বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনা দ্রুত সংশোধনের দাবি

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বাংলাদেশের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা আরও একবার রাস্তায় নেমে সমন্বিত বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি) দ্রুত সংশোধনের দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি তারা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর অর্থায়ন বন্ধের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করারও আহ্বান জানান।

শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস আয়োজিত জলবায়ু ধর্মঘটে তাদের এ জোরাল বক্তব্য আসে। কর্মসূচিতে তারা বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের কাছে জলবায়ু অর্থায়নের পরিমাণ বৃদ্ধিরও দাবি জানান।

তরুণরা আইইপিএমপির বর্তমান অবস্থার কঠোর সমালোচনা করে বলে, এই মহাপরিকল্পনাটি অপ্রমাণিত ও ব্যয়বহুল প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব দিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে। সমন্বিত এই পরিকল্পনা এমনকি জাতীয় জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রাগুলোর সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাদের স্লোগান ও প্ল্যাকার্ডগুলোতে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নতুন জ্বালানি নীতির দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাই বার বার অনুরণিত হয়েছে।

কর্মসূচিতে ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, ‘আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। সময় এসেছে আমাদের জ্বালানি নীতিগুলো ঢেলে সাজানোর, নবায়নযোগ্য শক্তি অভিমুখী জ্বালানি রূপান্তর ও টেকসই অর্থনীতিকে আলিঙ্গন করার। বাংলাদেশের তরুণরা পরিবর্তনের জন্য আর অপেক্ষা করবে না- দেরি হওয়ার আগে এখনই এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের নেতাদের অবশ্যই সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে একটি টেকসই ও জলবায়ু স্থিতিস্থাপক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যায়।’

তরুণ জলবায়ু কর্মী আরুবা ফারুক বলেন, ‘কেবল নীতি বদলানোর জন্য নয় বরং আমাদের ভবিষ্যতের সুরক্ষার জন্যই জীবনযাত্রার একটি সুস্পষ্ট পরিবর্তন চাই আমরা। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর এবং এই রূপান্তরের জন্য জলবায়ু অর্থায়ন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়ানো জরুরি। এ জন্য বিশ্ব সম্প্রদায় ও আমাদের রাষ্ট্র নেতাদের দ্রুত পদক্ষেপ দেখতে চাই।’

তরুণদের এসব দাবিকে সমর্থন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, ‘বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো কার্বন নিঃসরণ অর্জন করতে চায়। বর্তমান আইইপিএমপি কার্বন লক-ইনকে শক্তিশালী করবে এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ন্যায্য রূপান্তরকে বিলম্বিত করবে। টেকসই ভবিষ্যত অর্জনে জাতীয় জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রাগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে দ্রুত আইইপিএমপির সংশোধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটের অংশ হিসেবে আয়োজিত শুক্রবারের এ কর্মসূচি থেকে উন্নত দেশগুলোর প্রতি জলবায়ু অর্থায়নে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ ও গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর ওপর ঋণভিত্তিক অর্থায়নের বোঝা চাপিয়ে না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। ধনী দেশগুলোকে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ এবং প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করতেও বলেছে তারা।

কার্যকর জলবায়ু অর্থায়নের দাবিতে সংহতি জানিয়ে চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান বলেন, ‘কেবল তাৎক্ষণিক ঝুঁকি মোকাবেলা নয়, জলবায়ু অর্থায়নের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিস্থাপকতা ও প্রকৃতি সংরক্ষণের পথও সুগম করা উচিত। বাংলাদেশে ব্যয় সাশ্রয়ী স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিতে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সৌর, বায়ু এবং অন্যান্য নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারে প্রবেশগম্যতা ও স্থায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সরাসরি, অনুদানভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়নের উপর জোর দিতে হবে।’

সমাবেশ শেষে তরুণরা তাদের নেতাদের উদ্দেশ্যে দৃপ্তকণ্ঠে বলছে- আমরা নজর রাখছি, যতক্ষণ পর্যন্ত না দেশের জ্বালানি নীতিতে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা, টেকসই ভবিষ্যতের জরুরি প্রয়োজনীয়তা প্রতিভাত হচ্ছে ততক্ষণ আমরা থামছি না।