাক্টরে জ্বালানি লোডিংয়ের আগ পর্যন্ত সকল নিরাপত্তা চাহিদা পূরণ করেই এই জ্বালানি সংরক্ষণের সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে।
বাংলাদেশকে যে জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে তা বর্তমানে তিন ভিভিইআর-১২০০ রিয়্যাক্টরভিত্তিক তিনটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিটে ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলো হলো, লেনিনগ্রাদ এনপিপি, নভোভারোনের এনপিপি এবং বেলারুশ এনপিপি।