ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হবে, এ খবর শোনা যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। এমন খবরে অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ। দাম একদিন কমে তো একদিন বাড়ে। পেঁয়াজের আড়তদারদের মধ্যেও নেই স্বস্তি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে ‘পেঁয়াজ আসছে’, ‘পেঁয়াজ আসছে’ ঘোষণায় বাজার অস্থির হয়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজের আশায় অন্য কোনো দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা এলসি করছেন না। ফলে সরবরাহে তৈরি হচ্ছে সংকট। তারা আরও বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ এলে বা আমদানি না করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা স্বস্তি পেতেন।
দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও দাম না কমায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য দেনদরবার শুরু করে সরকার। পবিত্র রমজান মাসে দেশের বাজারে দাম কমাতে নির্দিষ্ট পরিমাণে চিনি ও পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিতে ভারতকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয় বাংলাদেশ।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সাংবাদিকদের জানান, রোজার আগেই ভারত থেকে দেড় লাখ টন চিনি ও পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। এর মধ্যে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ ও এক লাখ মেট্রিক টন চিনি।
এরপর বাংলাদেশে সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতিও দেয় ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, বাহরাইন এবং মরিশাসেও সীমিত আকারে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ভারত।
ভারত সরকারের এমন ঘোষণার পরই দেশে পেঁয়াজের দামে প্রভাব পড়তে শুরু করে। চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে দাম কমতে শুরু করে। তবে তিন দিনেও ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে না আসায় ফের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
ভারত স্থানীয় বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখতে গত ০৮ ডিসেম্বর থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এরপর বাংলাদেশের বাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে দাম। দেশের বাজারে ২৪০ টাকা পর্যন্ত ওঠে পেঁয়াজের দাম। পরবর্তী সময়ে দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু করলে ধীরে ধীরে কমে ৫০-৬০ কেজিতেও পেঁয়াজ বিক্রি হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে আবারও দাম বেড়ে এখন ১২০-১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, ঢাকা মহানগরীর খুচরা বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১১০-১২০ টাকা এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজ ১০০-১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও দেশি পেঁয়াজ ছিল ৬৫-৭৫ টাকা এবং এক বছর আগে এই সময়ে দাম ছিল মাত্র ৩০-৩৫ টাকা কেজি।
অন্যদিকে, এক মাস আগে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতিকেজি ৮০-৯০ টাকা এবং এক বছর আগে একই সময়ে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫-৪০ টাকা।
এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের আড়তগুলোতে প্রচুর পেঁয়াজের মজুত দেখতে পাওয়া যায়। প্রায় সব আড়তেই রয়েছে দেশি নানান জাতের পেঁয়াজ। রয়েছে ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকার মতো কমে গিয়ে বৃহস্পতিবার আবার বেড়েছে।
মধ্যম চাক্তাইয়ের বশর অ্যান্ড সন্সের ম্যানেজার তাহসিনুল করিম বলেন, চট্টগ্রামে এখন দেশি পেঁয়াজ রয়েছে। মেহেরপুরি ও চুয়াডাঙ্গার ভালোমানের মোটা পেঁয়াজ পাইকারিতে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ আসবে বলা হলেও এখনো আসেনি। এখন ভারতীয় যেসব পেঁয়াজ বাজারে রয়েছে, সেগুলো বিগত সময়ে বর্ডার থেকে ‘নানা ভাবে’ দেশে আসা। এগুলো ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
তিনি দাবি করেন, ভারতীয় পেঁয়াজ নিয়ন্ত্রণ করে বর্ডারকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট। ভারতীয় পেঁয়াজ আসার খবরে চট্টগ্রামের ছোট ছোট পেঁয়াজ আমদানিকারকরা অন্য দেশের জন্য এলসি খোলা বন্ধ করে দিয়েছেন। অথচ এখন বাজারে পেঁয়াজের দাম এত হওয়ার কথা নয়। ভারত থেকে পেঁয়াজ আনা হবে না সরকার এমন সিদ্ধান্ত চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দিলে, অসংখ্য ব্যবসায়ী আমদানি করতেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য চট্টগ্রামের ছোট ছোট অনেক আমদানিকারক মুখিয়ে আছেন। বর্তমানে মিশর, তুরস্ক, পাকিস্তান, চীনসহ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ রয়েছে। এসব পেঁয়াজ আমদানি করা গেলে বাজারে ৫০-৬০ টাকার বেশিতে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হতো না।
মধ্যম চাক্তাইয়ের মেসার্স জে কে ট্রেডিংয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা যায়। ওই আড়তের ম্যানেজার বলেন, ভারতীয় এসব পেঁয়াজ পাইকারিতে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স আল্লাহর দান নামের পেঁয়াজের আড়তে কথা হয় মো. সুমনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্তমানে চুয়াডাঙ্গার দেশি পেয়াঁজ রয়েছে। ৭৪-৭৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া পাবনার মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা কেজিতে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে খাতুনগঞ্জের লামার বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসার খবরে খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা কমে গিয়েছিল। ভারতীয় পেঁয়াজ ৯৫-১০০ টাকায় চলে এসেছিল। বৃহস্পতিবার আবার তা বেড়ে ১১৬-১১৭ টাকা হয়েছে। তাছাড়া দেশীয় মেহেরপুরি পেঁয়াজও ৬৫-৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ ৯৫-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।