গেল ১২ বছরে বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ হয়েছে পৌনে ২ লাখ কোটি টাকার উপরে। কিন্তু কমানো যায়নি ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ। ফলে কম দামে বিক্রি করার অজুহাতে ভর্তুকি বাবদ ১০ বছরে সরকার থেকে নিতে হয়েছে ৫৯ হাজার কোটি টাকা। যদিও এর সুফল কমই পেয়েছেন ভোক্তারা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন শুরু থেকেই পরিকল্পনা আর বাস্তবায়নে দক্ষতার ছাপ রাখা গেলে এড়ানো যেতো এই সংকট।
২০০৯ থেকে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে একের পর এক প্রকল্প নেওয়া হয় দেশজুড়ে। বর্তমানে সেই সংখ্যা দেড়শো’র বেশি আর উৎপাদন ক্ষমতা ২১ হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসেবে গেল ১২ বছরে এই খাতে মোট বিনিয়োগ হয়েছে ২ হাজার ১৮০ কোটি ডলার। যার মধ্যে কেবল উৎপাদনের পেছনেই ১৭২৫ কোটি বা ৮০ শতাংশ। কিন্তু এই বিনিয়োগ কতোটা স্বস্তি দিলো ভোক্তাকে?
হিসেব বলছে ২০১০-১১ তে পিডিবি প্রতি ইউনিট বিক্রি করেছিল ২ টাকা ৩৭ পয়সা, অথচ এই সময়ে দশবার দাম বাড়িয়ে সবশেষ অর্থবছরে বিক্রি করেছে ৫ টাকা ১৭ পয়সা। অর্থাৎ বাড়ানো হয়েছে প্রায় সোয়া দুই গুণ। বিপরীতে ১০ বছর আগে উৎপাদন ব্যয় ছিল চার টাকার নিচে যা একই সময়ে পৌঁছে গেছে ছয় টাকার কাছাকাছি। অথচ অর্থনীতির সরল ব্যাখ্যা অনুযায়ী বড় বিনিয়োগের কারণে কমে আসার কথা ছিল উৎপাদন ব্যয়।
বিদ্যুৎ উৎপাদন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন এ বিষয়ে বলেন, “গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য প্রতি ইউনিট পাওয়ারের মূল্য আসে ৩ টাকার মত, সেখানে তেলভিত্তিক পাওয়ার স্টেশনে এর মূল্য দাঁড়ায় ১৪ টাকার বেশী। তেলভিত্তিক পাওয়ার স্টেশন যত বেশী সিস্টেমে আসবে সরকারের ভর্তুকি ততই বাড়বে। এটা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।”
বিদ্যুৎ খাতের অব্যবস্থাপনায় কিংবা অনিয়মের অভিযোগ বহু পুরনো, যার খেসারত বরাবরই দিতে হচ্ছে ভোক্তাকে। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী বিক্রির চেয়ে উৎপাদন ব্যায় বেশী হওয়ায় ক্ষতি পোষাতে গত ১০ বছরে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি নিয়েছে সংস্থাটি। অথচ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন অদক্ষ, প্রয়োজনীয় এবং চড়া দামের কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ না কিনলে গুনতে হতো না এই টাকা।
দেশের বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল আলম মনে করেন বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে বিতরণ পর্যন্ত সব জায়গাতে যদি বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যয় গুলোর যৌক্তিক ব্যয় নির্ধারণ করা যেতো তাহলে আর ভোক্তা পর্যায়ে এই অবস্থান তৈরি হতো না।