ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: ডাব কেনা-বেচার সময় পাকা রশিদ বা ভাউচার না পেলে ভোক্তা-অধিকার আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
সোমবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনে ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে ডাবের পাইকারি, খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘সারাদেশে ডাবের যে ক্রয়-বিক্রয় হয়; ক্রয় কত, বিক্রয় কত- ব্যবসায়ীদের নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্যাডে পাকা ভাউচার রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যবসা করতে হলে আইন মেনে ব্যবসা করতে হবে। ক্রয়-বিক্রয়ের ভাউচার রাখতে হবে। ভোক্তা-অধিকার আইন অনুযায়ী এটা বাধ্যতামূলক। এখন এটা আমরা শক্ত ভাবে ধরছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডাব ব্যবসায়ীদের ক্রয়-বিক্রির রশিদ, পাকা ভাউচার ও ডাবের মূল্য তালিকা টাঙিয়ে রাখতে হবে। মঙ্গলবার থেকে আমরা সারাদেশে এটি পরীক্ষা করবো। এগুলো করার পর বাজারে যদি প্রভাব না পড়ে, তাহলে পরবর্তীতে আমরা আরও কাজ করবো। ডাবের বাজার যতদিন স্থিতিশীল না হবে, ততদিন আমরা এখানে কাজ করবো।’
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘টোটাল ব্যবসায়ী সমাজকে আপনারা কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন এবং এটা কোনো ভাবেই হওয়া উচিৎ না। আমরা ব্যবসাকে প্রমোট করছি কিন্তু যে ব্যবসায়ী অসাধু বা যে ব্যবসায়ী এসব কাজের সঙ্গে লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। তাদের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করে যাব।’
তিনি বলেন, ‘আমি কোনো দিন চিন্তা করিনি, ডাব নিয়ে আমাকে এভাবে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসতে হবে। ডাবও এখন আমাদের টক অব দ্য কান্ট্রি। আমি ভাবিনি ডাব নিয়ে আমাদের এভাবে কাজ করতে হবে।’
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘গত কিছুদিন ধরে ডাবের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। ডেঙ্গু রোগের একটি বড় চিকিৎসা হলো তরল পানি পান করা। এ জন্য প্রাকৃতিক ডাবই হলো সবচেয়ে উত্তম পানীয়। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে ডাবের চাহিদা বাড়ায় পণ্যটি দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। ডাবের দাম বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। ডাবের দাম বৃদ্ধির সুযোগ এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকে নিচ্ছেন।’
ডেঙ্গুকে পুঁজি করে ডাবের দাম বড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি স্পষ্ট। অতএব এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা চাই ডাব ব্যবসায়ীরা সম্মানের সঙ্গে এই ব্যবসা করবেন। অতি মুনাফাকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ। তাদের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করে যাব।’
সম্প্রতি ডাবের আড়তে ও বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেসব তথ্য পেলাম, তাতে ডাবের দাম খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১০০ টাকার মধ্যে থাকার কথা। আশা করি ডাবের বাজারের যে অস্থিরতা সেটি নিরসন হয়ে ৭০-৮০ শতাংশ দাম কমে যাবে।’
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আজকে এখানে ব্যবসায়ীরা ডাবের দাম বৃদ্ধির যেসব কারণ বললেন, এগুলো অপ্রত্যাশিত নয়। আপনারা অনেক অজুহাত দাঁড় করাবেন। ব্যবসায়ীরা ১০ শতাংশ লাভ করবেন, এটি যৌক্তিক। কিন্তু আপনি যদি এক সপ্তাহে বিনিয়োগের পুরো টাকা উঠিয়ে নেন, সেটি তো ব্যবসা হতে পারে না। আমি কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। আমি চাই, ব্যবসায়ীরা একটি সিস্টেমের মধ্যে আসুক। প্রচলিত আইন মেনে চলুক।’
সভায় অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘আমরা কখনো চাই না ব্যবসায়ীদের আমরা জরিমানা করি। আমরা ব্যবসায়ীদের বার বার বলি, প্রচলিত আইন মেনে ব্যবসা করার। ক্রয়-বিক্রয়ের পাকা রশিদ রাখতে। যাতে আমরা পণ্যের দামটা শনাক্ত করতে পারি। ডাব ব্যবসায়ীরা যদি নিয়মের মধ্যে না আসেন, তাহলে আমাদের তদারকি অভিযান একটানা চলতে থাকবে।’
সভায় পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ডাবের দাম বাড়ার বিভিন্ন কারণ তুলে ধরেন। ডাবের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তারা ডাবের উৎপাদন কম হওয়ার কথা জানান। পাশাপাশি তারা একে অন্যকেও অযৌক্তিক ভাবে বেশি দামে ডাব বিক্রির জন্য দায়ী করেন।
সভায় সাম্প্রতিক সময়ে ডাবের বাজার ও আড়তে অভিযান চালানো ও ডাবের বাজারের বিভিন্ন অনিয়ম কথা তুলে ধরেন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান আব্দুল জব্বার মন্ডল।
এ সময় কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেকটা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কখনো সয়াবিন তেল, কখনো পেঁয়াজ, আলু, চিনি, ডিম। এবার ডাব নিয়ে নতুন সিন্ডিকেট শুরু হয়েছে। দেশের ৮০ ভাগ ব্যবসায়ী অসৎ। তারা অতি মুনাফা লোভী। সুযোগ পেলেই অতি মুনাফায় মেতে উঠে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা যারা অসৎ ভাবে ভোক্তাদের জিম্মি করে মুনাফা করেন আপনাদের কি বিবেক নেই। অতি মুনাফা করে এভাবে লুটেপুটে খাবেন এ জন্য তো আমরা দেশটা স্বাধীন করিনি। ব্যবসা করতে হলে আইন মেনে ব্যবসা করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভোক্তা অধিদপ্তরকে বলবো শুধু জরিমানা করে কোনো লাভ হবে না। কয়েকজন অসাধু পেঁয়াজ ব্যবসায়ীকে, চিনি ব্যবসায়ীকে, তেল ব্যবসায়ীকে এবং কয়েক অসাধু ব্যবসায়ীকে বড় ধরনের শাস্তি দিন দেখবেন অনেকটা অনিয়ম কমে গেছে।’
সভায় এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি, ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও ডাব ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
-এসআর