ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় গত এক মাসে (মে) ৩১ লাখ ডিম উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস। তবে বেসরকারি হিসেবে ডিম উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ৩৫ লাখ। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে মে মাসে প্রায় ২০ লাখ ৫৫ হাজার ডিম উদ্বৃত্ত থাকে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, পুষ্টির মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতি বছর একজন ব্যক্তির ১০২টি ডিমের প্রয়োজন। ফকিরহাটে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষের বসবাস। সে হিসেব অনুযায়ী ফকিরহাটে মাসে ১৪ লাখ ৪৫ হাজার ডিমের চাহিদা রয়েছে। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে গড়ে প্রায় ২০ লাখ ৫৫ হাজার ডিম বিক্রির জন্য উপজেলার বাইরে সরবরাহ করা হয়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, ফকিরহাটে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নিবন্ধিত ডিম উৎপাদনকারী লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে ২০৭টি ও হাঁসের খামার রয়েছে ২৫টি। এসব খামারে প্রায় ৭ লাখ ২৫ হাজার মুরগি ও ১ লাখ ৪০ হাজার হাঁস রয়েছে।
এদিকে, উপজেলার ডিম উৎপাদনকারী বিভিন্ন লেয়ার মুরগির খামারি, ডিম সরবরাহকারী, পোলট্রি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফকিরহাটের ৮ ইউনিয়নে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৩২০টি লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে। এছাড়া গৃহপালিত হাঁস ও দেশি মুরগির উৎপাদিত ডিম প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসাবে যোগ করলে মাসে উৎপাদিত ডিমের পরিমাণ হবে প্রায় ৩৫ লাখ বলে মনে করেন এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এসব ডিমের বর্তমান মাসিক বাজার মূল্য প্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ডিম উৎপাদন হয় বেতাগা ইউনিয়নে।
তবে এত উৎপাদন সত্ত্বেও ডিমের দাম গরিব মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ। খুচরা বাজারে আকার ভেদে ফার্মের ডিমের হালি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়া দেশি হাঁস-মুরগীর ডিম ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার ছোট বাহিরদিয়া গ্রামের এস এম ফিরোজ আহম্মেদ, লখপুর ইউনিয়নের খামারি মো. দিপু মিয়াসহ বেশকিছু খামারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডিম উৎপাদন করলেও তারা ডিমের দাম নির্ধারণ করতে পারেন না। এটা মূলত তেজগাঁওসহ দেশের বড় বড় পাইকাররা নির্ধারণ করে থাকে। বর্তমানে প্রান্তিক খামারীদের কাছ থেকে পাইকাররা ছোট-বড় ডিম গড়ে ৪৫/৪৭ টাকা হালিতে কিনে থাকেন। সে ডিম ভোক্তা পর্যায়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়।
তারা বলছেন, মুরগীর খাবারের চড়া দাম, বাচ্চা মুরগীর দাম বেশি ও বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যাওয়ায় ডিমের উৎপাদন খরচ বড়েছে। ফলে এখন তারা যে দাম পাচ্ছেন তা সন্তোষজনক হলেও হঠাৎ সিন্ডিকেটের কারণে ডিমের দাম সাড়ে ৮ টাকায় নেমে যায়। তখন বাধ্য হয়ে কম দামে ডিম বিক্রি করে লোকসানের মুখে পড়েন প্রান্তিক খামারীরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, মানবদেহের ইমিউনিটি বাড়াতে ডিম খুবই কার্যকর। এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে উপজেলার বিভিন্ন খামারিকে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হয়ে থাকে।’ তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিদপ্তরসহ সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তর অবদান রাখতে পারে বলে তিনি মনে করেন।