ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে কমতে শুরু করেছে তেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, রসুনের দাম। রোববার দুপুরে খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের বাজারে দেখা যায়, পণ্যের বেচাকেনা কম। ভোগ্যপণ্য আনা-নেওয়ায় ব্যবহৃত ট্রাকের সংখ্যাও অন্য সময়ের তুলনায় কম।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৫ দিনের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশ কয়েকটি ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী শাহজাহান বাহাদুর বলেন, ‘বর্তমানে তেল-চিনির দাম কিছুটা কমেছে। প্রত্যেক আইটেমে মণপ্রতি কমেছে ১০০ টাকার মতো। বাজারে এখনো এস আলম, সিটি, মেঘনা গ্রুপের চিনি পাওয়া যাচ্ছে। খাতুনগঞ্জে রেডি (খাতুনগঞ্জের গুদাম থেকে সরবরাহযোগ্য) চিনি রোববার বিক্রি হয়েছে ৪২৬০-৪২৭০ টাকায়, ১৫ দিন আগেও রেডি চিনির মূল্য ছিল ১০০ টাকা বেশি। একই ভাবে চট্টগ্রামে এস আলম, সিটি, আবুল খায়ের, বনস্পতি পাম অয়েল বেচাকেনা হচ্ছে। যারা ঢাকার আশপাশে নিয়ে যায় তারা মেঘনা পাম অয়েল কিনছে। রোববার মণপ্রতি ৬০১৫- ৬০২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে পাম অয়েল।‘
তিনি বলেন, ‘সয়াবিন তেলের দামও গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মণপ্রতি একশ টাকার মতো কমেছে। রোববার ৬৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে সয়াবিন। এক মাস আগেও সয়াবিন তেল ৬৫০০ টাকার কিছুটা বেশি ছিল। বাজারে এস আলম, টিকে, মেঘনা এবং সিটি গ্রুপের সয়াবিন পাওয়া যাচ্ছে।’
পেঁয়াজ, রসুন ও আদার বাজারে কয়েক স্তরের পাইকারি দোকান রয়েছে। আমদানিকারক, আড়তদার ছাড়াও বস্তা খুলে ৫, ১০ কেজি হিসেবেও পেঁয়াজ-রসুন বিক্রি হয় কিছু কিছু পাইকারি দোকানে। মূলত পাইকারি বাজার হলেও ভাসমান খুচরা বিক্রেতারা খুচরাতে পেঁয়াজ-রসুন কেনেন খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ মিয়ার বাজারে। ওই বাজারের দোকানি তৈয়ব বলেন, ‘বাজারে এখন ভারতীয় পেঁয়াজ রয়েছে। দামও কমতে শুরু করেছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ২০-২৫ টাকা কমেছে পেঁয়াজ-রসুনের দাম। সামনে দেশি পেঁয়াজ-রসুন বেশি পরিমাণে এলে আরও কমবে।’
বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে ৬০-৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ১৫ দিন আগেও এসব পেঁয়াজ ৮৮-৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। বাজারে চায়না থেকে আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজিতে। দুই সপ্তাহ আগে এসব রসুন ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল। পাশাপাশি বাজারে বর্তমানে কেরালা ও বার্মিজ আদা কেনাবেচা হচ্ছে। কেরালা আদা মানভেদে ৯০-১০০ টাকা ও বার্মিজ আদা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। এসব আদা ১৫ দিন আগে কেজিতে আরও ১০ টাকা বেশি ছিল।
খাতুনগঞ্জের লামার বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, ‘আমাদের দেশে পেঁয়াজ-রসুনের মৌসুম শুরু হয়েছে। দেশি পেঁয়াজ কিছুটা বাজারে আসা শুরু করেছে। সামনে পুরোদমে দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসবে। তখন হয়তো আরও কমবে। রমজানে পেঁয়াজ-রসুনের দাম অনেকটা কম থাকবে।’
বাজারে কমছে ডাল জাতীয় পণ্যের দামও। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের তালিকায় থাকা মসুর, মটর ও চনার ডালের দাম কমেছে। রোববার অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি হওয়া মোটা দানার মসুর ডাল প্রতিকেজি ৯৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এসব ডাল। একই ভাবে রোববার খাতুনগঞ্জে মটরের ডাল বিক্রি হয়েছে ৫৬ টাকা কেজিতে। ১৫ দিন আগেও এসব ডালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৬২-৬৩ টাকা। এই সময়ে চনার ডালের দামও কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। রোববার চনার ডাল বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজিতে।
খাতুনগঞ্জে ডাল ও মসলার পাইকারি ব্যবসায়ী মেসার্স তৈয়বিয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সোলায়মান বাদশা বলেন, ‘এখন বাজারে দাম কিছুটা কমেছে। কারণ বাজারে খরিদদার কম, বেচাকেনাও কম।’
তিনি বলেন, ‘রমজানে পণ্যের ঘাটতি হতে পারে। বিশেষ করে খাতুনগঞ্জে বড় দুই আমদানিকারক এখন বেকায়দায়। এস আলম গ্রুপ এবং বিএসএম গ্রুপ ভোগ্যপণ্যের বড় আমদানিকারক। তারা এবার এলসি খুলতে পারছে না। ঢাকার যেসব গ্রুপ এলসি খুলছে তারা ঢাকা ও উত্তরবঙ্গে নিয়ে যাবে। চট্টগ্রামে রমজানভিত্তিক ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ কম থাকবে।’
তবে রমজানে বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক এবং দামও অপেক্ষাকৃত কম থাকবে বলে মত দিয়েছেন চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাজারে এখন পণ্যের দাম কমছে। গত ১৫ দিনে লাগাতার কমেছে। বিশেষ করে তেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজের দাম। এতে রমজানে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক থাকতে পারে। তবে ডলারের দামের ওপর পণ্যের দাম নির্ভর করবে। এলসি খুললেও ডলারের দাম বেড়ে গেলে পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। এতে পণ্যের দামে প্রভাব পড়বে।’ জাগো নিউজ।