ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ভরা মৌসুমেও বরিশালের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পোর্ট রোডসহ বাজারগুলোতে দেখা দিয়েছে ইলিশ মাছের সংকট। ফলে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ছোট-বড় আকারের ইলিশ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে আশাবাদী হয়ে ক্রেতারা ইলিশ কিনতে বাজারে ভিড় করলেও চড়া দামের কারণে ফিরে যাচ্ছেন।
তাদের অভিযোগ, এখনও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়ানো হচ্ছে।
বরিশালের বাজারগুলোতে দ্রুত ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে সংশ্লিষ্টরা, এমনটা প্রত্যাশা বরিশালবাসীর।
বাজারে ইলিশ মাছ কিনতে আসা আবদুল মালেক হাওলাদার বলেন, বর্তমান সময় ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। তবে বর্তমান সরকার বলেছে আমাদের দেশের মাছ না কি বিদেশে যাবে না। তাহলে এখন ১ কেজির মাছ ১৬৫০ টাকা দরে কিনছি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে মাছের দাম হওয়া উচিত ৫০০ টাকা কেজি। আমাদের দাবি- আরও কম দামে ইলিশ মাছ বিক্রি করা হোক।
আরেক ক্রেতা রশিদ হাওলাদার বলেন, আমরা বাসায় বসে ফেসবুক বা ইন্টারনেটে খবরে যে বাজার দর দেখি সরজমিনে বাজারে এসে দেখি ভিন্ন চিত্র। অনলাইনে দামের চেয়ে সব বাজারে পণ্যের দাম দ্বিগুণ। বরিশালের বিশেষ করে পোর্ট রোডসহ অন্যান্য বাজারে লোকাল টাটকা ইলিশ মাছগুলো পাওয়া যায়। তার জন্য এই মাছের দাম একটু বেশি। তবে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাছের দাম বাড়ানোর কারণে নিম্ন শ্রেণীর মানুষের জন্য বর্তমানে ইলিশের দাম সাধ্যের বাইরে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১৫০০ টাকা থেকে ১৫২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একই ভাবে এক কেজি ওজনের ইলিশ কেজিপ্রতি ১৬৫০ টাকা, ১২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৮০০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আবুল কালাম আজাদ নামে এক মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, ইলিশ মাছের আমদানি কম তবে চাহিদা অনেক বেশি। তার জন্য মাছের দাম একটু বেশি। শুনেছি নদীতেই মাছের সংখ্যা কম তাই বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। মাছের দাম একটু বেশি হওয়ায় আমাদের বেচা-বিক্রিও অনেক কমেছে। ক্রেতারা আসে তবে তাদের সাধ্যের মধ্যে না হওয়ায় বেশির ভাগ ক্রেতারাই ফিরে যান।
অন্যদিকে পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, নদী ও সাগরে পর্যাপ্ত ইলিশ নেই। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অর্ধেক মাছও আসছে না আড়তে। ফলে তূলনামূলক ভাবে কমেনি দাম।
বরিশাল জেলা মৎস পাইকারি অবতরণ কেন্দ্র মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ মো. ইয়ার উদ্দিন শিকদার বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে নদীতে ইলিশের সংখ্যা কম হওয়ায় আমদানিও কম। তাই বাজারে অন্য সব দিনের তুলনায় দাম একটু বেশি। নিম্নচাপ থাকায় এতদিন জেলেরা বেকার ছিল। গত কয়েকদিন হলো তারা সাগরে গিয়েছে। জেলেরা ফিরে এলেই বাজারে ইলিশের দাম অনেকটাই কমে আসবে। তবে সাগরে যেতে আগের চেয়ে জেলেদের তেলের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ইলিশের দামও একটি বেশি।
বরিশালের এক আড়ৎদার ও বরফ ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, জেলেরা বেশির ভাগই মাছ পায়, তবে কুয়াকাটা থেকে বরিশালে আসতে তেলের অনেক খরচ হয়। তবে এখানে এসে তুলনামূলক ভাবে দাম না পাওয়ায় বিভিন্ন হতাশার কারণে বেশির ভাগ জেলেরাই আসা বন্ধ করে দেয়। সে জন্যই মাছের দাম বেশি আর বরফ বেচা-বিক্রি তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কম।
বরিশাল জেলা মৎস কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, বাজারে সাগরের মাছ এলেই ইলিশের দাম কমে যাবে। তবে আমাদের বাজার দরের ওপরে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যদি বেশি দামে ইলিশ মাছ বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।