ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক : ফেনী জেলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও বিশুদ্ধ বায়ুর প্রসারে জলবায়ু সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ফেনী পৌরসভার সভাকক্ষে ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস ফেনী জেলা এর আয়োজনে ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও বিশুদ্ধ বায়ুর প্রসারে’ একটি জলবায়ু সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী।
ইয়ুথনেট কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবেশ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সমন্বয়কারী মোহাইমিনুল ইসলাম জিপাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেনী সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. নূরুল আজিম ভূঁইয়া, দৈনিক ফেনীর সম্পাদক আরিফুল আমিন রিজভী, সিভিল সার্জন অফিস ফেনীর মেডিকেল অফিসার (সমন্বয়) ডা. মো. আসিফ উদ্দৌলা, ফেনী ইউনিভার্সিটি প্রভাষক অ্যাডভোকেট কাজী তাসনিম জাহান।
ইয়ুথনেট ফেনী জেলার সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মুরাদের সঞ্চালনায় সংলাপে প্যানেল আলোচক ছিলেন দৈনিক মানবজমিনের জেলা প্রতিনিধি নাজমুল হক শামীম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফেনী পৌরসভার মেয়র বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় প্রথম সারিতে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত দুর্যোগে প্রাণহানি কমলেও, ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। তাই আমাদের টেকসই সমাধানে যেতে হবে।
ফেনী সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. নূরুল আজিম ভূঁইয়া বলেন, বায়ুদূষণসহ অন্যান্য পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হল জীবাশ্ম জ্বালানি। আর এই জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প শুধু বিদ্যুৎ খাতে নয়, পরিবহন খাতেও নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার ঘটাতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার না কমালে বায়ুমানের উন্নয়ন সম্ভব নয়। পরিবেশ একটি দূষণ অন্য সমস্যাগুলোকে বাড়িয়ে দেয়। বায়ুকল ও সোলার প্যানেলের মত প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার নির্মল বায়ু নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
ডা. আসিফ উদ্যৌলা বলেন, তরুণ-তরুণীরা জলবায়ু নিয়ে চিন্তা করছে এটি জাগানিয়া। অল্প বয়সে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, মানুষের ঝুঁকি ও ক্ষতি নিয়ে কাজ করছে এটি আগামীর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে। আমাদের জীবনের সঙ্গে জলবায়ু ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বিশ্বের উন্নতশীল বহু রাষ্ট্রও জলবায়ুর কাছে ধরাশায়ী। এটির মোকাবিলায় আমাদের সচেতন হতে হবে।
দৈনিক ফেনী পত্রিকার সম্পাদক আরিফুল আমিন রিজভী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আমরা যতটা না দায়ী তারচেয়ে বেশি দায়ী বহির্বিশ্বের উন্নত দেশগুলো। অথচ আমরা বেশি আক্রান্ত। জলবায়ু পরিবর্তন একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া। তাই আমাদের পূর্বসূরিরা যেভাবে জলবায়ুর ক্ষতির থেকে নিজেদের রক্ষা করেছেন আমাদেরও সেভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। সামাজিকভাবে সচেতনতা ও আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
কাজী তাসনিম আহমেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের জীবনের নানা পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। ঋতুতে বৈচিত্র্য দেখা দিছে। উন্নত জীবনের আশায় আমরা বনাঞ্চল ধ্বংস করছি, জলাশয় ভরাট করে ফেলেছি। অথচ নতুন করে বনাঞ্চল তৈরিতে কাজ করছি না। ফলে আমাদের জীবন যাপনে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
প্যানেল আলোচক সাংবাদিক নাজমুল হক শামীম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য প্রথমে ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে৷ প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার ও পোড়ানোয় সতর্ক হতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরিতে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
এ সময় ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যেকোনো কার্যক্রমে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
ইয়ুথনেট কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবেশ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সমন্বয়কারী মোহাইমিনুল ইসলাম জিপাত বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সংকট। এই সংকট উত্তরণে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুতে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হচ্ছে, যা বায়ুর গুণগত মান নষ্ট করছে এবং পৃথিবীকে নানা রকম সংকটে ফেলছে। আমাদের পৃথিবী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে, জীবাশ্ম জ্বালানি ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসগুলোকে ব্যবহারে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করতে হবে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রতিটি দেশের নীতি, কৌশল ও পরিকল্পনার সঙ্গে একীভূত করার পাশাপাশি গৃহীত উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা ও টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তার পাশাপাশি নির্মল বায়ু নিশ্চিত করতে নবায়নযোগ্য শক্তি প্রসারের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, ফেনীর তরুণদের আয়োজনে আজকের এই জলবায়ু সংলাপ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। ভবিষ্যতে এই রকম আয়োজনে তরুণদের আমি সহযোগিতা করে যাব।
সংলাপে ফেনীর ইয়ুথনেটের ফেনী জেলার সদস্যরা, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকমণ্ডলী, শিক্ষার্থী এবং পরিবেশবাদী সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।