খেয়াল-খুশিমতো সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম রাখছেন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের ব্যাবসায়ীরা।মাত্র দুই কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি বাজারে বিভিন্ন ধরনের দামে পণ্য বিক্রি চলছে। বাজারভেদে পাইকারি ও খুচরায় ব্যবধান দাঁড়ায় দুই থেকে তিনগুণ। সে তুলনায় প্রান্তিক পর্যায়ে দাম অনেক কম।
পণ্যের দাম বেশি হওয়ার পেছনে সবাই দুষছেন পরিবহন ভাড়াকে। পাশাপাশি পাইকারি বাজারের শ্রমিক খরচ, বিভিন্ন চাঁদা, হাট কমিটির খাজনা, বোর্ড ভাড়া (পণ্য সংগ্রহের পর যেখানে স্তূপ করে রাখা হয়) মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলেও জানান তারা।
মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সবজি নিয়ে আসেন উজ্জ্বল হোসেন এবং আকমল হোসেন নামে দুই বিক্রেতা। গ্রাম থেকে ‘ফড়িয়া’ পদ্ধতিতে পণ্য সংগ্রহ করে এ বাজারে বিক্রি করেন তারা। অন্যান্য দিনের মতো সোমবারও তারা স্থানীয় বাজার থেকে এনেছেন বেগুন, পটল, টমেটো, বরবটি, ঢেঁড়স, লাউসহ কয়েক ধরনের সবজি। রয়েছে পুঁইশাক, লালশাক আর সাদা ডাটা শাকও।
বাজারে প্রতি কেজি পাইকারি ধনেপাতা ৪০ টাকা, পুদিনাপাতা ৪৫, গাজর ২৬ থেকে ৩০, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল ২০, ঝিঙ্গা ২২, কাঁকরোল ৫০, কচুরলতি ৩০ থেকে ৪০, দুই কেজি ওজনের মিষ্টি কুমড়া প্রতি পিস ১৫ থেকে ২০ ও বড় আকৃতির মিষ্টি কুমড়া ১১ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। এছাড়া পালংশাক, লালশাক, পাটশাক ও ছোট সাদা শাক প্রতি আঁটি ৪ থেকে ৫ টাকা, পুঁইশাক প্রতি আঁটি ১৩ থেকে ১৪, বাঁধাকপি ১৮ থেকে ২০ ও ফুলকপি ২০ থেকে ২২ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারে পাইকারি দরে প্রতি কেজি ছোট গোল বেগুন ২০ টাকা, তাল বেগুন (কালো বড় বেগুন) ৩৬, পটল ১৪, টমেটো (দেশি) ৩৫, বরবটি ৩০, দেশি শসা ৩০, ঢেঁড়স ২২ এবং করলা বিক্রি করেছেন ২৪ থেকে ২৬ টাকায়। প্রতিটি লাউ ও জালি বিক্রি করেছেন ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কাছাকাছি শান্তিনগর, হাতিরপুল ও কাঁঠালবাগান বাজারে দামের ব্যাপক ভিন্নতা। এই তিনটি বাজারের বিক্রেতারা কারওয়ান বাজার থেকেই পাইকারি পণ্য সংগ্রহ করে খুচরা বিক্রি করেন।শাক-সবজির দামের ব্যবধান পাইকারি থেকে খুচরায় দুই থেকে তিনগুণের বেশি। শান্তিনগর এবং হাতিরপুলের চেয়ে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে বেচাকেনা হয় কাঁঠালবাগান বাজারে। তা পাইকারি বাজারের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
মেহেরপুরের ফড়িয়া ব্যবসায়ী উজ্জ্বল হোসেন বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে পণ্যের দাম অনেক কম। কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এলেই দাম অনেক বেড়ে যায়। মূলত পাইকারের কাছ থেকে বের হলেই দাম বেড়ে যায় বহুগুণে। অথচ আমাদের স্থানীয় চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন না।
সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, নিয়মিত বাজার মনিটরিং না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দেন। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে দাম কমে আসবে।
শান্তিনগর বাজারের ব্যবসায়ী মন্টু বলেন, ‘আমাদের লাভ বেশি হয় না, বিভিন্ন খরচে সব চলে যায়। দোকান থেকেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উৎসবে টাকা দেয়া লাগে। তাছাড়া কাঁচাবাজারের দাম আজ যেটা কম কাল সেটা বেশি হতে পারে।’
অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা জানান, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বাজারে তদারকিমূলক অভিযান অব্যাহত থাকবে।