ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: রমজানের প্রয়োজনীয় সব পণ্যই বর্তমানে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি পণ্যের পাইকারি থেকে খুচরা দামের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। খুচরা ব্যবসায়ীদের কম দামে পণ্য কিনে বেশি দামে বিক্রির দায় নেবেন না আড়তদাররা।
রমজানকেন্দ্রিক চাহিদা বাড়ে প্রায় সব ধরনের ডালেরই। কম খরচের হোটেল-রেস্তোরাঁয় পেঁয়াজু ও বেগুনির উপকরণ বেসন তৈরিতেও ডালের ব্যবহার হয়। তাই চাহিদা বেশি থাকায় মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে এ পণ্যটি।
বর্তমানে খুচরায় এক কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। যার পাইকারি মূল্য ৮৫ থেকে ৯১ টাকা। অন্যদিকে, মুগডালের পাইকারি দাম ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। তবে খুচরায় তা বিক্রি হচ্ছে আরও ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশিতে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মুগডালের খুচরা দর ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। মসুর ডালের দামের পার্থক্য ১০ টাকা। এঙ্কর ডালের কেজি পাইকারিতে ৬৮ টাকা হলেও খুচরায় তা ৮০ টাকা। তবে অতিরিক্ত দামের তারতম্যের দায় নিতে রাজি নন আড়তদাররা।
ডালের দাম বেশি থাকার বিষয়ে এক বিক্রেতা বলেন, পণ্যের সরবরাহ ভালোই। কিন্তু দাম বেশি। আমরা বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করি।
রোজায় অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকার শীর্ষে রয়েছে তেল ও চিনি। শুধু এ মাসেই প্রয়োজন সাড়ে তিন লাখ টন তেল ও তিন লাখ টন চিনি। আড়তদাররা বলছেন, দেশের বাজারে তেল ও চিনি দুটোই নিয়ন্ত্রণ করে দেশের বড় বড় কোম্পানি। বাজারের কলকাঠি রয়েছে তাদের হাতেই।
এক ব্যবসায়ী বলেন, শুনেছি সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে বসে রমজান উপলক্ষে চার পণ্যের শুল্ক কমাবে। এখন সরকার যদি তা করতে পারে, তাহলে আশা করি বাজারে এসব পণ্যের দাম কমবে।
তেলের দামের বিষয়ে আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, মাঝে দিয়ে তেলের দাম কিছুটা বেড়েছিল। এছাড়া আমাদের কাছে আগের মূল্যের তেলও রয়েছে। আমরা দাম সমন্বয় করেই বিক্রি করছি। আমরা মূলত কোম্পানি থেকে কিনে এক/দুই টাকা লাভ করে পণ্য বিক্রি করি।
এদিকে, বছরজুড়ে খেজুরের চাহিদা ৯০ হাজার টন। বর্তমানে বরই খেজুর মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকায়। গত বছর এটির কেজি ছিল ২২০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। মাবরুম খেজুর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। যা গত বছর ছিল ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা। এছাড়া বছর ব্যবধানে দাম বেড়ে প্রতি কেজি গলা জাতের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়, জাহিদি ২৫০ টাকায়, দাবাস ৫০০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা এবং আজওয়া ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।
এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, দামের তারতম্যের কারণে খুচরা বিক্রেতারা কিনছেন কম। খেজুরের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতি কেজিতে ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা বাড়তি।
অন্যদিকে, রমজানের আগে বাজারে হালি পেঁয়াজ আসবে না, আর তাই দাম কমারও সুযোগ নেই। এমনটা জানিয়ে এক বিক্রেতা বলেন, হালি পেঁয়াজ আসতে দেরি আছে। সামনে রমজান চলে আসছে। ওইদিকে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহও নেই। কাজেই আমরা দাম কমার কোনো সম্ভাবনা আমরা দেখছি না।
বর্তমানে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। তবে বাজারে দেখা নেই পুরাতন দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের। দু-একটি দোকানে পাওয়া গেলেও সেটি বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
বাজার পরিস্থিতি নিয়ে রাজধানীর মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতি বলছে, পণ্যের দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে সময়মতো পণ্য আমদানি করতে না পারা। রমজান শুরু হওয়ার তিন মাস আগে থেকে যদি পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খুলতে ব্যাংকগুলো সহায়তা করত, তাহলে পণ্যের দাম কমে আসত।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সৈয়দ বসির আহমেদ বলেন, রমজান মাস শুরু হওয়ার তিন থেকে চার মাস আগে থেকে যদি পদক্ষেপ নেয়া হয়, তাহলে ভালো হয়। আমরা এটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও বলেছি। আমরা বলেছি যে পদক্ষেপ নেন, আর না হয় ব্যবসায়ীদের একটি সুযোগ দেন। এটি কিন্তু লাভের সুযোগ নয়। এটি হচ্ছে আমাদের পণ্য আমদানি সুযোগ।