বাগেরহাটে পেঁয়াজের ঝাঁঝ বেড়েছে

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বাগেরহাটে দুই-তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।

সোমবার বিকেলে বাগেরহাট শহরের প্রধান বাজারে এ চিত্র দেখা যায়।

পেঁয়াজের দাম এত বেশি বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তাদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তদারদের সিন্ডিকেটের কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে আড়তদাররা বলছেন, মোকাম থেকে যে দামে কেনা হয়েছে, তার ওপর সামান্য লাভ করে বিক্রি করা হয়। এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই।

সোমবার বিকেলে বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজির দাম গেল সপ্তাহের থেকে কিছুটা কমেছে। শীতকালীন সবজির পরিমাণও বেড়েছে বাজারে। প্রতি কেজি সবজির দাম ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। খুচরায় প্রতি কেজি পটল ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়, পেঁপে ৪০ টাকা, বেগুন কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, শিম ১১০-১২০ টাকা, আলু ৬০, মুলা ৫৫-৬০, ঢেঁড়স ৩৫-৪০, জলপাই ৫০-৬০ টাকা, টমেটো ২০০-২২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০-৬০ টাকা, ফুলকপি ১১০ টাকা, বাঁধাকপি ৭০ টাকা, কচু ৫০-৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫৫-৬০ টাকা, বরবটি ৮০-১০০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এই দামও নাগালের বাইরে বলে দাবি বাজার করতে আসা সাধারণ মানুষের।

বাজার করতে আসা মো. তাহের রনি বলেন, ১৪০ টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনলাম। তিন দিন আগেও এই পেঁয়াজ ছিল ১১০ টাকা। রসুনেরও দাম বেড়েছে, ১৮০ টাকার রসুন কিনলাম ২৪০ টাকা। এভাবে দাম বাড়লে আমরা কীভাবে বাঁচব।

সানি জুবায়ের নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, মাস গেলে যে বেতন পাই, সেটা দিয়ে জীবন চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাচ্চার স্কুল খরচ, নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার, টিউশনি খরচ, মা-বাবার চিকিৎসা ব্যয়, আমার এবং বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল সব খরচ মেটাতে প্রতি মাসে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা দেনায় পড়ছি। দ্রব্যমূল্য যদি দিন দিন বাড়তেই থাকে, তাহলে জীবন চালানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

রহিমা বেগম নামে এক নারী বলেন, চাল, মাছ, সবজি, মশলা এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। তেলের দামও বেড়েছে অনেক। বাজারে কোনো কিছুতেই সুবিধা নেই। আলু কিনতে হয় ৬০ টাকায়, অথচ এক বছর আগেও এই সময়ে আমরা আলু কিনেছি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। বছর দুয়েক আগেও সারা বছর আলুর দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে থাকত।

না প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন খুচরা সবজি বিক্রেতা বলেন, আসলে আমরা আড়তদারদের কাছ থেকে যেভাবে কিনি সেভাবে বিক্রি করি। দু’জন আড়তদার এই বাজারে পেঁয়াজ ও আলু আমদানি করেন। তারা সিন্ডিকেট করে সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দেন। পরিবহন ও কোল্ড স্টোরেজ ব্যয় দিয়ে এবার ২২ টাকা কেজি দরে আলু কিনেছেন বাগেরহাটের মজুতদার ব্যবসায়ীরা। সেই আলু পাইকারি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরো বিক্রেতাদের কাছে। এসব মজুতদারদের সিন্ডিকেট ভাঙা প্রয়োজন। তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে।

কাঁচামাল ব্যবসায়ী হালিম খান বলেন, এই মাসের গত সপ্তাহেও কাঁচা সবজির দাম বেশি ছিল। শীতকালীন সবজি বাজারে আসায় দাম কমেছে অনেক।

পেঁয়াজ আড়তদার বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সত্তার হাওলাদার বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ কম থাকার কারণে আগের থেকে দাম বেড়েছে। আমদানি বাড়লে দাম কমবে। এছাড়া দেশি পেঁয়াজের মোকামেও দাম বেড়েছে, ৪ হাজার টাকা মনের পেঁয়াজ এখন ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যার কারণে দাম বেড়েছে। আসলে এখানে কোনো সিন্ডিকেট নাই।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, বাজার দর নিয়ন্ত্রণ ও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে বাজার মনিটরিং টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আমরা নিয়মিত বাজারে অভিযান চালাচ্ছি। কোথাও অসংগতি ও অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।