নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজধানীতে ক্যাবের মানববন্ধন

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: আলু, পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সোমবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে ৮ দফা দাবি তুলে ধরে ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করা জাতীয় সংগঠনটি।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ, ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহা. শওকত আলী খান এবং ক্যাব সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ আরও অনেকে।

নিত্যপণ্যের অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘সরকার অনেক বিষয় সংস্কারের কথা বলছে, কিন্তু বাজার ব্যবস্থা সংস্কারে হাত দিচ্ছে না। বাজার ব্যবস্থা সংস্কার ছাড়া প্রচলিত ব্যবস্থা সচল রেখে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘সার, বীজ, কীটনাশক, বিদ্যুৎ পানির খরচ কমিয়ে দেশে উৎপাদিত ফসলের ব্যয় কমাতে হবে। স্থানীয় ভাবে উৎপাদক সমবায় ও জেলা সদরে উৎপাদক সমবায় গড়ে তুলতে হবে। এর মধ্য দিয়ে মধ্যস্বত্বভোগী ও চাঁদাবাজি প্রতিহত করে পণ্য সরবরাহ করতে হবে। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। সারাদেশে সর্বজনীন রেশন ব্যবস্থা ও ন্যায্য মূল্যের দোকান চালু করতে হবে। কঠোর বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা করতে হবে। এসব কাজে জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বত্র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে নিয়মিত বাজারের খবর দেশবাসীকে অবহিত করতে হবে।’

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ক্যাবের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত মুনাফা ভোগীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় বাজারের অস্থিরতা কমছে না। কথিত সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যস্থা নেয়া না হলে বাজারের শৃঙ্খলা ফিরবে না।’

তিনি বলেন, ‘ডিমের বাজার এখনো ঊর্ধ্বমুখী। এখন শীতের মৌসুমে ডিমের সরবরাহ বেশি। তারপরও ডিম-মুরগীর দাম কমছে না। তাহলে ডিমের উপর থেকে আমদানি কর তুলে নিয়ে দেশের লাভটা কি হলো?’

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শুধু সিন্ডিকেটের দোহাই দিয়ে দায় সারবেন না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে সৈরাচার সরকার (আওয়ামী লীগ) যদি পতন হতে পারে, তাহলে সিন্ডিকেট কেন ভাঙ্গবে না? এ বিষয়ে জোড়ালো পদক্ষেপ নিন, ভোক্তাকে স্বস্তি দিন।’

সভাপতির বক্তব্যে ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, ‘ভরা মৌসুমেও আলু-পেঁয়াজের দাম চড়া। খোলা ভোজ্যতেল বিক্রি নিষিদ্ধ থাকলেও বাজারে তা পাওয়া যাচ্ছে। ডিমের বাজার বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি, তারা ইচ্ছে মতো দাম বাড়াচ্ছে। এখানে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ বিষয়ে আইন আছে, কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই। যে কারণে বাজার অস্থির।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সংস্কার কমিশন বা সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ অনেক কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠন করা হয়নি। অথচ এই কমিশন সবার আগে গঠন করা দরকার ছিল। আমরা উদাত্ত আহ্বান জানাবো- নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে কমিশন গঠন করুন এবং সেখানে আমাদের ডাকুন। আমরা সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করবো। ভোক্তার স্বস্তি ফেরাতে ক্যাব সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।’

পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে তৃণমূল পর্যায়ে ব্যবস্থা নিতে হবে উল্লেখ করে হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, ‘কৃষক পর্যায়ে প্রয়োজন হলে ভর্তুকি দিয়ে তাদের কম মূল্যে পণ্য উৎপাদনে সহযোগিতা করুন। তারা কম দামে পণ্য উৎপাদন করতে পারলে, কম দামে কিনতে পারবে ভোক্তা। পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্য ভোক্তার হাতে সহজে পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।’

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, উৎপাদিত নতুন আলু কৃষক কম দামে বিক্রি করলেও হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম এখনো বেশি। এ কারণে খুচরা বাজারেও পণ্যটির দাম কমেনি। হিমাগার পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর তদারকি না থাকায় আলুর দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া শীতের সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও পড়তির দিকে। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে সেই সুফল পাচ্ছে না ভোক্তা সাধারণ।

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ক্যাবের পক্ষ থেকে ৮ দফা দাবি জানানো হয়। পরে সংশ্লিষ্ট দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি ঢাকা জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে জমা দেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।

দাবিসমূহ হলো-

১. অসাধু, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

২. নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

৩. বাজার অভিযান/মনিটরিং বৃদ্ধি করতে হবে।

৪. টিসিবির ট্রাক সেল বাড়াতে হবে।

৫. খোলা বাজারে ভোজ্যতেল বিক্রেতাদের কঠোর ভাবে আইনের আওতায় আনতে হবে।

৬. ভোক্তা স্বার্থ দেখার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা বিভাগ বা কনজুমারস মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।

৭. সরকার ১ কোটি পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে নিত্যপণ্য দিচ্ছে এর সংখ্যা দেড় কোটি করতে হবে।

৮. আইনে নিষিদ্ধ থাকা বাজারে খোলা ভোজ্যতেল (ড্রামে) বিক্রেতাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

এসএম