আশানুরুপ দাম পাচ্ছেন না চাঁপাইনবাবগঞ্জের পেঁয়াজ চাষিরা

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে উঠতে শুরু করেছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। এদিকে, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে আশানুরুপ দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। দাম কম হওয়ায় হতাশ চাষিরা।

তারা বলছেন, বেশি দামে আগাম জাতের কন্দ পেঁয়াজ কিনে লাগানোর কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। তাছাড়া ভারত থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির কারণে ন্যায্য বাজারমূল্য পাচ্ছেন না তারা।

কৃষকরা বলছেন, বর্তমানে বাজারে যে দাম পাচ্ছেন তাতে উৎপাদন খরচের অর্ধেকও উঠছে না। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। তাই কৃষকদের দাবি, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দেশে যেন পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকে।

শনিবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পুঁঠিমারী বিলে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলছেন। মাঠেই তারা এই পেঁয়াজ বাছাই করে রোদে শুকিয়ে নিচ্ছেন।

পেঁয়াজ চাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, গত বছর ১০ কাঠায় এবং এবার ২০ কাঠা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। পেঁয়াজের বীজ কিনেছিলাম সাড়ে ৬ হাজার টাকায় আর পেঁয়াজ বিক্রি করছি ১৩শ থেকে ১৬শ টাকা মণে। গত বছর লাভ হওয়ায় এবং পেঁয়াজের দাম বাড়তি দেখে বেশি পেঁয়াজ লাগিয়ে এখন লোকসানে পড়লাম। তাই সরকার যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে আমরা বাঁচতে পারবো তা না হলে আমরা শেষ। সার ও বীজের দাম বেশি তাহলে আমরা কীভাবে বাঁচবো।

পিঠালীতলা গ্রামের আরেক পেঁয়াজ চাষি আব্দুল লতিফ বলেন, আমি প্রায় ৪ বিঘায় পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। প্রতি বিঘায় আমাদের খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। বৃষ্টি ও দেশের পরিস্থিতির কারণে আমরা এখন বিঘা প্রতি পেঁয়াজে পাচ্ছি ৬০ হাজার টাকা মতো। সে মোতাবেক আমাদের বিঘা প্রতি ৬০ হাজার টাকা লস হচ্ছে। এই লস হওয়ার একটাই কারণ আমরা দেশি পেঁয়াজ কিনছি না। তাই সরকারের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ভারত, চীন ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করা হোক। তাহলে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বাড়বে এবং কৃষক দাম পাবে।

সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের ওয়ালিদ হাসান বলেন, পেঁয়াজ লাগানোর আগে পেঁয়াজের বীজের দাম ছিল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। আর এখন সেই পেঁয়াজের দাম হচ্ছে ১৪শ থেকে ১৫শ টাকা মণ। আর কৃষক যদি এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে তাহলে বিঘা প্রতি ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লস হবে। কৃষকের লোকসান ঠেকাতে হলে পেঁয়াজের দাম যেন ৬০ থেকে ৭০ টাকা মতো থাকে। কারণ ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানির কারণে পেঁয়াজের দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় নেমে আসায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধেরও দাবি জানান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মুড়িকাটা পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে চাষ হয়েছে ৪ হাজার ৩৫ সেক্টর জমিতে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫১০ হেক্টর, শিবগঞ্জ উপজেলায় ৩০০০ হেক্টর, নাচোল উপজেলায় ১৪০ হেক্টর, গোমস্তাপুর উপজেলায় ১৭০ হেক্টর ও ভোলাহাট উপজেলায় ২৪০ হেক্টর জমিতে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, এই বছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৮০০ হেক্টরে এবং গত বছর এটি ছিল ২ হাজার ৯৯৫ হেক্টর। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৪ হাজার ৩৫ হেক্টরে পেঁয়াজ আবাদ হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩৫ হেক্টর বেশি পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এই বছর আমাদের পেঁয়াজের ফলনও ভালো হয়েছে।

তিনি বলেন, কন্দ থেকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ সংগ্রহ করা হয়। তাই এই পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় না। আর আমরা আগেও দেখেছি যে ফসলের দাম বেশি পায় কৃষক সেই ফসল উৎপাদনে ঝুঁকে যায়। ফলে এর ফসলের আবাদও বাড়ে এবং উৎপাদন বাড়ে। যেহেতু এটি একটি পঁচনশীল দ্রব্য এবং এই পেঁয়াজটি সংরক্ষণ করা যায় না যার ফলে পেঁয়াজগুলো একসাথে বাজারে আসার কারণে পেঁয়াজের বাজার দর হঠাৎ করে কমে গেছে। এতে এটি ভোক্তাদের জন্য ভালো হলেও যারা এটি উৎপাদন করেছে তাদের জন্য এটি লাভজনক হয়নি এবং তারা যে দামটি আশা করেছিলেন সেই দামটি পাচ্ছেন না।

সোনামসজিদ স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক সমীর চন্দ্র ঘোষ জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মোট ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৭২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।