ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ৪৯ নম্বর স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে পুরোপুরি দৃশ্যমান হলো যমুনার বুকে দেশের দীর্ঘতম ‘বঙ্গবন্ধু রেলসেতু’। আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রেলওয়ে সেতুর ৫০টি পিলারের ওপর ৪৯টি স্প্যান বসিয়ে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার সুপার স্ট্রাকচার এখন পুরোটাই দৃশ্যমান। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১৬ শতাংশ কাজ দ্রুতই সম্পন্ন করা হবে। বাকি কাজের মধ্যে এখন সেতুর ওপর ডুয়েল গেজ রেললাইন বসানোর কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ ভাগ রেললাইন বসানোর কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু অ্যাডজাস্টমেন্ট বাকি রয়েছে। অ্যালাইনমেন্ট ও লেভেল ঠিক করা হচ্ছে। বিভিন্ন ড্রেনের কাজ ও কালভার্টগুলোর কাজ শেষ হয়ে গেছে। দুই পাশের স্টেশন বিল্ডিংয়ের কাজ, প্ল্যাটফর্ম স্থাপনের কাজ ও ট্র্যাকের কাজ চলছে। আর দ্রুত সময়ের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সাত হাজার ৩৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক কাজ করছে। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। তবে আশা করা যায় ডিসেম্বরের শেষ দিকে উদ্বোধন করা সম্ভব হবে।
জানা যায়, জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। এর নির্মাণ ব্যয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটি নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই রেলসেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের মার্চ মাসে। ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে জাপানি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবাইসি, টোআ করপোরেশন ও জেইসি (ওটিজে) জয়েন্ট ভেঞ্চার।
ডব্লিউডি-২ প্যাকেজটি বাস্তবায়নে রয়েছে জাপানের আইএইচআই ও এসএমসিসি জয়েন্ট ভেঞ্চার। এছাড়া সেতুর উভয় প্রান্তের দুই স্টেশনে সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনে ডব্লিউডি-৩ নামে অপর একটি প্যাকেজের কাজও চলছে। সেতুটি নির্মাণে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের কর্মীরা নিয়োজিত আছেন। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজের ৯৬ দশমিক ১৫ শতাংশ, ডব্লিউডি-২ প্যাকেজের ৯০ শতাংশ ও ডব্লিউডি-৩ প্যাকেজের প্রায় ৬৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম বলেন, সেতুটির ওপরে রেললাইন স্থাপন শেষ হয়েছে ২ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হচ্ছে। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের সেতুটির নির্মাণ কাজ ডিসেম্বরেই শেষ হবে।
রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের রেল যোগাযোগে বর্তমান যে বিড়ম্বনা রয়েছে, সেটা আর থাকবে না।
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু ইউসুফ সূর্য বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন মাত্র ৩৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারে। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু চালু হওয়ার পর ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। রেল থামিয়ে বসে থাকতে হবে না। কারণ এটি ডবল লাইনের হওয়ায় একইসঙ্গে একাধিক ট্রেন চলতে পারবে। এতে এ অঞ্চলে ব্যবসার প্রসার ঘটবে।
সেতুটি বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল অংশের যমুনা নদীর দু’প্রান্তে দুটি প্যাকেজে নির্মিত হচ্ছে।